রঘুনাথ খাঁ: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর
প্রাণকৃষ্ণ স্মারক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটর অপারেটর ও
আয়া পদে ত্রæটিপূর্ণ নিয়োগ বোর্ডকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি
মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিয়োগ বন্ধে বিদ্যালয় পরিচালনা
কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য সমীর কুমার মÐল গত ৫ মে ও
নিয়োগ পাওয়ার দাবিতে শ্যামনগরের পূর্ব দুর্গাবাটি
গ্রামের মধুসুধন মÐল ও বিষ্ণুপুরের তাপসী সরদার যৌথভাবে গত
১৯ মে কালিগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে যথাক্রমে এসব মামলা দেঃ
১১৯/২৪ ও (দেঃ ১৬৫/২৪) দায়ের করেন। মামলা দুটি বিবাদীদের
বিরুদ্ধে সমন জারির অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিকে নিয়োগ পেতে আদালতের শরণাপন্ন হলেও মুকুন্দ
মধুসুধনপুর চৌমুহুনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আকবর
আলীকে নিয়ে রেজুলেশন খাতাসহ এক বা একাধিক সদস্যকে
ম্যানেজ করে বাড়ি বাড়ি ছুটছেন মধুসুধন ও তাপসী। এ ছাড়াও
একজন সাংসদকে দিয়ে নিয়োগ দেওয়ার জন্য একজন সদস্যকে
চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
বিষ্ণুপুর প্রাণকৃষ্ণ স্মারক বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা
কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য সমীর কুমার মÐল জানান, চলতি
বছরের ৯ ফেব্রæয়ারি একজন ল্যাব এসিসট্যান্ট কাম কম্পিউটর
অপারেটর এবং একজন আয়া পদে নিয়োগ বোর্ড বসানো
হয়।বোর্ডে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাকী বিল্লাহর
পক্ষে তার প্রতিনিধি একাডেমকি সুপারভাইজার সাইফুল ইসলাম
উপস্থিত ছিলেন। যদিও পরীক্ষা শেষে তাৎক্ষণিক বাছাইয়ে ল্যাব
এসিসট্যান্ট কাম কম্পিউটর অপারেটর পদে শ্যামনগরের পুর্ব
দুর্গাবাটি গ্রামের মধুসুধন মÐল ও আয়াপদে তাপসী সরদারকে
মনোনীত করে সাইফুল ইসলাম বাদে অপর চারজন শীটে সাক্ষর করে
চলে যান। শিক্ষা অফিসারের নিয়োগ বোর্ডে না থাকায় তার
সাক্ষর পরে নেওয়ার চেষ্টার ঘটনায় ১১ সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটিতে
বিরোধ তৈরি হয়। মধুসধন মÐলকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না মর্মে
অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর কুমার দাশ ও
উপজেলা শিক্ষা কর্মকতা বাকী বিল্লাহ গত ২৭ ফেব্রæয়ারি
সকালে বিদ্যালয়ে তদন্তে আসেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
বিস্তারিত জেনে পরিচালনা পরিষদের সভা ডেকে নিয়োগ দেওয়া
সম্ভব হলে তা দ্রæত চুড়ান্ত করার নির্দেশ নতুবা কেন নিয়োগ
দেওয়া সম্ভব হবে না তা তাকে বিস্তারিত লিখে জানানোর জন্য বলে
যান। এরপরই দাতা সদস্য গোবিন্দ লাল সরদারের ভাই বিদ্যালয়ের
করণিক কাম লাইব্রেরিয়ান রাধ্যেশ্যাম সরদার রেজুলেশন খাতাসহ
বিভিন্ন কাগজপত্র প্রধান শিক্ষকের কাছে না দিয়ে সভাপতির
কথামত নিজের আলমারিতে রেখে দেন। এরপর থেকে ওই নিয়োগ বৈধ
করতে সভাপতি খুলনার একটি কলেজের শিক্ষক ও খুলনায়
বসবাসকারি দেবদাস মÐল, গোবিন্দ লাল সরদার তার ভাই
র্যাধেশ্যামকে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। নিয়োগ বোর্ডে
উপস্থিত না থাকার পরও পরবর্তীতে ফলাফল শীটে সাক্ষর করা উপজেলা
মধ্যিমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাকী বিল্লাহ, প্রাথী মধুসুধন
মÐল, সভাপতি দেবদাস মÐল, দাতা সদস্য গোবিন্দ লাল সরদার প্রধান
শিক্ষককে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। দাতা সদস্য
গোবিন্দ লাল সরদার সাবেক এক সভাপতির নাম ভাঙিয়ে
কম্পিউটার অপারেটর পদে মধুসুধন মÐল এর কাছ থেকে আট লাখ ও
স্থানীয় বাসিন্দা এক প্রার্থীর কাছ থেকে নয় লাখ ও আয়া পদে
তাপসী সরদারের কাছ থেকে আট লাখ টাকা নিয়ে পরে সভাপতির
সঙ্গে ভাগ বাটোয়ারার মাধ্যমে নিয়োগ বোর্ড বৈধ করার চেষ্টা
করে যাচ্ছেন। অভিভাবক সদস্য হীরা রাণী রায়সহ কমিটির সাত জন্য
সদস্য ঘুষের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে
নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবি করতে থাকেন। এ নিয়ে
