ন্যাশনাল ডেস্ক : সম্প্রতি ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোট ব্রিকসের সম্প্রসারণ নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। আর এই আলোচনায় বাংলাদেশও আছে। এই জোটের মধ্যে আর অংশ নিতে পারে ১০টি প্রভাবশালী দেশ। যা চূড়ান্ত হতে আগামী আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে। এই জোট সম্প্রসারণের মূল লক্ষ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমানো। বর্তমানে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রীয় বিশ্বব্যবস্থা বিরাজমান তার থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে অনেক দেশ। বিশেষ করে চীন, রাশিয়া ও তুরস্ক।
পাঁচ দেশের অর্থনৈতিক জোট (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) ব্রিকসে যোগ দিতে যাচ্ছে নতুন আরও ১০টি দেশ। আগামী ২২ থেকে ২৪শে আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা। এই সম্মেলন সামনে রেখে এ বছরেই নতুন এ ১০টি দেশ যুক্ত হতে পারে এবং ব্রিকস মুদ্রা গ্রহণ করতে পারে। এতে ব্রিকস জোটের সম্ভাব্য নতুন সদস্যরাও অংশ নিতে পারে বলে জানাচ্ছে নর্থ আফ্রিকা পোস্ট।
কয়েক মাস ধরে ব্রিকসের সম্প্রসারণ নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। এ সময়ে নতুন নতুন দেশ এই ব্লকে প্রবেশের জন্য আবেদন করছে বা আগ্রহ ও সমর্থন দেখাচ্ছে। ব্রিকসে যেসব দেশ যোগ দেয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে সেগুলো হলো- বাহরাইন, জিম্বাবুয়ে, কিউবা, কঙ্গো, কমোরোস, গ্যাবন, গিনি-বিসাউ, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও তিউনিসিয়া।
যদিও এই দেশগুলো ব্রিকস জোটে যোগ দেয়ার জন্য প্রস্তুত, তবে তাদের আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া ব্রিকসের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে জোট সম্প্রসারণের আলোচনা করতে হবে। সম্ভবত, ব্রিকস নতুন দেশগুলোর জন্য নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এনডিবি) মতো একটি নতুন সংস্থা গড়ে তুলতে এবং এটিকে ব্রিকস+ বলে অভিহিত করা হবে।
নর্থ আফ্রিকা পোস্টের খবরে বলা হয়, এই জোটটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অর্থ লেনদেনের জন্য ডলারের বিরুদ্ধে একটি নতুন মুদ্রা চালু করার পরিকল্পনা করছে। এই পদক্ষেপটি অন্য পূর্বাঞ্চলীয় দেশগুলোকে তাদের ব্লকে আকৃষ্ট করছে। কারণ তারা ডলারের উপর নির্ভরতা বাদ দিয়ে স্থানীয় মুদ্রা প্রচলন করতে চায়।
প্রতিষ্ঠাতা পাঁচটি দেশকে সামনে রেখে ব্রিকসের নতুন সব সদস্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই সম্ভবত এই জোট গঠন হবে।
এটা স্পষ্ট যে, ব্রিকস সদস্য দেশগুলোর সম্পদ এবং ক্ষমতা বাড়ছে। এ ছাড়া নতুন দেশগুলো ব্রিকসে যোগদান করলে একটি সম্ভাব্য নতুন মুদ্রা চালু হবে। এতে জোটের প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। ডলারের নির্ভরতা কমবে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকামী দেশগুলোর জন্য একটি অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
এদিকে ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু হওয়া এই ব্রিকসে যোগ দিতে চায় বাংলাদেশ। জানা গেছে, এ জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে বাংলাদেশ। ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে নতুন সদস্য নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
বেশ কিছুদিন ধরেই ব্রিকসে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন এ নিয়ে একাধিকবার কথা বলেছেন। বাসসের খবরে বলা হয়, গত ১৪ই জুন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ শিগগির ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে পারে। জেনেভায় প্যালেস ডি নেশনসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠককক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার মধ্যে বৈঠকে বিষয়টি (ব্রিকসের সদস্যপদ) উত্থাপিত হয়েছে।
বর্তমানে ব্রিকসের নেতৃত্বে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্রিকসে যোগ দিতে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন জানানোর কথা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গত মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক আবেদন পাওয়াসহ নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে কথা বলেছেন। বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, এক ব্রিফিংয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তির পক্ষ থেকে ব্রিকসে যোগ দিতে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। জবাবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, বিকাশমান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্রিকস বহুপক্ষীয়তা সমুন্নত রাখা, বৈশ্বিক শৃঙ্খলের সংস্কারকে গতিশীল করা এবং উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশের প্রতিনিধিত্ব ও বক্তব্য তুলে ধরতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চীন ব্রিকসের সম্প্রসারণকে এগিয়ে নিতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং ব্রিকসের বড় পরিবারে আরও সমমনা অংশীদারদের যুক্ত করতে প্রস্তুত রয়েছে। মাও নিং এ সময় আরও বলেছেন, ব্রিকসের সম্প্রসারণের বিষয়ে জোটের পাঁচ সদস্য একটি রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছেছে। আর বাংলাদেশকে ব্রিকস জোটে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত চীন।
২০২১ সালের ২রা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্রিকস-ব্যাংকের সদস্য হয়। এই ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক নাম দ্য নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি), যা ব্রিকস সদস্যরা প্রতিষ্ঠা করেছিল ২০১৫ সালে। মূলত ২০২০ সালের শেষের দিকে এনডিবির পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের নতুন সদস্য নেয়া নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল।
Leave a Reply