নিজস্ব প্রতিবেদক : আলামগীর হোসেন আলম (৩৫) নামে এক পরিবহন শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের গোবিন্দকাটি গ্রামের আহমতুল্লাহ বিশ্বাসের পাটক্ষেত থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ নিহতের প্রথম স্ত্রী আয়েশা খাতুন আটক করেছে। নিহত আলমগীর হোসেন গোবিন্দকাটি গ্রামের ফকির আহম্মদ সরদারের ছেলে। তিনি সাতক্ষীরার সংগ্রাম পরিবহনের সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের হাইসোয়া প্রকল্পের মাঠ কর্মী ও বলাডাঙা গ্রামের রহিমা খাতুন জানান, প্রথম স্ত্রী গোবিন্দকাটি গ্রামের আয়েশা খাতুনকে তালাক দিয়ে গোবিন্দকাটি গ্রামের আলমগীর হোসেন আলম ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে তাকে ভালবেসে বিয়ে করে। বর্তমানে আজমীর হোসেন জিমি নামে তারে দু’ বছর দু’ মাসের এক ছেলে রয়েছে। তালাকনামা না তুলে আয়েশা তার স্বামীর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে, পারিবারিক আদালতে ও বিনা অনুমতিতে বিয়ের অভিযোগে আদালতে মোট তিনটি মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হোসনে আরা আক্তারের নির্দেশ অনুযায়ি আলমগীর তার বড় স্ত্রী ও মেয়ে ঝাউডাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী দিশার পড়াশুনা ও সংসার খরচ বাবদ ছয় মাস আগে মীমাংসা করে নেন। মীমাংসার শর্ত অনুযায়ি আয়েশাকে পৃথক দু’টি দলিলে তিন কাঠা ও দু’ শতক জমি লিখে দেন। চার মাস আগে তাকে ৬০ হাজার টাকাও দিয়ে দেওয়া হয়। অথচ হত ২৪ জুন ধার্য দিনে আদালতে আসলে প্রথম স্ত্রী আয়েশা ও তার বাবা কানা আনছার আদালত চত্বরে আলমগীরকে মারপিট করার চেষ্টা করে। হত্যার হুমকি দেওয়ায় আলমগীরকে নিয়ে তিনি কৌশলে পালিয়ে বাড়িতে আসেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হোসেন আরা আক্তার হ্বজ্ব থেকে ফিরে এলে আইনজীবী অ্যাড. আজগার আলীর সঙ্গে কথা বলে মামলা তুলে নেওয়ার কথা ছিল আয়েশার।
রহিমা খাতুন আরো জানান, আলমগীরের বাবার দু’ বিয়ে। প্রথম স্ত্রীর নাম রাজিয়া খাতুন ও ছোট স্ত্রীর নাম খাদিজা খাতুন। দু’ স্ত্রীর মোট ১২টি ছেলে। আলমগীর ছিল ছোট মায়ের ছেলে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আলমগীর তার বাড়ি থেকে (বলাডাঙা) বের হয়ে মাধবকাটি বাজারের কামরুলের চায়ের দোকানে বন্ধু ইউপি সদস্য সুমনের সঙ্গে কথা বলে রাস্তার পাশে সাইকেল রেখে একই ইজিবাইকে উঠে চলে যায়। রাত ১১টা পর্যন্ত তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি শ্বাশুড়িকে জানান। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে গোবিন্দকাটি গ্রামের বিশ্বাসপাড়ার একটি পাটক্ষেতে আলমগীরের লাশ পড়ে থাকার খবর শুনে তিনি সেখানে যান। আয়েশা ও তার বাবা কানা আনছার পরিকল্পিতভাবে আলমগীরকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন রহিমা।
আলমগীরের মা খাদিজা খাতুন জানান, সোমবার রাত সাড়ে সাতটা থেকে আলমগীরের ছোট স্ত্রী রহিমার মুহু মুহু ফোনে পেয়ে তিনি ছেলের ফোনে যোগাযোগ করতে পারেননি। তবে দ্বিতীয় বিয়ের কারণে প্রথম স্ত্রী ও তার স্বজনরা আলমগীরকে খুন করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
আলমগীরের প্রথম স্ত্রীর সন্তান স্কুল ছাত্রী দিশা বলেন, তার বাবাকে কে বা কারা মেরেছে তা সে বলতে পারে না। তবে সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাবা তাদের বাড়িতে এসে মায়ের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে যায়।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইলতুৎ মিশ বলেন, আলমগীরকে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। মৃতের মাথায় ভারী জিনিস দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগানো আছে। মৃতদেহের পাশে একটি মোবাইল ফোন পড়ে ছিল। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের প্রথম স্ত্রী আয়েশাকে আটক করা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১টা পর্যন্ত থানায় কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
Leave a Reply