বিদ্যোৎসাহী সদস্য সমীর কুমার মÐল নিয়োগ বন্ধের দাবিতে
সভাপতিসহ ২৩জনকে বিবাদী করে করে গত ১৫ এপ্রিল কালিগঞ্জ
সহকারি জজ আদালতে একটি মামলা দেঃ-১১৯/২৪) দায়ের করেন। ৭
মে সকালে মধুসুধন মÐল প্রধানর শিক্ষকের বাড়িতে যেয়ে তাকে
নিয়োগ না দিলে ফল ভাল হবে না বলে হুমকি দেন।
সমীর কুমার মÐল আরো জানান, গত ১১ মে সকাল সোয়া ১০টায়
বিদ্যালয়ের করণিক রাধেশ্যাম সরদার প্রধান শিক্ষককে ৭ মে তারিখ
সভাপতি সাক্ষরিত একটি চিঠি ধরিয়ে দেন। তাতে চিঠিতে
সাক্ষর করা দিন থেকে সাত দিনের মধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে
পরিচালনা পরিষদের সভা আহবানের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক
বিষয়টি নিয়ে সভাপতিকে লিখিত জবাব দেন। সভাপতির
অভিযোগক্রমে কোন প্রকার এজেÐা ও অভিযোগের কপি ছাড়াই
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাকি বিল্লাহ স্বাক্ষরিত
একটি চিঠি প্রধান শিক্ষক ১৪ মে বিকেলে পান। প্রধান
শিক্ষককে ১৬ মে বৃহষ্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় তাকে উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে হাজির থাকতে বলা হয়।
একপর্যায়ে ১৫ মে রাতে অজয় কুমার মÐল কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের
নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শেখ মেহেদী হাসান
সুমনের সঙ্গে দেখা করে বাড়ি ফেরার সময় মধুসুধন মÐল, সভাপতি
দেবদাস মÐল, গোবিন্দ লাল মÐলসহ কয়েকজনের হাতে লাঞ্ছিত হন
বলে অভিযোগ ওঠে। অজয় মÐলকে ১৬ মে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে
ভর্তি করা হয়। মধুসুধন ও তাপসীর চাকরি না হলে নিয়োগ
বোর্ডের তিন সদস্য এর জন্য ঘুষ বাবদ খরচ ১০ লাখ টাকাসহ
গোবিন্দ লাল সরদারের তিন প্রার্থীর কাছ থেকে নেওয়া ২৫ লাখ
টাকা তার (অজয়) কাছ থেকে আদায় করার হুমকি দেওয়া হয়।
এদিকে মঙ্গলবার মুঠোফোনে এক সাক্ষাৎকারে হীরা রানী রায়
সাংবাদিকদের জানান, সোমবার সকালে দাতা সদস্য গোবিন্দ লাল
সরদার তার বাড়িতে এসে মধুসুধন ও তাপসীকে নিয়োগ দেওয়া
সংক্রান্ত এক রেজুলেশন খাতায় সাক্ষর করাতে এসে তাকে নগদ চার
হাজার টাকা ও বিকাশের মধ্যেমে সভাপতি দেবদাস মÐল তাকে
পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়ে কথা বলেন। মিটিং হয়নি জেনেও
অভাবের তাড়নায় তিনি সাক্ষর করে দেন। তবে নিয়োগ বোর্ড
অসম্পূর্ণ হওয়ায় নিয়োগ বাতিল করা সংক্রান্ত জেলা প্রশাসক ও
জেলা শিক্ষা অফিসারসহ চার কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো
একটি চিঠিতে অন্য ছয় জনের সঙ্গে তিনিও সাক্ষর করেছিলেন
বলে জানান হীরা রাণী রায়।
তবে বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও অভিভাবক সদস্য জাহাঙ্গীর আলম
বলেন, প্রধান শিক্ষককে মোবাইলে না পেয়ে তার সঙ্গে কথা
বলেছিলেন এক সাংসদ। তিনি এ নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে তার
সঙ্গে কথা বলেছিলেন। মুকুন্দপুর চৌমুহুনীর শিক্ষক আকবর আলী,
মধুসুধন মÐল ও তাপসী সরদার রেজুলেশন খাতা নিয়ে তার কাছে
সাক্ষর করাতে এসেছিলেন।
একইভাবে শিক্ষক কল্যান সরকার, অভিভাবক সদস্য আব্দুর রশিদ ও
হাসান জানান, বুধবার মুকুন্দপুর চৌমুহুনীর শিক্ষক আকবর আলী,
মধুসুধন মÐল ও তাপসী সরদার রেজুলেশন খাতা নিয়ে তার কাছে
সাক্ষর করাতে এসেছিলেন। তবে একটি বিদ্যালয়ের রেজুলেশন খাতা
বিদ্যালয় বহির্ভুত লেঅকজনের হাতে কিভাবে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন
করলে তারা উত্তর দিতে পারেননি।
এ ব্যাপারে বিষ্ণুপুর প্রাণকৃষ্ণ স্মারক বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়
পরিচালনা কমিটির সভাপতি দেবদাস মÐল ও দাতা সদস্য গোবিন্দ
মÐলের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে মধুসুধন মÐল বলেন,
চাকুরির বয়স শেষ তাই মামলা করার পরও করণিক রাধেশ্যাম, গোবিন্দ
লাল সরদার ও সভাপতির আশ্বাস নিয়ে শেষ চেষ্টা করে দেখছেন।
কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শেখ মেহেদী
হাসান সুমন বলেন, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। বৈধ পন্থায় যোগ্য
প্রার্থীর নিয়োগ চান তিনি। বিষয়টি নিয়ে তিনি সাংসদ
জিএম আতাউল হক দোলনের সাথে কথা বলবেন।
Leave a Reply