আশাশুনি ব্যুরো:
আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নে মৎস্য ঘেরে বোরিং সেচে ব্যবহৃত শ্যালোমেশিনের সাথে পেঁচিয়ে মৃত্যু মোস্তাকিমকে হত্যা করা হয়েছে প্রচার দিয়ে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিবারের সদস্যরা ষড়যন্ত্রকারীদের রোষানল ও মিথ্যাচারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলে দাবী করেছেন।
মৃত মোস্তাকিমের পিতা আব্দুর রাজ্জাক কারিকর বলেন, আমি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানেরর জনক। ৩ মাস আগে মাছের ঘেরে ব্যবহৃত শ্যালো মেশিনে অসর্কতাবসত জড়িয়ে একমাত্র পুত্র মোস্তাকিমের মৃত্যু হয়। সেসময় পাশের লোকজন তাকে মেশিন থেকে ছাড়িয়ে নিলেও প্রাণে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ছেলের বয়স যখন ১১ মাস তখন তার মা মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে ওর মেঝে খালার সাথে আমার বিয়ে হলে সে মায়ের অভাব বুঝতে না দিয়ে সেবাযত্ন করে এসেছে।
ছেলের চাকুরী হয়েছিল, যে দিন মারা গেছে তার পরের দিন যোগদানের কথা ছিল। জানাযার সময় ও আগে পরে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, সাবেক চেয়ারম্যান মেম্বারসহ বহু মানুষ উপস্থিত ছিলেন। আমরা বা কারো তার মৃত্যু নিয়ে অভিযোগ তোলেনি। দারোগা প্রকাশ্যে কারো কোন অভিযোগ আছে কিনা জানতে চান। উপস্থিত কেউ কোন অভিযোগ করেনি বরং সবাই পোস্ট মর্টেম না করাতে অনুরোধ করেন। আমার চাচাত ভাইপো গোলাম রসুলের কাছে ২০ হাজার টাকা পাওনা ছিল। তাছাড়া জমাজমি নিয়ে গোলযোগ ছিল। ছেলের মীলাদের সময় তার কাছে টাকা চাইলে সে ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং মোস্তাকিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে মিথ্যা প্রচারনা চালাতে থাকে। স্থানীয় মইরদ্দিনের সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মানুষদেরকে ভুল বুঝিয়ে চাঁদা উঠিয়ে আমার নামে মিথ্যা মামলা ও মানববন্ধন ইত্যাদি করেছে। কুচ্ছা রটান হচ্ছে। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ তদন্ত হোক, লাশ উঠানো হোক আমরা নির্দোষ অবশ্যই ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ খুলে যাবে বলে তিনি দাবী করেন।
মোস্তাকিমের সৎ মা আছমা খাতুন জানান, ১১ মাসের ছেলে রেখে আমার বড় আপা মারা যান। এরপর থেকে তাকে আমি নিজের সন্তানের মত করে লালন পালন করেছি। তার কোন আবদার অপুরন রাখিনি। কেউ বলতে পারবেনা আমি সৎ মায়ের মত আচরণ করেছি। তাকে মায়ের অভাব বুঝতে দেইনি। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি সন্তান নেইনি। এই ভিটেমাটি টুকু আমাদের সম্বল। ভিটে ছাড়া করতে মিথ্যা মামলা ও অপপ্রচার চালান হচ্ছে।
মোস্তাকিমেন নানী মাহমুদা খাতুন জানান, মা হারা শিশু নাতিকে মানুষ করতে আমি আরেকটা মেয়ে জামাইয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছি। কোন অভিযোগ থাকলে দ্বিতীয় মেয়ে বিয়ে দিতাম না, অভিযোগ আমরাই করতাম। পুলিশ ৩ ঘন্টা ছিল, সকলের কাছে জানতে চেয়েছিল অভিযোগ আছে কিনা। কেউ অভিযোগ করেনি।
মোস্তাকিমের খালা আম্বিয়া ও তাহমিনা এবং চাচা আঃ রব ফকির জানান, ৮০ বছর বয়সী নানাকে নিয়েও মস্তিস্ক বিকৃতের মম অমূকলক অভিযোগ করেছে। বাবা কি ছেলেকে মারতে পারে? যারা অভিযোগ করছে তারা কি কিছু দেখেছিল? জমাজমির গোলযোগ ও পাওনা টাকা না দেয়ার অজুহাতে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা মামলা করা হয়েছে বলে তারা দাবী করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই এমরান হোসেন জানান, ভিকটিমের পিতা লিখিত আবেদন করেন, গ্রামবাসী ও পরিবারের সদস্যরা কেউই কোন অভিযোগ করেননি, ভিকটিম ও তার পিতা ভাল মানুষ বলে উল্লেখ করে লাশ ময়না তদন্ত না করার অনুরোধ জানালে পোস্ট মটেম না করেই লাশ রেখে আসি।
তৎকালীন ওসি বিশ্বজিৎ কুমার জানান, ঘটনার দিন সংবাদ দিলে ইউডি মামলা হয়। এসআই এমরান ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট সংগ্রহ করে আমাকে ঘটনা জানালে সার্কেল স্যারকে জানাতে বলি। স্যার জানার পর পিতা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্ধি ও লিখিত আবেদন পেয়ে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দেয়া হয়। পরবর্তীতে মোস্তাকিমের চাচাত ভাই বলে মোস্তাকিমকে তার পিতা হত্যা করেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারি মোস্তাকিনের পিতার সাথে চাচাত ভাইয়ের (রাজ্জাকের ভাইপো) জমাজমি নিয়ে গোলযোগ আছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন বলে তিনি জানান।
Leave a Reply