সাতক্ষীরায় দুদক মহাপরিচালক মাহমুদ হাসান , দুর্নীতি দমন কমিশন এখন নখ দন্তহীন নয় কঠিন ও নির্মম প্রতিষ্ঠান

নিজ্স্ব প্রতিনিধি। ‘আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান’ কথাটি যথার্থ নয় উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক মাহমুদ হাসান বলেন, আবেগ তাড়িত হলে আইনের সঠিক প্রয়োগ সম্ভব হয় না। আইন দ্বারা সব অপরাধ দুর করাও সম্ভব নয়। বরং নিজের ভেতর থেকে দুর্নীতি বিরোধী চেতনাকে জাগ্রত করতে হবে।
মাহমুদ হাসান বুধবার সকালে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সর্বস্তরের মানুষের সাথে মত বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
‘গ্রেট ওয়ার্ক স্টার্টস ফ্রম স্মল ওয়ার্ক’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন শিশুদের ছোটবেলা থেকে সততার শিক্ষা দিতে হবে। তাদেরকে নিয়মিতভাবে উপদেশমূলক বাক্য যেমন ‘সদা সত্য কথা বলিবে, শিক্ষক বাবা মা ও বড়দের শ্রদ্ধা করিবে’ ইত্যাদি শিখাতে হবে। দেশের সর্বত্র স্কুলগুলিতে সততা স্টোর গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন এতে প্রতিদিন শিশু শিক্ষার্থীরা সততার চর্চা করতে পারবে। মানিকগঞ্জ জেলার ১৮৩ টি স্কুলের ১৬২ টিতে সততা স্টোর চালু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন স্কুলে প্রতিষ্ঠিত এসব বিপনীতে কোনো বিক্রেতা থাকে না। শিশুরা নির্ধারিত মূল্যে পণ্য ক্রয় করে তার বিপরীতে টাকা যথাস্থানে রেখে দেয়। দুদক মহাপরিচালক আরও বলেন দেশের দুর্নীতি কমলে জিডিপি বাড়বে ২.৫% । তাই দুর্নীতি প্রতিরোধে সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করতে হবে। তবেই সম্ভব হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠন। দুদক এখন নখ দন্তহীন নয় জানিয়ে তিনি বলেন দুদক এখন এক কঠিন নির্মম ও নিষ্ঠুর প্রতিষ্ঠান। ঘুষের দেশ নয় বাংলাদেশকে একটি মর্যাদার দেশে উন্নীত করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন জাপানের উন্নতি হয়েছে সততা ও কর্মনিষ্ঠার কারণে । জাপানিরা কাজ পাগল জাতি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন তাদের সততার কারণে জাপানের পন্য প্রোডাকশন কোয়ালিটি অতি উচ্চমানের। দুর্নীতি দমন কমিশন এসিসি বা এন্টি করাপশন কমিশনকে একই সঙ্গে অ্যাকশন, কমিটমেন্ট ও কারেজ হিসাবে আখ্যায়িত করে দুদক মহাপরিচালক বলেন, এর বাস্তবায়নে দরকার কোলাবরেশন ও কো অপারেশন।’
সঠিকভাবে না জেনে, না বুঝে এবং প্রমান না পেয়ে কাউকে দোষী বলা যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘একজন অপরাধীকে যদি ভাল ভাষা দিয়ে বলা যায় যে আপনি ভালো মানুষ তাহলে তার মধ্যে এক ধরনের উৎসাহব্যঞ্জক শক্তির উদগীরন হতে পারে । মানুষ কেনো দুর্নীতিবাজ হয়ে ওঠে সে বিষয়ে তথ্য তালাশ করতে হবে । সে সব জায়গাতে যদি কঠোর নজরদারি চালানো হয় তাহলে দুর্নীতির প্রসার কমে যাবে।’ তিনি সকল অফিস আদালতকে এবং নিজ নিজ কর্মস্থলকে দুর্নীতিমুক্ত ঘোষনা করে এগিয়ে যাবার আহবান জানান।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মুনসুর আহমেদ, সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমান, প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সহকারি পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির, তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সম্পাদক প্রফেসর মোজাম্মেল হোসেন, জেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন, জেলা প্রথিমিক শিক্ষা অফিসার মো. রুহুল আমিন, জেলা রেজিস্ট্রার প্রমূখ। মুনুসর আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগ দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে। তাদের দুর্নীতি রোধে আরও কঠোর হতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও সাতক্ষীরা মেডকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে ধরেন।’
মত বিনিময় সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘সমাজের সকল স্তরে দুর্নীতিকে না বলতে হবে। দুর্নীতি আমাদের সমাজকে কুরে কুরে খাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন শিশু বয়স থেকে আমাদের সন্তানদের দুর্নীতি বিরোধী করে তুলতে হবে। তাদেরকে সৎ পথে পরিচালিত করতে বাবা মাকে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে।’

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *