নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার করা দরকার। একই সাথে দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় তাদের মধ্যে সক্ষমতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তা না হলে সাতক্ষীরা অঞ্চলের জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
বুধবার (২৬ জুন) সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ডিজিটাল কর্নারে উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও নগর দারিদ্র্য: সংকট ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা সাতক্ষীরায় এরই মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদি জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ঘন ঘন দুর্যোগ তাদের অভিবাসিত করছে। সবধরনের কর্মসংস্থান হারিয়ে এসব মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে শহরের অস্বাস্থ্যকর বস্তিতে। সেখানে তাদের মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তারা সাতক্ষীরা শহরের ৪৭টি বস্তির কথা উল্লেখ করেন। এসব বস্তিতে বসবাসকারী ৩০ হাজার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, সুপেয় পানির নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানেরও নিরাপত্তা নেই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পুকুরের পানি, ডোবার পানি ও পয়ঃবর্জ্যরে পানি একাকার হয়ে প্রতি বছর এসব নি¤œ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে।
তাদের খাবার পানির তীব্র সংকট রয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা আরও বলেন, নলকূপের মাধ্যমে তারা যে পানি পাচ্ছেন তাও আর্সেনিক, আয়রন ও লবণযুক্ত।
নাগরিক সংলাপে বক্তারা আরও বলেন, শহরের পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত পথ হারিয়ে গেছে। প্রাণ সায়ের খাল এক বর্জ্য খানায় পরিণত হয়েছে। নিকটস্থ বেতনা নদী পলি পড়ে উঁচু হয়ে যাওয়ায় পানির ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে বছরের কয়েক মাস এই পানিতে ডুবে থাকতে হচ্ছে তাদের।
সাতক্ষীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাশীষ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিম, দৈনিক পত্রদূতের উপদেষ্টা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সদস্য কল্যাণ ব্যানার্জি, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদ এম কামরুজ্জামান, স্বদেশ পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, টিআইবির এরিয়া ম্যানেজার আহাদুজ্জামান, সদর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. রোকুনুজ্জামান, সুলতানপুর কাজীপাড়া বস্তির কোহিনুর, আতির আমবাগান বস্তির আব্দুল্লাহ, রাজার বাগান ঋষিপাড়ার শেফালী দাস প্রমুখ।
নাগরিক সংলাপে বারসিকের কো-অর্ডিনেটর জাহাঙ্গীর আলমের স্বাগত বক্তব্যের পর ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও নগর দারিদ্র্য: সংকট ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী। সংলাপে জীবনে বহুমুখী সংকটের উল্লেখ করে আরও বলা হয়, ১৯৮৮’র ঘূর্ণিঝড়, ২০০৭’র সিডর এবং ২০০৯’র আইলায় সব হারানো অসংখ্য পরিবার শহরের বস্তিবাসী হয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবনযাপন করছেন। তাদের মাঝে জরুরী ভিত্তিতে পরিকল্পনা মাফিক উন্নয়ন কাজ করা জরুরী বলে সংলাপে উল্লেখ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বস্তিবাসীর সক্ষমতা অর্জন, স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার স্থাপন, সুপেয় পানির সংকট দূরীকরণে আরও গভীর নলকূল স্থাপন, পানি নিষ্কাশনের পথ সুগম করা, স্বল্প মূল্যে টয়লেট স্থাপন, কুটির শিল্পের সম্প্রসারণ, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু পালনে সহায়তা প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাল্য বিবাহ রোধ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন, স্বাস্থ্য সেবা এবং কর্মসংস্থান নিশ্চিতের উপর গুরত্বারোপ করেন। #
Leave a Reply