নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি সয়াবিন ও পাম তেলের দাম সহনীয় রাখতে সরকার সব ধরনের উদ্যোগ নেবে। আজ সোমবার এ বিষয়ে ওই দুটি পণ্যের শুল্ক্ক ছাড় নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম জোরদার করা হবে। নিত্যপণ্য মজুত করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে সভার সভাপতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ তথ্য জানান। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, নিত্যপণ্য মজুত করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে ক্রেতাদের সুবিধার্থে সব ধরনের নিত্যপণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট, কর প্রত্যাহার করা যায় কিনা, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের অসুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম আরও জোরালো করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সারা বিশ্বে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে। তার প্রভাব আমাদের দেশে আসছে। রোজার মাসে অন্যান্য জিনিসের দামও বাড়তে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের সরবরাহ কিছু কিছু জায়গায় কমে যাচ্ছে। তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। ইউক্রেন, রাশিয়া থেকে আশা গম সরবরাহে অসুবিধা হতে পারে। সেটা কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়, সেটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
ভোজ্যতেল বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, এক বছর আগে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল এক হাজার ২৩৫ ডলার। পাম তেল প্রতি টন ছিল এক হাজার ৩২ ডলার। গত ৯ মার্চ প্রতি টন সয়াবিনের দাম উঠেছে এক হাজার ৯৩০ ডলার। আর পাম তেলের দাম হয়েছে এক হাজার ৮৯৭ ডলার। এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির মধ্যে তেল আমদানি করতে হচ্ছে। দেশে চাহিদার ১০ শতাংশও উৎপাদন হয় না। বলা যায়, পুরোটাই আমদানিনির্ভর। কাজেই পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা সকলেই উপলব্ধি করতে পারবেন। তিনি বলেন, রমজানের অতিরিক্ত চাহিদা বিবেচনা করে দ্রুত আমদানির ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সব পর্যায়ে প্রয়োজনীয় আমদানি উৎসাহিত করা হচ্ছে যাতে বাজার স্থিতিশীল থাকে। রোজায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনসাধারণ যাতে অসুবিধায় না পড়ে সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি আজ এ বিষয়ে একটা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আজ শুল্ক্ক প্রত্যাহার সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
উল্লেখ্য, হঠাৎ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, সারাদেশে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা, নিত্যপণ্যের অবৈধ মজুত, বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতাসহ নানা কারণে ক্ষুব্ধ সরকার। করণীয় নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গতকাল বৈঠকে বসেছিলেন সরকারের শীর্ষ পাঁচ মন্ত্রী।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, কৃষি সচিব সায়েদুর রহমান, ভূমি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, মহাপুলিশ পরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ। (দৈনিক সমকাল হতে সংগৃহীত)
Leave a Reply