বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
শনিবার ‘করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং করণীয়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
ব্রিফিংয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এরকম একটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সব সরকারেরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। কারণ এর জন্য যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সেটার ওপর একটি বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং সঙ্গে স্বাস্থ্য তো রয়েছেই। সবার আগে স্বাস্থ্য, তারপর অর্থনীতি।
তিনি বলেন, আমাদের সম্পদ, রাজস্ব ও মুদ্রানীতির ওপর স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি নানা প্রতিঘাত-অভিঘাত থাকবে। এর জন্য আমাদের যা দরকার তা হচ্ছে- সম্পদের পুনর্বণ্টন করা, রাজস্ব বাড়ানো এবং মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন আনা পদক্ষেপ নিতে হবে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, যেহেতু আমদানি, রপ্তানি, রেমিটেন্স, বৈদেশিক বিনিয়োগ, বৈদেশিক সাহায্য ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সুতরাং একটা বৈশ্বিক পর্যায় থেকে অর্থনীতির ওপর একটা অভিঘাত আসবে। আরেকটা হবে দেশের ভেতরে। বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে একটা প্রতিঘাত আসবে। এ ছাড়া বিশ্ববাণিজ্যে যে শ্লথগতি, তার কারণেও একটা প্রতিঘাত আসবে, যার ফলে দেশগুলো কম্পিটিটিভনেস হারাবে। আর যেহেতু বিশ্বের চাহিদাও কমে যাবে, তাই বাণিজ্য সংকুচিত হয়ে আসবে। এর পাশাপাশি সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও একটা শ্লথগতি লক্ষ্য করা যাবে এবং ইতোমধ্যে তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এর পাশাপাশি ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগেও এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তারা সামনের দিনে বিনিয়োগ করবেন কি করবেন না সেটা একটা বিষয়। আর এখন তো অর্থপ্রবাহের ওপরও একটা চাপ পড়বে। এর পাশাপাশি সরকারি ব্যয়ের ওপরও একটা চাপ পড়বে, কেননা সরকারকে স্বাস্থ্য খাতে ও প্রণোদনা খাতে ব্যয় করতে হবে, অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। সে কারণে সরকারের যে নিয়মিত ব্যয়গুলো রয়েছে সেটার ওপর এক ধরনের চাপ পড়তে পারে। এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব আয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক খাতের ওপর বিরাট চাপ পড়তে পারে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বড় বড় খাতে অর্থ বরাদ্দ না দিয়ে ছোট ছোট খাতে, বিশেষ করে যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তাদের প্রণোদনা দিতে অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন- একথা উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, রাজস্ব আহরণের বর্তমান যে হার তাতে চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এক লাখ কোটি টাকা রাজস্ব কম আহরণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি এখনকার জন্য না হলেও স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি একটি বিষয়।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের সংকটের সময় যখন চাহিদা দ্রুত কমে যায়, কর্মসংস্থান হারানোর প্রবণতা বাড়ে ও মানুষের আয় কমে যায়, তখন বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনীতিতে তারল্য বাড়ানো। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কীভাবে তারল্য বাড়ানো যায় তার একটা ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে একটি উপায় হতে পারে ট্রেজারি বন্ড বা বিল কেনার মাধ্যমে, আরেকটা হতে পারে সুদের হার কমিয়ে।
Leave a Reply