নিজস্ব প্রতিনিধি: সময়মত হাসপাতালে না আসায় এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়েছেন দুইজন চিকিৎসক। শনিবার সকালে সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের এ এঘটনা ঘটে। খোজখবর নিয়ে জানা য়ায়, জেলার দূর দূরান্ত থেকে অসুস্থ শিশুদের নিয়ে আসে সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের । শ্বাসকষ্ট,নিমিউনিয়া, ডায়রিয়া, গলাফোলা, জ্বর সহ নানা রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে উৎকন্ঠিত তাদের অবিভাবকরা। কষ্টে থাকা সন্তানদের ডাক্তার দেখিয়ে একটু চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকলেও ডাক্তার, স্টাফ, টিকিট ম্স্টাার কারো দেখা মেলে না । এই চিত্র জাতীয় অধ্যাপক ডা: এম আর খান প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের। তবে কমিটির আহবায়ক জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, তিনি কমিটির সভাপতি হলেও তার কাছে এ বিষয়ে কোন অভিযোগ নেই। কমিটির নির্বাচন প্রশ্নে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনের পরেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসপাতালটি এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। সম্পূর্ণ বেসরকারি ভাবে এবং নিজস্ব অর্থায়নে এই হাসপাতালটি চললেও এখানে এখন অনিয়মটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। পরিচালনার জন্য টানা ৯ মাস ধরে আহবায়ক কমিটিতে চলছে হাসপাতালটি। জেলা প্রশাসক এই আহবায়ক কমিটির সভাপতি । বাকি ৮ সদস্যদের একাধিক সদস্য বলেন গত ৯ মাসে তারা এক থেকে দুইবার এই কমিটির বৈঠকে বসেছেন। পরিচালনা কমিটির জন্য নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন কয়েকবার । কিন্তু নির্বাচন হয়নি। ফলে হাসপাতালের সামগ্রিক কর্মকান্ড পরিচালনা ও তদারকি হচ্ছেনা। নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ জমা হচ্ছে বিভিন্ন দফতরে। হাসপাতাল পরিচালনা ও অনিয়ম বিষয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের বিষয়ে দেখতে গেলে এই সব চিত্র চোখে পড়ে। আশাশুনি উপজেলার উত্তর চাপড়া থেকে ২০ মাস বয়সের মেয়ে হানিফাকে নিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছেন মা আছিয়া সকাল ৮টায়। কিন্ত ডাক্তারের দেখা নেই। ৩১দিন বয়সের হুসমা কে নিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূর তেতুলিয়া থেকে এসেছেন নানী শাহিনা বেগম। অপেক্ষা করছেন কখন ডাক্তার আসবে। সর্দি, জ্বর, গলায় লালা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত নাতিকে নিয়ে হাসপাতালে তার অপেক্ষা প্রায় দেড় ঘন্টা। ১৮ মাস বয়সের ছেলে ওয়ালিদ কে নিয়ে তালা উপজেলার খলিল নগর থেকে বাবা গফ্ফার দ্বিতীয় দিনের মত এসেছেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতাল ও প্যাথলজিতে করা রিপোর্ট দেখাতে। ৮শ’ ৫০ টাকা খরচ করে বুধবার প্যাথলজি রিপোর্ট করা হলেও রাত হওয়ার কারণে আবার তাকে আসতে হয়েছে হাসপাতালে । এমন চিত্র প্রায় প্রতিটি রোগীর স্বজনদের। হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগ থাকলেও বেশিরভাগ রোগীর স্বজনদের শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবে পরীক্ষা করতে হয় বাধ্যতামূলক ভাবে। হাসপাতালের এই অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা বিষয়ে অকপটে স্বীকার করলেন আহবায়ক কমিটির সদস্য প্রবীন চিকিৎসক ডা: সুশান্ত কুমার ঘোষ। তিনি জানান আহবায়ক কমিটির মেয়াদ ৩ মাস হলেও গত ৯ মাসে দুই ডিসির সময়ে দুইবার মিটিং হয়েছে। নির্বাচনের বিষয়ে সমস্ত কাগজপত্র জেলা প্রশাসনে জমা দেয়া হলেও নির্বাচন হয়নি। আহবায়ক কমিটির সদস্য সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর লিয়াকত পারভেজ বলেন হাসপাতালের অনিয়মের বিষয়ে তিনি ২ মাস আগে অভিযোগ পেয়েছেন। অব্যবস্থাপনা আর অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজন শক্তিশালী কমিটি। হাসপাতালের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামান খান বলেন, নিয়ম না থাকলেও এডহক কমিটি ৩ লাখ টাকার বৈশাখী ভাতা দিয়েছে ডাক্তারসহ স্টাফদের। আহবায়ক কমিটির মেয়াদ ৩ মাসের বেশি থাকতে পারেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের কথা ডিসিকে বলা হলেও নির্বাচন হয়নি। হাসপাতালের নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্টাফদের বিরুদ্ধে। হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগ থাকলেও রোগীদের একপ্রকার বাধ্য করা হয় শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করতে। তবে হাসপাতালে একাধিক বার আসা রোগীর স্বজনদের বাধ্য করা হয় ডাক্তারদের ব্যাক্তিগত চেম্বারে যেতে। মেডিকেল অফিসার ও কনসালটেন্ট এর মধ্যে সমন্বয় হীনতার অভিযোগ ও রয়েছে। একজনের ভর্তি রোগী অন্যজন দেখতে চাননা এমন অভিযোগ ওপেন সিক্রেট। তবে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা: জাকির হোসেন বলেন, তাকে হাসপাতালে ২ বার আসতে হয়। সকালে এসে তিনি ইনডোর ভিজিট করে আউটডোরে বসেন। বিকালে আসেন ভর্তি রোগী দেখতে। হাসপাতালের এই সমস্যা দীর্ঘ দিনের উল্লেখ করে তিনি বলেন,স্থানীয় স্টাফ হওয়ার কারনে বেশি সমস্যা । এখানে দুইজন মেডিকেল অফিসার তার সিনিয়র উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা টানা ২৩ বছর ধরে এই হাসপাতালে রয়েছেন। ইচ্ছা করলেই ডাক্তার পাওয়া বা পরিবর্তন করা যায় না। হাসপাতালের সামনের কিছু ওষুধের দোকানীরা হাসপাতালে ঢুকে প্রেসক্রিপসন পরিবর্তনের জন্য চাপ দেয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি হাসপাতালে যোগদানের পর হাসপাতালের অর্থনৈতিক পরিবর্তন এনেছেন বলে তিনি দাবি করেন। এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়েছেন কিনা এবিষয়ে তিনি বলেন, ইনপেস্টা কোম্পানির জেলা ম্যানেজার আঃ জলিলের বাইকে করে তিনি হাসপাতালে গেলে সেখানে উপস্থিত থাকা মনি, মেহেদী ও বিঠুখানের নেতৃত্বে কয়েকজন ব্যক্তি তার গতিরোধ করে কোম্পানির জেলা ম্যানেজার আঃ জলিলকে মারপিট করে এবং তাকে সম্মান হানি করে। সে সময় ডা: আব্দুর রাজ্জাক সাহেব হাসপাতালে ঢুকতে দেননি। যে কারণে তিনি ঘটনাস্থল থেকে চলে আসেন। সেখানকার পরিবেশ ভালো না থাকার কারণে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
Leave a Reply