নীল নদে বৃহত্তম ড্যাম নির্মাণ করছে ইথিওপিয়া। আফ্রিকার দ্রুত সমৃদ্ধিশালী দেশটির ড্যামটি এ নদের জলের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। বিশেষত এ ড্যামের ফলে মিসর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর এএফপি।
মিসর ছাড়া সুদানও এ ড্যামের ফলে সংকটে পড়বে বলে অভিযোগ জানিয়েছে দেশটি। এ ড্যাম কী কী রকমের সংকট তৈরি করতে পারে তা নিয়ে কায়রোয় গত সোমবার দুদিনের আলোচনায় বসেছে সুদানসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেশী দেশগুলো।
৬ হাজার ৬৯৫ কিলোমিটার (৪ হাজার ১৬০ মাইল) দৈর্ঘ্য নিয়ে নীল বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘতম নদ। ওই অঞ্চলের শুষ্ক দেশগুলোর জলের প্রধান উৎস এ নদ। চাষাবাদ ছাড়া জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যও প্রতিবেশী দেশগুলো এ নদের ওপর বড় রকমভাবে নির্ভরশীল।
এ নদের নিষ্কাশন অববাহিকা ৩০ লাখ বর্গকিলোমিটার (১১ লাখ ৬০ বর্গমাইল)। ওই অঞ্চলের বুরুন্ডি, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, মিসর, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, দক্ষিণ সুদান, সুদান, তানজানিয়া ও উগান্ডা—এ ১০টি দেশের দাবি রয়েছে নীল নদের জলে।
নীলের প্রধান দুটি উপনদী মিসর হয়ে উত্তর দিকে বয়ে যাওয়া ও ভূমধ্য সাগরে পড়ার আগে সুদানের রাজধানী খার্তুমে মিলিত হয়েছে। এ উপনদী দুটি স্বেত নীল (হোয়াইট নীল) ও আকাশি নীল (ব্লু নীল) নামে পরিচিত। প্রসঙ্গত, নীল নদ হয়ে বছরে প্রায় ৮ হাজার ৪০০ কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়।
এদিকে ২০১১ সালে ‘গ্র্যান্ড রেনেসাঁ ড্যাম’ নামে নীল নদে আফ্রিকার বৃহত্তম ড্যাম নির্মাণ শুরু করে ইথিওপিয়া। দেশটির সুদান সীমান্ত থেকে এ ড্যামের দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে প্রায় ৩০ কিলোমিটার। এ ড্যাম নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪২০ কোটি ডলার (৩৭০ কোটি ইউরো)। আগামী বছরের শেষ নাগাদ এ প্রকল্প থেকে প্রাথমিক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে প্রকল্পটির পুরো কার্যক্রম শুরু হবে ২০২২ সালে।
উল্লেখ্য, ওই অঞ্চলের শুষ্ক দেশগুলোর মধ্যে মিসর অন্যতম। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদন, চাষাবাদসহ প্রয়োজনীয় জলের প্রায় ৯০ শতাংশ আসে নীল নদ থেকে।
এ নদের ওপর দেশটির আইনি অধিকার রয়েছে বলে দাবি করে আসছে কায়রো। ১৯২৯ সালের চুক্তি অনুযায়ী দেশটি নীলের জলের বড় হিস্যা পায়। এছাড়া এ নদে কোনো প্রকল্প নির্মাণে ভেটো দেয়ার অধিকার রয়েছে মিসরের। অন্যদিকে ১৯৫৯ সালের আরেক চুক্তিতে কায়রো ও খার্তুম নীলের জলের যথাক্রমে ৬৬ ও ২২ শতাংশ হিস্যা পাবে স্থির হয়।
এদিকে মিসর ও সুদানকে বাদ দিয়ে ২০১০ সালে নীল নদ অববাহিকার অন্য আটটি দেশ ‘কো-অপারেটিভ ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। নীলে কায়রো ও খার্তুমের বড় ধরনের অধিকার থাকা সত্ত্বেও উভয় দেশকে বাদ দিয়ে ওই চুক্তি অনুযায়ী ২০১১ সালে সেখানে ড্যাম নির্মাণ শুরু করে ইথিওপিয়া।
নিজেদের প্রয়োজনীয় জলসংস্থানের পথে এ ড্যাম বাধা তৈরি করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে কায়রো। এ নদের জলে কায়রোসহ পূর্ব আফ্রিকার উল্লিখিত দেশগুলোর অধিকার থাকায় একটি সমঝোতায় না পৌঁছলে তা বড় সংকট তৈরি করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক সংকট গ্রুপের’ চলতি বছরের মার্চের প্রতিবেদনে।
এদিকে আগামী তিন বছরের মধ্যে ড্যামটির পুরো কার্যক্রম শুরু করতে চায় ইথিওপিয়া। অন্যদিকে ড্যামটির সম্পূর্ণ কার্যক্রম ১৫ বছরের আগে শুরু না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে মিসর।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অঞ্চলটির জলবিরোধ নিষ্পত্তির জন্য মধ্যস্থতাকারীর প্রস্তাব করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারি নাগাদ নীল নদের জল সমস্যা সমাধান করতে চায় মিসর, ইথিওপিয়া ও সুদান।
Leave a Reply