আব্দুল জলিল : সাতক্ষীরায় করোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সামাজিক দূরত্ব না মেনে অহেতুক ঘোরাঘুরি করায় ৫৪জনকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে টহল জোরদার করেছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এছাড়া জনসমাগম কমাতে সন্ধ্যা ৬টার পরে ওষুধের দোকান ব্যতীত সব ধরনের দোকান বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।
এদিকে, কর্মহীন হয়ে পড়া খেটে খাওয়া দুস্থ মানুষের জন্য ইতোমধ্যে ৪২৫ মেট্রিক টন চাল এবং ১৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাদ্য সামগ্রী। অব্যাহত রয়েছে জীবাণু নাশক স্প্রে।
জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং ব্যাটালিয়ন আনসার এর সহযোগিতায় ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাত-দিনের পার্থক্য ভুলে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতে দিনরাত কাজ করছে। একই সাথে সাতটি উপজেলায় সেনাবাহিনীর ৭টি টিমসহ জেলা সদরে পুলিশ এবং আনসারের সমন্বয়ে ৪টি টিম শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। চলছে মাইকিং।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রতিটি উপজেলায় ইউনিয়ন ভিত্তিক দুস্থ ও সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বাহিরে থাকা গরীব মানুষের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এজন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রাপ্ত বরাদ্দ থেকে ইতোমধ্যে জেলার উপজেলা ও পৌরসভার অনুকূলে ৪২৫ মেট্রিক টন চাল এবং ১৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যারা ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকাভুক্ত হতে সংকোচবোধ করছে কিন্তু খাদ্য সংকট আছেন তাদের নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নাম্বারসহ এসএমএস এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক নিজে তাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। রাতে গোপনে তাদের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে ত্রাণসামগী বিতরণ করা হচ্ছে।
এদিকে, ইতোমধ্যে উপজেলায় বিতরণের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকার মাস্ক ক্রয় করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৮ হাজার মাস্ক মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সদের চলাচলের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি সরবরাহ করা হয়েছে। একই সাথে তাদের সুরক্ষায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮৫০ টি পিপিই মজুদ রয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ১০০০ পিপিই বিতরণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসাদুজ্জামান শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন। শ্যামনগরে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখায় ৩জনকে দেড় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কালিগঞ্জে একই কারণে ২০জনকে ২৯ হাজার ৫৮০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আশাশুনিতে ১০জনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তালায় সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখায় ১০জনকে ৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কলারোয়া উপজেলায় ৯টি জনকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরা শহরে দুইজনকে আটশ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া তালার তেতুলিইয়ায় দ্রব্যের দাম বেশি রাখায় একজনকে ৫০০ টাকা, দেবহাটার বন্ধু ব্রিকসকে ৫ হাজার ৩শ টাকা জরিমানা করেন।
এদিকে, জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জেলার সংসদ সদস্যবর্গের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে আলোচনা এবং পরামর্শ গ্রহণ করে করোনা মোকাবেলায় সর্বাত্মক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। একই সাথে তিনি জেলা সদরের সিনিয়র সিটিজেনদের সাথে নিয়মিত ফোনে খোঁজ নিচ্ছেন এবং তাদেরকে ঘরের বাইরে না যেতে বিশেষ অনুরোধ করছেন।
জেলা প্রশাসক সরকারি ত্রাণের তালিকা এবং বিতরণে অনিয়ম স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারী দিয়েছেন। এছাড়া কতিপয় ব্যক্তি ত্রাণ দেয়ার কথা বলে বিকাশ নম্বরে অন্যের কাছে সাহায্য চাইছেন মর্মে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ও দোকান খুলে দেয়ার কথা বলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি দোকানদারদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে, যাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply