ন্যাশনাল ডেস্ক : ব্যবসায়ীদের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকেই বাজারে কার্যকর হয়েছে চিনির নতুন দাম। রাজধানীর বাজারভেদে প্রতিকেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকার ওপরে। যা সরকার নির্ধারিত দামের থেকে ৩০ টাকা এবং ব্যবসায়ীদের ঘোষিত দামের থেকেও ১০ টাকা বেশি। এছাড়াও বাজারে সরবরাহ সংকটে নতুন দামে মিলছে না ভোজ্যতেল।
চিনির দাম নির্ধারণে ট্যারিফ কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করেই গত সোমবার নতুন দাম কার্যকরের ঘোষণা দেয় সুগার রিফাইনার অ্যাসোসিয়েশন। কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবসায়ীরা এই দাম বাড়িয়েছেন। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেছেন, চিনির দাম নিয়ে ঈদের আগে কোনো আলোচনা হবে না। যেহেতু আমদানি ব্যয় বেড়েছে, ঈদের পর সে অনুযায়ী দেশের বাজারে দাম সমন্বয় করা হবে। এছাড়াও নির্ধারিত মূল্যে চিনি বিক্রি হচ্ছে কিনা তা তদারকির জন্য ভোক্তা অধিকারকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
চিনির পাশাপাশি বাজারে হঠাৎ সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে বোতলজাত সয়াবিনের। রাজধানীর বেশির ভাগ দোকানেই মিলছে না নতুন দামে ১ ও ২ লিটারে বোতলজাত সয়াবিন। কিছু কিছু দোকানে নতুন দামে ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হলেও এখনো বেশিরভাগ দোকানে আগের দরে বিক্রি হচ্ছে ১, ২ ও ৫ লিটারের তেল।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এ সপ্তাহের শুরুতে অর্থাৎ গত শুক্রবারে নতুন দামে তেলের সরবরাহ শুরু হলেও পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে গত সোমবার থেকেই ১ ও ২ লিটারের কোনো তেল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আগের রেটে অর্থাৎ ১৯৯ টাকা দামে ১ লিটারের বোতল বিক্রি হতে দেখা গেছে। এর আগে গত ১১ জুন লিটারে ১০ টাকা কমিয়ে নতুন দাম ঘোষণা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর প্রায় ১ সপ্তাহ পরে বাজারে এই দরে তেল বিক্রি শুরু হলেও বর্তমানে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা।
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের ব্যাপক মূল্য হ্রাসে দেশের বাজারে দাম কামানো হয়েছিল। বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের পর্যালোচনার ভিত্তিতেই গত ১১ জুন লিটারে ১০ টাকা দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই ধারাবাহিকতায় ঈদের আগে আরও একবার দাম কমানো হতে পারে। আমাদের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা প্রায় শেষ। কিন্তু কবে সে ঘোষণা দেওয়া হবে তা মন্ত্রণালয়ের উপর নির্ভর করছে। এছাড়াও বাজারে দাম কার্যকর হচ্ছে কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব ভোক্তা অধিকারের।’
সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলেন, এই মুহূর্তে আগের তেলের দামই কার্যকর হচ্ছে না তার মধ্যে আবার দাম কমানো হলে বাজারে কোনো তেল পাওয়া যাবে না। মূলত ঈদকে ঘিরে বাজারে তেল ও চিনির সংকট চরমে ঠেকেছে বলেও জানান তারা। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকারকে নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েই চলেছে। যার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য ট্যারিফ কমিশনকে বলা হয়েছে। তারা জানিয়েছে দেশের চিনির দামের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মূল্যের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। সেটা আমরা সমন্বয় করব।’
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চিনির ওপর যে শুল্কহার নির্ধারণ করা আছে তা কমানো অথবা ছাড় দেওয়ার বিষয়ে আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করব। এটি করা হলে চিনির দাম কিছুটা কমানো সম্ভব হবে।’
এ সময় ভোজ্যতেলের বিষয়ে টিপু মুনশি জানান, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমানোর সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে দাম কমিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং হ্রাসকৃত মূল্যে তেল বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বাজারে সে দামে বিক্রি হচ্ছে কিনা তার জন্য ভোক্তা অধিকারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে চিনি নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হবে।’
এ বিষয়ে খুচরা বিক্রেতারা জানান, যদি সরবরাহকারীরা বাড়তি দামে রশিদসহ চিনি বিক্রি করেন তাহলেই বাজারে প্রায় সবাই চিনি বিক্রি করবেন। যদি রশিদ না দেওয়া হয় এবং ভোক্তা অধিকার অভিযান পরিচালনা করে সে ক্ষেত্রে বাজারে ঝুঁকি নিয়ে কেউ চিনি বিক্রি করবে না। সাধারণত ঈদসহ দেশের প্রধান প্রধান উৎসবে চিনির চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪গুণ বেড়ে যায়। ফলে এ সময় পণ্যটির বিক্রি বাড়ে। মূলত ঈদের এই চাহিদাকে পুঁজি করে বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিতে একটি চক্র বাজার অস্থিতিশীল করছে বলেও জানান তারা।
Leave a Reply