র্যাবের উপস্থিতিতে সাতক্ষীরা শ্যামনগর থানার নওয়াবেকী বাজারে ‘ইরানী বস্ত্রালয়’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রবিবার খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন ওই উপজেলার পশ্চিম বিড়ালক্ষী গ্রামের ব্যবসায়ী মোঃ মুকুল হোসেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার নওয়াবেকী বাজারে মৌজা- আটুলিয়া, এস এ খতিয়ান-০১, এস এ দাগ নং-৫১৩১, জমির পরিমাণ ২০ বর্গ মিটার। সরকারী পেরীফেরী এই জমি আমি ১৯৯৮ সাল থেকে ভোগ দখল করে আসছি। এই জমিটি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য ০৭/০৮/২০০৮ ইং তারিখে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নিকট আবেদন করি। তখন আবেদনটি গ্রহণ করে ২০১৬ নং স্মারকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ১১/০৮/২০০৮ ইং তারিখে ৪নং আদেশ আবেদনকারী আমি মোঃ মুকুল হোসেনের আদেশ মঞ্জুর পূর্বক বন্দোবস্তের মাধ্যমে লীজ প্রদান করার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) শ্যামনগরকে আদেশ প্রদান করে। এ আদেশের প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শ্যামনগর আবেদনকারী মোঃ মুকুল হোসেনের বরাবর ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রেভিনিউর ২৮৬০ টাকা গ্রহণ পূর্বক রশিদ প্রদান করে ১০০ ও ৫০ টাকা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে শর্তাবলী সম্পাদন করে প্রতি বছর রেভিনিউর ২৬০ টাকা গ্রহন করে আদেদনকারীর বরাবর চুক্তি সম্পাদন করে দেন। ফলে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমি রেভিনিউ পরিশোধ করি। এরপর আমি লীজ জমিতে ‘ইরানী বস্ত্রালয়’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সুনামের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। এ অবস্থায় জনৈক শামিমা ঝরনা, তার স্বামী আব্দুর রউফ ও সন্তান শাহরিয়ার ওরফে রোকনের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৬/০৫/১৯ইং তারিখ বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্পের র্যাব-৬ এর ডিএডি মোঃ লুৎফুর রহমান সঙ্গীয় ৮/১০ জন ফোর্স নিয়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়। তারা আমাকে ভয়ভিতী প্রদর্শন করে আমার এবং আমার ভাই বুলবুল হোসেন কাছ থেকে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। এসময়ে আব্দুর রউফের ভাই ১৩ নং হায়বাতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান লাভলু আমাদেরকে হুমকি-ধামকি প্রদান করেন। ডিএডি মোঃ লুৎফুর রহমানের নিদের্শে তাৎক্ষণিকভাবে আমার দোকানের অধিকাংশ জায়গা ৫ ইঞ্চি ইটের গাথুনি দিয়ে শামিমা ঝরনাকে দখল বুঝিয়ে দেয়। এসময়ে আমি সরকারী বৈধ দলিলপত্র দেখাতে চাইলে তিনি কোন কাগজপত্র দেখবেন না বলে জানান এবং এ নিয়ে কোন আইনের আশ্রয় গ্রহণ করা হলে আমাকে উঠিয়ে নিয়ে ক্রসফায়ারে দেবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়। ফলে এখন আমি কোন ব্যবসা করতে পারছিনা। নিঃশ্ব হয়ে ঘরে বসে আছি। দোকানে আগের তোলা মালামাল পচন ধরছে। ঈদের সময় মালামাল বিক্রি করতে না পারায় লাখ লাখ টাকা দেনা হয়ে পড়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্ন রেখে বলেন, জমি নিয়ে বিরোধ হলে প্রকৃত জমির মালিকানা নির্ধারণ করে আদালত। কিন্তু আদালতে না গিয়ে কি ভাবে একজন বৈধ মালিক কে উচ্ছেদ করা হলো? আর আমার জমির মালিকতো সরকার। আমি সরকারের ভারাটিয়া মাত্র। সরকারের পক্ষে মামলা না করে আমাকে উচ্ছেদের বৈধতা কতটা আইন সিদ্ধ? একজনের আবেদনের সত্যতা যাচাই বাছাই না করে পক্ষ নেওয়াটা সঠিক কিনা? র্যাবের ডিএডি মোঃ লুৎফুর রহমান দু পক্ষের কাগজপত্র দেখে বাজার কমিটির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে পারতেন, কিন্তু তিনি না করে একজনকে জোরর্পর্বক উঠিয়ে আরেকজনকে বসিয়ে দিলেন-এই সিদ্ধান্ত কতটা আইন সম্মত?
এক প্রশ্নের জবাবে মোঃ মুকুল হোসেন বলেন, জমির অবৈধ মালিকানা দাবিদার শামিমা ঝরনার ছেলে শাহরিয়ার ওরফে রোকন একজন সেনা সদস্য। সেনাবাহিনীতে চাকুরী করার সুবাধে তিনি মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্পের র্যাব-৬ এর ডিএডি মোঃ লুৎফুর রহমানকে দিয়ে তিনি এ অন্যায় কাজটি করিয়েছেন। তাছাড়া মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্পের র্যাব-৬ এর ডিএডি মোঃ লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে সুন্দরবনের বনদস্যু, বাওয়ালী, মাওয়ালী, মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজী, ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকিসহ বিভিন্ন অভিযোগে সম্প্রতি তাকে মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্প থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে সাতক্ষীরা সদর ক্যাম্পে বদলী করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, র্যাবের কাজ হচ্ছে শান্তিশৃংখলা প্রতিষ্ঠিত করা। র্যাবের কাজ অবৈধভাবে কাউকে উঠিয়ে অবৈধভাবে কাউকে বসিয়ে দেওয়া নয়। কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে র্যাবের ভাবমুর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাদের দিকে নজর দেওয়া উচিত। পাশাপাশি সরকারের কাছ থেকে লীজি সম্পত্তি উদ্ধার পূর্বক শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা-বানিজ্য করতে পারি তার জন্য প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ব্যবসায়ী মোঃ মুকুল হোসেন। #
Leave a Reply