জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল – জাসদ তার প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদযাপনের অংশ হিসেবে এবছর ১৭ অক্টোবর দেশব্যাপি লালন দিবস পালনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ কর্মসূচি দলের অভ্যন্তরে ব্যাপক আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে। লালনের বাণির ব্যাপক প্রচারের জন্য কেন্দ্রীয় উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপি অনলাইন ক্যাম্পেইন পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু যারা জাসদকে মোটে সহ্য করতে পারে না, তারা এতে হায় হায় করে ওঠলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও চায়ের আড্ডায় তাদের জাসদ প্রেম উথলে ওঠলো। তারা আফসোস করতে লাগলো, জাসদ শেষ; জাসদ মার্কসবাদ থেকে এক দৌড়ে চলে গেছে লালনবাদে; জ্ঞানের ভাব দেখিয়ে একে কেউ কেউ বলেছে বস্তুবাদ ছেড়ে জাসদের ভাববাদি যাত্রা শুরু। বলা বাহুল্য, এসব লোক না বোঝে মার্কস, না বোঝে লালন, না বোঝে জাসদ; এদের না আছে বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে কোন বোঝাপড়া; সর্বোপরি না আছে সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান। সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের বিষয়টিতে তাকানো যাক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণভাবে সাহিত্য ও সঙ্গীতসমেত নন্দন-সংস্কৃতি চর্চা করেনা। তবে সরকারিভাবে রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তি উদযাপন করা হয়ে থাকে এখনও। লালনের আখড়াতেও সরকারি আয়োজনে অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। দেশে একসময় ব্যাপকভাবে রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত স্মরণে বিবিধ সংগঠন-প্রতিষ্ঠান অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করতো। বাঙালি সংস্কৃতি এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের কৃতি ব্যক্তিত্বদের স্মরণ করার মধ্যে কোন সমস্যা বা আপত্তি থাকা উচিত নয়। এক্ষেত্রে রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত মার্কসবাদি না লালনবাদি অথবা বস্তুবাদি না ভাববাদি সেটা বিবেচ্য নয়। প্রসঙ্গত মনে রাখা দরকার, দেশ-বিদেশের রাজনীতি-শিল্প-সাহিত্যের অনেক কৃতি ব্যক্তিত্বকে জাসদ বা জাসদের মতো দলগুলো স্মরণ করে, এবং এসব ব্যক্তিত্বের খুব অল্প সংখ্যকই মার্কসবাদ বা মার্কসিয় দর্শন দ্বান্দ্বিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদ চর্চা করেন। সুতরাং জাসদের লালন-চর্চা একটি সাধারণ ব্যাপার— এটা নিয়ে যারা ব্যঙ্গোক্তি করছে তারা নিজেদের কাণ্ডজ্ঞানহীনতা প্রদর্শন করে হাসি ও করুণার পাত্র হচ্ছে। এবারে আসা যাক বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে লালন দিবস পালনের বিষয়ে। বাংলাদেশে এখন একটি যুদ্ধ-পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এক পক্ষে আছে জাসদ ও আওয়ামী লীগসমেত মুক্তিযুদ্ধের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো। অন্য পক্ষে আছে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিকাণ্ড-লুটপাটে নিয়োজিত অপশক্তি জামাত ও জামাতের প্রধান রাজনৈতিক-আদর্শিক মিত্র বিএনপি; আদর্শিকভাবে এদের সাথে আরো আছে হেফাজত-হিজবুতের মতো জঙ্গিরা। মধ্যপন্থার নামে যারা দূরে আছে, তারা ধিরে ধিরে তাদের স্বরূপ প্রকাশ করছে ও বিএনপি জোটের পক্ষের রাজনীতি চর্চা করছে। বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থি জঙ্গিরা সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা দিয়েছে। এর আগে তারা বাধা দিয়েছে বাউল-ভাস্কর্য স্থাপনে। ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা দিয়ে তারা কেবল সৃজনশীল শিল্পকর্মের বিরোধিতা করেনি, তারা জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-জীবনবোধ-জাতীয়তাবাদকে পরাভূত করতে চেয়েছে। জাসদ একদম শুরু থেকে এ বিষয়ে আওয়ামী দোদুল্যমানতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এদেরকে শক্তভাবে মোকাবেলার প্রশাসনিক পদক্ষেপ দাবি করেছে এবং সভা-সমাবেশ-বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে এদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অবস্থান বজায় রেখেছে। মনে রাখতে হবে, জাসদের অপরিমেয় পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে ২০০১ সাল পরবর্তীতে ১৪ দল গঠিত হয়েছে দক্ষিণপন্থি রাজনৈতিক বিপদ মোকাবেলা করতে। দক্ষিণপন্থার বিপদ মোকাবেলার বিষয়টিকে জাসদ কেবল রাজনৈতিকভাবে দেখছে না; দেখছে আরো ব্যাপক বিস্তৃতিতে। জঙ্গি দক্ষিণপন্থার একটি সাংস্কৃতিক পশ্চাদভূমি রয়েছে, আর তা হচ্ছে সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা। সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতার ভূমিতে পাল্টে যাচ্ছে মানুষের ভাষা-পোশাক-চালচলন-জীবনযাপন, তার আশ্রয়ে রোপিত হচ্ছে ধর্মান্ধতা ও ধমীর্য় অসহিষ্ণুতার বীজ, আর তাই জন্ম দিচ্ছে রাজনৈতিক ইসলাম ও জঙ্গিবাদ। জাসদ সেজন্য সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি সাংস্কৃতিক সংগ্রামের উপর জোরারোপ করছে বেশ কয়েক বছর ধরে। জাসদের জাতীয় ও কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকগুলো সভার সিদ্ধান্তে তা প্রতিপলিত। দীর্ঘমেয়াদি সাংস্কৃতিক সংগ্রামের অংশ হিসেবে জাসদ বাঙালির স্মরণীয় বরণীয় ব্যক্তিত্ব ও তাঁদের শিক্ষা প্রচারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। তার অংশ হিসেবে লালন দিবস পালন অযৌক্তিক কিছু নয়। ব্যাপক বিস্তৃত সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতার আগ্রাসন জাসদের মিত্র আওয়ামী লীগকেও গিলে ফেলছে প্রায়। জামাতের সাথে মিলেমিশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও যখন গ্রামে গ্রামে বাউলদের আখড়া ভেঙে দেয়, তাঁদের উপর হামলা করে, তাঁদের চুল-দাঁড়ি-গোঁফ কেটে দেয়, মসজিদে জোর করে ধরে নিয়ে গান না গাইতে তওবা করায়— জাসদ তখন প্রতিবাদ জানায়। জাসদ প্রতিবাদ জানায় বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে, রাজপথে মিছিল করে, সংসদে আলোচনা করে ও প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করে। শরিয়ত বাউল ও রীতা বাউল পুলিশী হয়রানির শিকার হলে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপির কাছে প্রশ্নোত্তর পর্বে জবাবদিহিতা চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বাউলদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন; যদিও ধর্মানুভূতিতে আঘাত বিষয়ে তার বক্তব্য ছিল অস্বচ্ছ ও অগ্রহণযোগ্য— তার বক্তব্য থেকে মনে হয়নি একজন প্রধানমন্ত্রী কথা বলছেন; মনে হচ্ছিল কথা বলছিলেন সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতায় আক্রান্ত একজন সাধারণ মুসলিম নাগরিক; তার বক্তব্যে বাউলদের সম্পর্কে চরম অজ্ঞতা প্রকাশিত হয়েছে। আজও জামাত ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যখন গ্রামে-গঞ্জে বাউলদের গান গাইতে বাধা দেয়, জাসদ নেতাকর্মীগণ তখন সশরীরে উপস্থিত থেকে বাউলদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। সুতরাং জাসদ এক দৌড়ে লালন বা বাউলদের কাছে চলে গেছে তা বলা যাবে না। জাসদ ঐতিহাসিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বাউল ও লালন অনুসারিদের সাথে আছে। এখন আসা যাক মার্কস ও লালন প্রসঙ্গে। মার্কসের জন্ম ১৮১৮ সালে, মৃত্যু ১৮৮৩ সালে। লালনের জন্ম ১৭৭৪ সালে, মৃত্যু ১৮৯০ সালে। ১৮১৮ সালে মার্কসের জন্মের আগে এবং ১৭৯৮ সালে লালনের গুরু সিরাজ সাঁইয়ের মৃত্যুর আগে লালন খেরকা পান। খেরকা পাওয়ার ঘটনাটি হলো একটি রাইটস অব প্যাসেজ বা উত্তরণের আচার— যখন থেকে বাউলগণ জাগতিক সকল চাওয়া-পাওয়ার উর্ধে উঠে মৃতপ্রায় জীবনযাপন করেন এবং কেবল ভিক্ষা করে জীবন পরিচালনা করেন। বাউল হিসেবে পরিপূর্ণ তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন ও গোপন জীবনাচারের মাধ্যমে নিজেকে ব্যবহারিক জীবনে যোগ্য প্রমাণ করতে পারলেই কেবল একজন বাউল খেরকা পান। এসব তথ্যের মাধ্যমে এখানে বলার চেষ্টা হচ্ছে যে মার্কসেরও আগে লালন সাম্যের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন, অনুশীলন বা প্রাক্সিসকে গুরুদ্ব দেন। উপরন্তু এখানে মনে রাখতেই হবে যে, সারা দুনিয়ার অ্যাকাডেমিক বা বিদ্যায়তনিক পরিমণ্ডলে মার্কসবাদের প্রধান সমালোচনা যেখানে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণবাদ বা কেবলমাত্র অর্থনীতিকে শ্রেণি ধারণা ও রাজনীতির প্রধানতম নিয়ামক ভাবা নিয়ে, সেখানে লালন ভেদ-বিভেদ-অসমতা-বৈষম্য-সহিংসতার অর্থনৈতিক ও অ-অর্থনৈতিক উভয় মাত্রার উপর জোর দিয়েছেন। এখানে পশ্চাত্য ও প্রাচ্যের পার্থক্য স্পষ্ট। পাশ্চাত্য সমাজে অর্থনৈতিক শ্রেণি যতোটা গুরুত্ব পেয়েছে, প্রাচ্যের সমাজে অর্থনৈতিক ভেদ-বিভেদ-অসমতা-বৈষম্য-সহিংসতার পাশাপাশি জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-গোষ্ঠিগত ভেদ-বিভেদ-অসমতা-বৈষম্য-সহিংসতাও গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে। প্রাচ্যে শ্রেণি বিভক্ত সমাজের মার্কসিয় বিশ্লেষণের সাথে সাথে অবশ্যই লালনের বিশ্লেষণও মানতে ও ব্যবহার করতে হবে। অতীতে যা করা হয়নি, তা এখন করতে হবে। সবশেষে তথাকথিত জ্ঞানগর্ভ বিষয়টিতে আসা যাক— বস্তুবাদ ও ভাববাদ বিষয়ে। এটা দর্শনের সবচেয়ে মৌলিক প্রশ্ন। বস্তু আগে, নাকি ভাব/চেতনা আগে— এ প্রশ্নের জবাব দিয়ে জগতের সকল দর্শনকে দুটো ভাগে ভাগ করা হয়। যারা মনে করেন চেতনা/ভাব আগে, তারা ভাববাদি। আর যারা মনে করেন, বস্তুজগত থেকে চেতনা/ভাবজগতের উদ্ভব, তারা বস্তুবাদি। মার্কস হেগেলের দ্বন্দ্ববাদকে গ্রহণ করেছেন নিজের বস্তুবাদ দিয়ে পরিমার্জন করে— তিনি দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের তাত্ত্বিক জনক। লালন নিজেও বস্তুবাদি; তিনি কোনো ধরনের অতিপ্রাকৃতিকতায় বিশ্বাস করতেন না। একজন যুক্তিশীল মানুষ হিসেবে লালন তাঁর সমস্ত চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছেন মানুষকে। মানুষের আরাধনা তাঁর কাছে প্রধান। ঈশ্বর বলতে তিনি কোন অতিপ্রাকৃতিক সত্তায় বিশ্বাস করেননি; মানুষ দেহের আকারের মধ্যে তিনি ঈশ্বর পেয়েছেন— ঈশ্বর অতিপ্রাকৃতিক বা স্বতন্ত্র কোনো সত্তা নয়। ঈশ্বরের মাধ্যমে নয়, বরং মানুষের মধ্যে ঈশ্বর জন্মেছেন। আর মানুষের জন্মকেও তিনি মাত্র একবারের জন্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ দেখতে পেয়েছেন— পুনর্জন্ম বা পুনরুত্থান তিনি নাকচ করেন। আত্মার প্রসঙ্গ টেনে এনেও কেউ কেউ লালনকে ভাববাদি বলতে পারেন। কিন্তু আত্মা লালনের কাছে কোন অতিপ্রাকৃত সত্তা নয়, বাইরের সত্তা নয়, দেহে আত্মার বাস। হ্যাঁ, লালন ঈশ্বর ধারণার ব্যবহার করেছেন, কিন্তু তা পরম অর্থে, যে পরমের বসবাস মানুষের দেহে। তার মানে, মানুষই পরম। এসব বানানো কথা নয়, লালনের অনেক অনেক গানে এগুলো সহজ-সরল ও রূপক-সাংকেতিক উভয় ভাষায় বর্ণিত রয়েছে। লালন ভাববাদি না বস্তুবাদি সে বিষয়ে সংশয় বা বিভ্রান্তি বা অজ্ঞতা দূর করতে তাঁর অনেক প্রাসঙ্গিক গানের মধ্য থেকে একটির কয়েক লাইন ব্যবহার করা যায়: তুমি, আপনি আল্লাহ ডাকো আল্লাহ বলে, আল্লাহ কে বোঝে তোমার অপর লীলে। লালনের দর্শন চিন্তা নিয়ে আরো অনেক আলোচনার রয়েছে, কিন্তু তা বর্তমান রচনার শিরোনামের বিষয়গত পরিধির মধ্যে না আনাই ভালো। লালন হচ্ছেন বাঙালি জাতির মহত্তম সৃজনশীল প্রতিভা ও প্রধানতম দার্শনিক। বাঙালির সংস্কৃতি, জীবনবোধ ও জাতীয়তাবোধ গঠন ও পরিশীলনে তাঁর অবদান সর্বাধিক। কিন্তু এভাবে তাঁর অবদান কখনো আলোচিত হয়নি। সেসব পরে আলোচনা করা যাবে। তবে আপাতত এখানে দুটো বিষয় বলে রাখা জরুরি। প্রথমত, সংখ্যালঘু শহুরে ও তথাকথিত শিক্ষিত নাগরিক সমাজের বাইরে তিনি অবস্থান করতেন। এ নাগরিক মানস মনে করে যে তারা বেশি জানে ও বোঝে। লালন গ্রামের লোক, আর গ্রামে থেকেও এবং তিরোধানের পরেও, তিনি বৃহত্তর জনগোষ্ঠির মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়— এভাবে তারা লালনকে মূল্যায়ন করে ও সার্টিফিকেট দিতে চায়। লালনকে বোঝার বৌদ্ধিক সক্ষমতা তাদের নেই। কিন্তু লালন নিজের পরিচয়েরই যখন কোন তোয়াক্কা করেন না, সেখানে এদের সার্টিফিকেটে তাঁর কী আসে যায়! দ্বিতীয়ত, বাংলার বাউলদের ও লালনকে নিয়ে যারা কাজ করেছে, তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাঁকে মূল্যায়নের ও তাঁর পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করেছে। বাউলদের ও লালনকে নিয়ে প্রকাশিত প্রায় সকল প্রচলিত বইই ভুল। এটাও বানানো কথা নয়। বাংলার বাউলদের মধ্যে প্রাজ্ঞজনগণ একমাত্র শক্তিনাথ ঝা রচিত বইগুলোকে গুরুত্ব দেন; অন্য সমস্ত রচনাকে তারা নাকচ করেন ভুল হিসেবে। বাউলগণ নিজেরা যেভাবে নিজেদের বোঝেন, সেটাই তো তাঁদের পরিচয়; অন্যরা কিভাবে তাঁদের পরিচয় নির্মাণ করলো তা তো বিবেচ্যই হতে পারে না। উপরের দুটো বক্তব্যের সাথে প্রাসঙ্গিক একটি বক্তব্য দিয়ে এ রচনা শেষ করা যায়। রাজনৈতিক ইসলামের ও জঙ্গিবাদের অনুসারীরা বাউলদের ও লালনকে ভালো বুঝতে পারে। এজন্যই তারা বাম-সমাজতন্ত্রি-কমিউনিস্ট ও এমনকি নাস্তিকদের চেয়েও বেশি ঘৃণা করে বাউলদের, লালনকে। এখান থেকেও যারা বোঝেনা বাউলগণ বা লালন আসলে কে, বাঙালি ও বাঙালি প্রগতিশীলদের কেন উচিত তাদের স্মরণ ও বরণ করার, তারা মূলত উপরে বর্ণিত ওই দুই শ্রেণির একটির প্রতিনিত্বি করেন। এদের জন্যই লালন বলেন: এসব দেখি কানার হাটবাজার। * জিয়াউল হক মুক্তা: জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। জাসদের মুখপত্র লড়াই-এর সম্পাদক।
Leave a Reply