আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে রুপিতে বাণিজ্যিক লেনদেন শুরু হয়েছে মঙ্গলবার (১১ জুলাই)। এর মধ্যে দিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্যের মুদ্রা বহুমুখীকরণের নতুন যুগের সূচনা হলো। এদিন ২৮ মিলিয়ন রুপি লেনদেনের মধ্যে দিয়ে আমদানি-রফতানি শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে প্রথম রুপিতে রফতানি চালান পাঠিয়েছে বগুড়ার তামিম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। রফতানি চালানের মূল্য ছিল ১৬ মিলিয়ন রুপি। এই আমদানির ঋণপত্র খোলে ভারতের আইসিআইসিআই ব্যাংক। আর রফতানিকারকের ব্যাংক ছিল স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই) বাংলাদেশ শাখা। অনুষ্ঠানে অতিথিদের কাছ থেকে রফতানি নথি গ্রহণ করেন তামিম এগ্রোর চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আলী।
এদিকে রুপিতে দেশের প্রথম আমদানি করেছে নিটল-নিলয় গ্রুপ। আমদানি চালানের মূল্য ১২ মিলিয়ন রুপি। আমদানির ঋণপত্র খোলে এসবিআই এর ঢাকা অফিস। অনুষ্ঠানে অতিথিদের কাছ থেকে আমদানি নথি গ্রহণ করেন নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মতলুব আহমেদ।
আমদানি ও রফতানির চালানগুলো হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংক।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রুপিতে লেনদেনের এই উদ্যোগ দেশের আমদানিকারকদের কিছুটা স্বস্তি দেবে। তারা প্রতিবেশী দেশ থেকে পণ্য কিনতে রুপিতে এলসি খুলতে পারবেন। ফলে ডলারের ব্যবহার কিছুটা কমবে।
উদ্বোধনী এই অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন। ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, আজ থেকে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন সুবিধা চালু হলো। তার আশা, এই পদ্ধতি থেকে উভয় দেশই লাভবান হবে।
এদিকে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে টাকা-রুপির ডুয়েল কারেন্সি কার্ড চালু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, ডুয়েল কারেন্সি কার্ড চালু হলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনের খরচ কমবে। গভর্নর বলেন, ডুয়েল কারেন্সি কার্ড প্রায় প্রস্তুত। সেপ্টেম্বর থেকে এটি চালু হবে। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক) গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের সঙ্গে আমি বেঙ্গালুরুতে দেখা করে দুটি প্রস্তাব দেই। এর একটি ছিল রুপিতে বাণিজ্য। এই বাণিজ্যের একটি মনস্তাত্ত্বিক দিকও আছে। কারণ ভারতীয়রা যখন তাদের নিজেদের মুদ্রায় (বাংলাদেশের) পণ্য কিনবে, তখন সেটা তাদের নিজ দেশের পণ্য বলেই মনে করবে। এতে আমাদের বাণিজ্য বাড়বে।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ভারত বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাণিজ্য অংশীদার। বাংলাদেশ সেখান থেকে বছরে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে। আর ভারতে রফতানি করে ২০০ কোটি ডলারের পণ্য। দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এই আলোচনা চলছিল। ব্যবসায়ীরাও এর দাবি করে আসছেন অনেক দিন ধরে। এবার তা বাস্তব রূপ পেলো। এখন ডলারের পাশাপাশি রুপিতেও বাণিজ্য হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সোনালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক ও ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে (এসবিআই) প্রতিবেশী দেশটিতে তাদের অংশীদারদের সঙ্গে নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট (এমন অ্যাকাউন্টে যেকোনও ব্যাংক অন্য ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থ জমা রাখে) খোলার অনুমতি দিয়েছে।
Leave a Reply