নিজস্ব প্রতিনিধি: শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. আনিসুর রহমানের অদক্ষতায় প্রাণ হারাতে বসেছে যুবক শাহিন কাদির। অদক্ষ গাড়ি চালক ডা. শাহিনের প্রাইভেট কার চাপায় গুরুতর আহত শাহীন কাদির এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. আনিসুর রহমান নিজে দক্ষ চালক না হয়েও বেপরোয়াভাবে নিজের প্রাইভেটকার চালিয়ে শ্যামনগর অভিমুখে আসছিলেন। অপরদিকে শাহিন কাদির তার বন্ধু হাবিবুর রহমানের মোটর সাইকেলে বসে বিপরীতমুখে কালিগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। শ্যামনগরের খানপুর ফিলিং স্টেশনের কাছে একটি ছোট কালভার্টের ওপর তার প্রাইভেট কারটি শাহিন কাদিরকে চাপা দেয়। তাকে গুরুতর আহত দেখেও চালক ডা. আনিস শ্যামনগরের দিকে পালিয়ে যান। এ সময় গ্রামবাসী তাকে তাড়া করেও ধরতে ব্যর্থ হন।
স্থানীয়রা শাহীন কাদিরকে উদ্ধার করে শ্যামনগর হাসপাতালে ভর্তি করলে ডা. আনিস তার চিকিৎসায় সাহায্য না কওে বরং তার সামনেও আসতে অস্বীকৃতি জানান।
শাহীন কাদিরের বাবা এসএম মুজিবুর রহমান জানান, তার ছেলেকে শ্যামনগর থেকে সাতক্ষীরায় পরে খুলনা এবং সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।
তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। গত ৩ জুন থেকে ১৭ দিনেও তার জ্ঞান ফেরেনি। ডাক্তাররা বলছেন তার মস্তিষ্কের ক্ষমতা ৭৫ ভাগ বিলুপ্ত হয়েছে। আঘাতজনিত কারণে মাথার ঘিলু নির্গত হয়েছে। কয়েকটি ¯œায়ু বিচ্ছিন্ন হয়ে রক্তপাত হয়েছে। মেরুদ-ের উভয় স্কন্ধের হাড় ভেঙে গেছে। এছাড়া স্পাইনাল কর্ড ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেছে। সমস্ত শরীর থ্যাতলানো শাহীন কাদিরের লিভার বড় হয়ে গেছে। সে এখন অচেতন অবস্থায় বাকরুদ্ধ হয়ে রয়েছে।
শাহীন কাদির শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের শ্রীফলকাটি গ্রামের এসএম মুজিবর রহমানের ছেলে। সে সম্প্রতি কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের চেষ্টা করছিল।
অপরদিকে শ্যামনগরের আরএমও ডা. আনিসুর রহমান একই উপজেলার হাওয়ালভাঙ্গি গ্রামের আবু দাউদ সরদারের ছেলে।
প্রথম দিকে চাপের মুখে ডা. আনিস শাহিন কাদিরের চিকিৎসার ভার বহন করার কথা বলেন।
কিন্তু শাহিন কাদিরের পিতা মুজিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘খরচ বহন করা তো দুরের কথা ডা. আনিস চিকিৎসার ব্যাপারে কোন সহায়তায় করেন নি।
এলাকাবাসী জানান, ডা. আনিসের মালিকানাধীন সাদা রঙের প্রাইভেটকারটি (রেজি নং- ঢাকা মেট্রো -গ- ৩৫-১২১১) তিনি নিজে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আনাড়ি চালক হওয়ায় তার গাড়িতে থাকা জনৈক সোহরাব মোড়ল তাকে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। এসময় গাড়ির মধ্যে উচ্চস্বরে কথোপকথন, হাসিঠাট্টা ও তুচ্ছতাচ্ছিল্যভাবে কথা বলছিলেন তারা। তাদের খামখেয়ালিপনার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
শাহীন কাদিরের বাবা এসএম মুজিবুর রহমানের অভিযোগ ডা. আনিসুর রহমান তার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। চিকিৎসার শুরু থেকে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। এসব টাকা তিনি জমি বিক্রি ও বন্ধক এবং সমিতি থেকে লোন নিয়ে পরিশোধ করেছেন। এখন শাহীন কাদিরের চিকিৎসায় দৈনিক ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে থাকা শাহিন কাদিরের বাবা শাহিনের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সহযোগীতা কামনা করে বলেন, ‘আমি আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য মানবিক সহায়তা চাই’।
এদিকে দুর্ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ‘ওইদিন তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন না। তার ড্রাইভার সোহরাব মোড়ল গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন।’
এদিকে ডা. আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে মাদক সেবন এবং বিভিন্ন রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন কর্মচারি এবং সেবা নিতে আসা রোগীরা জানান, ডা. আনিসুর রহমান নিয়মিত ইয়াবা সেবন করেন। তার কাছে কোনো রোগী নিরাপদ নন। বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তার বিকারগ্রস্থতার কারণে বহু রোগী মারা যাওয়ারও অভিযোগ আছে।
তবে ডা. আনিস এসব অভিযোগ অস্বীকার কওে বলেন, ‘আমি মাদকাসক্ত নই।’
এদিকে এ ঘটনায় শ্যামনগর থানা পুলিশ শাহিনের বাবার দেওয়া মামলা গ্রহণ করেনি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসী জানান, ওসির সাথে ডাক্তার আনিসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ওসি তার বিভিন্ন সময় গাড়ি ব্যবহার করেন। পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকার করায় বাবা এসএম মুজিবর রহমান সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সহযোগিতা কামনা করে আবেদন করেছেন।
এব্যাপারে জানতে চাইলে শ্যামনগর থানার ওসি সৈয়দ মান্নান আলি বলেন, ‘তারা কোনো এজাহার দেননি। এখনই এজাহার দিলে তিনি তা রেকর্ড করবেন।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে দুর্ঘটনায় আহত শাহীন কাদিরের বাবা বলেন, আমার ছেলেটির জীবন বিপন্ন। তার বাক রুদ্ধ হয়ে গেছে। লাইফ সাপোর্ট খুলে দিলেই তার জীবনবায়ু শেষ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় তিনি ডা. আনিসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
Leave a Reply