সারাদেশে ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। ‘ছাত্র-জনতার খুনিদের প্রতিহত করুন’ ব্যানারে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। মিছিল শেষ হলে সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা শিক্ষার্থীদের জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় শিক্ষকরা তাদের প্রতিহত করেন এবং নিরাপত্তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন। তবে এ ঘটনায় দুজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এ
সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষকদের এই কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগে থেকেই সাদা পোশাকে অবস্থান নিতে থাকে পুলিশ সদস্যরা। কর্মসূচি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দু’একজন করে শিক্ষার্থীদের টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে পুলিশ সদস্যরা। শিক্ষকরা তা দেখামাত্রই দৌঁড়ে গিয়ে তাদের বাধা দেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। তবে শিক্ষকদের বাধায় ক্যাম্পাস থেকে কোনো শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যেতে পারেনি পুলিশ সদস্যরা। শিক্ষকরা ঢাল হয়ে শিক্ষার্থীদের কাজলা গেটে নিয়ে গিয়ে নিরাপদে বের করে দেন।
শিক্ষক ও পুলিশের ধস্তাধস্তির সময় সাংবাদিকদের ওপরও চড়াও হয় পুলিশ। দৈনিক সমকাল পত্রিকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি অর্পণ ধর ও দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের রাজশাহী প্রতিনিধি আমজাদ হোসেনকে তুলে নিতে টানা-হেঁচড়া করে পুলিশ সদস্যরা। এ সময় মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও একজন গোয়েন্দা সদস্য এসে সমকাল প্রতিনিধিকে মুক্ত করেন।
এ বিষয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের রাজশাহী প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থী আটকের লাইভ চলাকালে পুলিশ আমার ওপর চড়াও হয় পুলিশ। আমার মোবাইল কেড়ে নেয়। ওই সময় আমাকে কিল-ঘুষি মারে এবং আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বারীন্দ্র মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী লাবণ্য বলেন, আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে মৌন মিছিলে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু সিভিল ড্রেসে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদেরকে আঘাত করে। আমার ভাইদের বিনা কারণে জোর করে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। আমাদের অপরাধ কি? আমরা কোনো মামলার আসামি না তাহলে কেন আমাদের আটক করবে। আমরা সমন্বয়কদের সঙ্গে কথা বলে আজকের এই মৌন মিছিলে এসেছিলাম।
এ সময় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন পুলিশদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের কাছে শিক্ষার্থীদেরকে আটক করার কোনো নথিপত্র নেই। সন্দেহের বশে কাউকে আটক করা অন্যায়। আপনারা এমনটা কখনোই করতে পারেন না। এর পরে যদি কোনো ছাত্রের গায়ে হাত পড়ে এবং আমার সহকর্মীদের গায়ে আঘাত লাগে, এটা কিন্তু আমরা মেনে নিব না। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসবে, তাই বলে পুলিশ প্রশাসন ওপেন কোনো শিক্ষার্থীকে এভাবে তুলে নিতে পারে না। তাদের নামে কোনো মামলা নেই যে তারা আসামি। আপনারা আপনাদের কাজ করুন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, আমরা পুলিশ প্রশাসনকে ক্যাম্পাসের বাহিরে অবস্থান করতে বলি। তবে যদি কোনো বহিরাগত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে তাহলে তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। বর্তমানে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আমার শিক্ষার্থীরা বাসায় আছে। কোনো ছাত্রের হয়রানি হোক আমরা এমনটা কখনোই চাই না। আমরা জানতে পেরে সকল শিক্ষার্থীকে কাজলা গেইট পর্যন্ত নিয়ে গাড়িতে তুলে দিয়েছি।
Leave a Reply