আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর জমিতে আম আবাদ

ফলন ভাল হলেও দাম নিয়ে হতাশ চাষীরা

আশাশুনি প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার আমের খ্যাতি দেশ জুড়ে। ভাল ফলন পেলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছে। বছর জুড়ে আশার আলো বুকে নিয়ে আম আবাদে আত্মনিয়োগ করে গাছের ডালে ব্যাপক আম দেখে খুশিতে ভাসছিল চাষীরা। কিন্তু ফড়িয়া, দালাল ও আম ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারনে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক কৃষক।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, আশাশুনি উপজেলায় এ মৌসুমে ১৪৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। যার মধ্যে হিমসাগর ৩০ হেক্টর, ল্যাংড়া ২৮ হেক্টর, আম্রপালি ৩০ হেক্টর, গোবিন্দভোগ ২১ হেক্টর, গোপালভোগ ১২ হেক্টর, মল্লিকা ৯ হেক্টর, লতা ৫ হেক্টর, বারি আম-৪ দুই হেক্টর, তোতাপুরি ১ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের আম চাষ করা হয়েছে ৭ হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্যে হিমসাগর, গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, লতা, বারি আম-৪, তোতাপুরি ও স্থানীয় জাতের আম বাজারে এসেছে। এর মধ্যে হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে হিমসাগর ১৫ মে টন, গোবিন্দভোগ ১৩ মে টন, গোপালভোগ ১২ মে টন, লতা ১০ মে টন ও স্থানীয় জাতের আম উৎপাদিত হয়েছে হেক্টর প্রতি ৯ মে. টন করে। উপজেলায় মোট উৎপাদিত হয়েছে হিমসাগর ৪৫০ মে টন, গোবিন্দভোগ ২৭৩ মে টন, গোপালভোগ ১৪৪ মে টন, লতা ৫০ মে টন ও স্থানীয় জাতের আম উৎপাদিত হয়েছে ৬৩ মে টন। সর্বমোট উৎপাদিত হয়েছে ৯৮০ মে. টন। বাজারে না আসলেও গাছের ফলন দেখে ধারনা করা হচ্ছে ল্যাংড়া প্রতি হেক্টরে ১৫ মে টন, আম্রপালি ১৭ মে টন, মল্লিকা ১২ মে টন, বারি আম-৪ ১১ মে টন ও তোতাপুরি আম প্রতি হেক্টরে ১০ মে টন করে উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষকরা জানান, অতিরিক্ত গরম, সময়ের আগে আম পাকতে শুরু করা এবং বাজারে একসঙ্গে বিপুল আম উঠে যাওয়ায় আমের দাম আশানুরূপ পাওয়া যায়নি। তার উপর মধ্য স্বত্বভোগি ও বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য দেখা মিলেছে। চাষিরা জানান, বাজারে বর্তমানে প্রতিমন আমের দাম ১৬০০ টাকা থেকে ২৩০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। অথচ প্রতিমন আম উৎপাদনে তাদের খরচ হয়েছে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা করে। বুধহাটা ইউনিয়নের এক চাষী জানান, তিনি এবছর সাড়ে ৬ বিঘা জমিতে আম চাষ করেছেন। এখানে ৬৬টি আম গাছ রয়েছে। অধিকাংশই হিমসাগর ও ল্যাংড়া। সামান্য কয়েকটি হাড়িভাঙ্গা আম গাছ আছে। জমির হারি হিসাব করলে আসে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। পরিচর্চা, ঔষধ, সার ও জনের দাম পড়েছে ৪০ হাজার টাকা। মোট খরচ হয়েছে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। আড়াই বিঘা জমির আম বিক্রয় করেছি ৬২ হাজার টাকা। বাকী ৪ বিঘা জমির গাছে এ পর্যন্ত আম পেয়েছি ১৫ মনের মত এবং এখনো ৩০/৪০ মন আম গাছে রয়েছে। সবমিলে হিসেব করলে খরচ উঠে গেলেও লাভ তেমন বেশী আসবেনা। আশাশুনি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শুভ্রাংশু শেখর দাশ বলেন, আম চাষীরা যাতে ন্যায্য মূল্য পেতে পারেন সেজন্য জেলা প্রশাসন পূর্ব থেকে সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। জেলা প্রশাসক স্যার সম্প্রতি  এসংক্রান্ত মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, শহরের পিটিআই মাঠকে অস্থায়ী ভাবে আম বিক্রীর জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। কৃষকরা সেখানে সরাসরি আম নিয়ে ভোক্তাদের কাছে পৌছে দিয়ে সঠিক মূল্য পাবে। আমরা উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষক পর্যায়ে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সরাসরি পরামর্শ দিয়ে এসেছি। মুকুল আসার শুরু থেকে সার ও বালাই নাশক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছি। এখন বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। নিরাপদে আম ভোক্তাদের হাতে পৌছায় সেজন্য সহায়তা করা হচ্ছে। এবছর আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশী থাকায় আশাশুনিতে আমের ফলন ভাল হয়েছে। ভোক্তারাও ভাল আম খেতে পাচ্ছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *