1. faysal.ce@gmail.com : dakshinermashal :
  2. abuhasan670934@gmail.com : Hasan :
  3. sakalctc.bd@gmail.com : Nityananda Sarkar : Nityananda Sarkar
বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৩ পূর্বাহ্ন
১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
Latest Posts
📰ইসকন নিষিদ্ধ চেয়ে আইনি নোটিশ📰খুলনায় শহরে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ📰চরমোনাইর মাহফিল শুরু📰আশাশুনিতে ঝুঁকিহ্রাস কর্ম পরিকল্পনা অনুমোদনকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত📰চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের চাকরিতে পুর্ণরবহালের দাবিতে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন📰আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় শোকসভা ও সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত📰৩০ নভেম্বর জামায়াতের আমীরের আগমন উপলক্ষে সাতক্ষীরায় সংবাদ সম্মেলন📰শ্যামনগরে লিডার্সের আয়োজনে আন্ত:স্কুল নারী ফুটবল প্রতিযোগিতা📰সাতক্ষীরায় কেন্দ্রীয় আমীরের আগমন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন📰চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যাসহ দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী বামমোর্চার উদ্বেগ

বাম নেতাদের ভুল ভাঙছে, চোখ খুলছে

প্রতিবেদকের নাম :
  • হালনাগাদের সময় : শনিবার, ৫ জুন, ২০২১
  • ২৪৬ সংবাদটি পড়া হয়েছে

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

বিদেশে খুব নৈরাশ্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। ঠিক এই সময়ে দুটি বিষয় আমার মনে কিছুটা আশা ফিরিয়ে এনেছে। একটা হলো, সম্প্রতি ঢাকার একটি দৈনিকে প্রকাশিত ভারতীয় সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষালের একটি প্রবন্ধ, যে প্রবন্ধে তিনি বলতে চেয়েছেন, গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম ব্যর্থ হয়েছে এবং মার্কসবাদ বর্তমান বিশ্বে তার প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাচ্ছে। আমি তার এই কথায় আশান্বিত হয়েছি। কিন্তু তার সব কথার সঙ্গে সহমত পোষণ করি না।
আরেকটি বিষয় হলো, সম্প্রতি ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির ৫০ বছর এবং উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির পুনরুত্থান’ শীর্ষক এক ওয়েবিনার অনুষ্ঠান এবং তাতে সাবেক মন্ত্রী এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বক্তব্য। আমি তার বক্তব্যের সর্বাংশের সঙ্গে সহমত পোষণ করি না। কিন্তু এত দীর্ঘকাল পর মন্ত্রিত্বের মোহ ত্যাগ করে কিছু সত্য কথা বলার জন্য তিনি যে এগিয়ে এসেছেন, সেজন্য আশাবাদী হয়েছি। কারণ, বাংলাদেশে বাম গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতি গড়ে তুলতে রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বের ওপর আমি এখনও আশা রাখি। তিনি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব স্বীকার করেছেন এবং অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাকে সমর্থন দিচ্ছেন। কিন্তু তাকে অতীতের বাম রাজনীতির ব্যর্থতার কারণগুলো সততার সঙ্গে স্বীকার করতে হবে এবং অতীতের চৈনিক রাজনীতির মোহ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
মার্কসবাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করতে পারি এমন পা-িত্য আমার নেই। জয়ন্ত ঘোষালও তার প্রবন্ধে মার্কসবাদ বর্তমান বিশ্বে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাচ্ছে বলেছেন, কিন্তু কোথায় পাচ্ছে, কীভাবে পাচ্ছে তা বলেননি। কেবল পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের চৌত্রিশ বছরব্যাপী রাজত্বের অবসান কেন হলো তার কারণগুলো বিশ্নেষণ করেছেন। আমার মতো একজন অতি সাধারণ মানুষের ধারণা, মার্কসবাদ বর্তমান বিশ্বে অবশ্যই প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাবে। তবে কিছু গ্রহণ ও বর্জনের পর।
বিশ্বের প্রলেতারিয়েত বা সর্বহারা শ্রেণির বিপ্লবের ধারণাটি ত্যাগ করতে হবে। কারণ, বতর্মান বিশ্বে দরিদ্র শ্রেণি আছে। সর্বহারা শ্রেণি বলতে কিছু নেই। গ্লোবাল ধনতন্ত্রের বিকাশে এই সর্বহারা শ্রেণিটির বিনাশ ঘটেছে। বলা চলে, আধুনিক প্রযুক্তির বিস্ময়কর বিকাশে বিশ্বে এই পরিবর্তন ঘটেছে।
মার্কস পৃথিবীকে দু’ভাগে ভাগ করেছিলেন। হ্যাভস এবং হ্যাভ নটস এই দুই শ্রেণিতে। উৎপাদন শক্তির ওপর শ্রমিক শ্রেণির আধিপত্য বিস্তারের জন্য সশস্ত্র শ্রেণি সংগ্রামের বিধান দিয়েছিলেন। বর্তমানে সর্বহারা (হ্যাভ নটস) শ্রেণি বলে কিছু নেই। সুদূর আফ্রিকাতেও নয়। এখন শ্রেণিচরিত্র বহু জটিল ভাগে বিভক্ত। যন্ত্রশক্তির বদলে নতুন প্রযুক্তিশক্তির আবির্ভাবে হোয়াইট কলার এডুকেটেড শ্রমিক শ্রেণির আবির্ভাব ঘটেছে। তারা মালিক পক্ষ না হয়ে মালিক পক্ষের অনেক সুখ-সুবিধার দাবিদার। ব্রিটেনের ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা এখন ট্রেড-ব্যারন নামে খ্যাত। ব্রিটেনের একজন ধনী লর্ডের মতো তাদের আধিপত্য। তারা শ্রেণি সংগ্রামের কথা কখনও ভাবেন না।
মার্কস তার জীবদ্দশায় অণুশক্তির কথা ভাবতেও পারেননি। বিশ্বের আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর হাতে এই আণবিক শক্তি। চীন যখন রাশিয়াকে এক সময়ে আমেরিকা আক্রমণ করার জন্য উস্কাচ্ছিল, তখন বলেছিল আমেরিকা হচ্ছে কাগজের বাঘ। রাশিয়ার ক্রুশ্চেভ জবাবে বলেছিলেন, ‘এই কাগজের বাঘের আণবিক দাঁত আছে।’ মার্কস যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তাহলে তার সর্বহারা বিপ্লব ও সশস্ত্র শ্রেণি সংগ্রামের থিওরি পাল্টাতেন। মার্কসবাদকে পরিবর্তিত বিশ্বের প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন করতেন ও পাল্টাতেন। এ কাজটা তার শিষ্যরা কেন করতে পারছেন না সেটাই বিস্ময়কর। মার্কসবাদ একটা বিজ্ঞান। মার্কসবাদ কোনো ধর্মমত নয় যে, এর পরিবর্তন ঘটানো যাবে না।
এবার রাশেদ খান মেননের কথায় আসি। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে মওলানা ভাসানীর অবদান অসামান্য বলে মনে করি। তার দলের প্রায় সব নেতাই যেমন মশিয়ুর রহমান যাদু মিয়া, আনোয়ার জাহিদ, মির্জা গোলাম হাফিজ প্রমুখ ছিলেন ঘোর চীনপন্থি আর তখন চীন ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী এবং পাকিস্তানের গণহত্যায় সাহায্যদাতা। এ সময় রাশেদ খান মেনন, তার বন্ধু কাজী জাফর ছিলেন চীনপন্থি নামে খ্যাত। বঙ্গবন্ধুর জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বেরও বিরোধী ছিলেন। মেননরা তখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব মেনে নেননি। জয় বাংলা স্লোগানে কণ্ঠ মেলাননি। মুক্তিযুদ্ধের আগে সেই স্লোগান দেননি, পরেও দেননি। তাদের চরিত্রের পরিবর্তন হয়েছে মূলত হাসিনার মন্ত্রিসভায় যুক্ত হওয়ার পর। তখন দেশে বাম দলগুলোর শক্তি ও প্রভাব প্রায় নিঃশেষ। আওয়ামী লীগের টিকিটে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়ে ও মন্ত্রী পদ পেয়ে অনেক বাম নেতা আওয়ামী লীগ কর্তৃক ব্যবহৃত হয়েছেন। মন্ত্রী হয়েও মন্ত্রিত্বের ক্ষমতা পাননি।
আগের কথায় ফিরে যাই। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগেই মওলানা ভাসানী বুঝতে পেরেছিলেন তিনি তার দলের নেতাদের হাতে বন্দি হয়েছেন। যাদু মিয়া জুলফিকার আলি ভুট্টোর ‘এক গ্লাসের বন্ধু’ বলে পরিচিত ছিলেন। তাদের চাপে মওলানা ভাসানী জেনারেল আইয়ুবের সঙ্গে বৈঠকের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে যান। সেখানে ভাসানী-আইয়ুব গোপন চুক্তি হয়। চীনপন্থি কমিউনিস্ট রাজবন্দিদের এই শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়- তারা জেল থেকে বেরিয়ে শেখ মুজিবের ছয় দফার বিরোধিতা করবেন। সে কাজটি তারা করেছিলেন। এই বাম মহল তখন জোরেশোরে প্রচারও করেছিল ‘মার্কিন সিআইএ এই ছয় দফার প্রণেতা।’ মণি সিংহসহ কমিউনিস্ট পার্টির নেতারাও প্রথম দিকে এই মিথ্যা প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। পরে তারা মত পরিবর্তন করেন এবং শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিতে শুরু করেন।
মাওলানা ভাসানীও শেখ মুজিব ও তার আন্দোলনকে সমর্থন দিতে থাকেন। এমনকি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শেখ মুজিবকে মুক্ত করার আন্দোলনেও নেতৃত্ব দেন। আমার ধারণা মওলানা ভাসানী সচেতনভাবেই তা করেছিলেন। পরে ‘৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর গণহত্যা শুরু হওয়ার প্রারম্ভেই তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে ভারতের আসাম রাজ্যে আশ্রয় নেন। তিনিই ভারতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম শরণার্থী। আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মওলানা ভাসানীকে এজন্যই বিশেষভাবে সম্মান জানানো উচিত ছিল। প্রবাসী মুজিবনগর সরকার গঠনের সময় মওলানা ভাসানী তার প্রভাব বিস্তার না করলে এই সরকার গঠিত হতো না। মেনন মুক্তিযুদ্ধে বামদের অবদান যথাযথভাবে স্বীকৃত হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এই সংগ্রামে বামদের ভূমিকা কী ছিল? চীনপন্থি বামেরা এটিকে জাতীয় মুক্তির বিপ্লব বলে স্বীকার করেননি। শেখ মুজিবের নেতৃত্বও স্বীকার করেননি। জয় বাংলা স্লোগান তারা ভুলেও দেননি। জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দেওয়ার বদলে তার স্লোগান দিয়েছেন ‘সংগ্রাম সংগ্রাম জ্যোতি বসুর অপর নাম’।
এ গেল চীনপন্থি বাংলাদেশের বামপন্থিদের কথা। রুশপন্থি বামেরা কী করেছেন? মুক্তিযুদ্ধে তারা গোড়া থেকেই ছিলেন কিন্তু দরকষাকষি করেছেন। তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে অস্থায়ী মুজিবনগর সরকার গঠনের সময় সিপিবি নেতারা শর্ত দিয়েছিলেন, মন্ত্রিসভায় তাদের দু-একজন নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে তারা এই সরকারের নেতৃত্বে কাজ করবেন না। মওলানা ভাসানীর ভেটোদানের ফলে সিপিবির এই দাবি নাকচ হয়ে যায়। মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, জনগণ যেহেতু আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে, তখন সরকার গঠনের একক দায়িত্ব আওয়ামী লীগের। অনির্বাচিত কোনো দলের সদস্যদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। তাহলে ছোট-বড় আরও অনেক দল একই দাবি জানাবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে মওলানা ভাসানীর অবদান এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। মওলানাকে নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার আরেকটি পরিকল্পনা ছিল। শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি করে বিদেশের মাটিতে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হওয়ার পর এই সরকারের বৈধতার দাবি নস্যাৎ করার জন্য পাকিস্তানের হানাদাররা তাদের অধিকৃত পূর্ব পাকিস্তানের কোনো একটি এলাকা থেকে সরে এসে জায়গাটিকে ‘মুক্ত এলাকা’ করার পরিকল্পনা করেছিল। সেখানে মুজিবনগর সরকারের পাল্টা সরকার গঠন করা হবে। তার নাম হবে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার। মওলানা ভাসানী হবেন ওই সরকারের রাষ্ট্রপতি। চীনপন্থি বাম নেতারা হবেন তার মন্ত্রিসভার সদস্য। চীন সঙ্গে সঙ্গে এই সরকারকে স্বীকৃতি দেবে। শুরু হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে চীন ও ভারতের রশি টানাটানি। মাঝখান থেকে বাংলাদেশে পাকিস্তানের শাসন অবসানের কোনো সুযোগই থাকবে না। এই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির জন্য। তিনি দেশে পাকিস্তানের হানাদারদের গণহত্যা শুরু হবে- এই আঁচ পেয়ে আগেই ভারতে চলে যান। হানাদাররা তাকে হাতে না পেয়ে তার সন্তোষের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।
মওলানা ভাসানী ভারত চলে যাওয়ার পরেও স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার গঠনে তাকে রাজি করানোর জন্য যাদু মিয়া কলকাতায় যান মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক সেজে। মওলানার সঙ্গে দেখা করার জন্য শিয়ালদহের এক হোটেলে অবস্থান করতে থাকেন। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তার খোঁজ পেয়ে তাকে ধরার আগেই তিনি কলকাতা থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। ভারতের পুলিশ শিয়ালদহে হোটেল সার্চ করে যাদু মিয়ার ফেলে যাওয়া যেসব কাগজপত্র পায়, তারই ভিত্তিতে মওলানা ভাসানীকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ভাসানী ন্যাপের একদল নেতার এই ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পারে। মওলানা ভাসানী এই ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিতে রাজি হননি। তিনি প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ প্রধানের পদ গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মওলানা ভাসানী দেশে ফিরেই আবার যাদু মিয়া চক্রের হাতে বন্দি হন এবং সন্তোষ থেকে ‘হক-কথা’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করে তাতে প্রচ- ভারতবিদ্বেষ প্রচার দ্বারা নবলব্ধ স্বাধীনতার ভিত্তিমূলেই আঘাত হানতে শুরু করেন। চীনপন্থি বামেরা নানাভাবে মুজিব সরকারের বিরোধিতা আরম্ভ করেন। কোনো কোনো স্থানে তারা স্লোগান দেন ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়’। মওলানা ভাসানীকে অনশন ভাঙার জন্য অনুরোধ জানাতে গেলে মেননের বন্ধু কাজী জাফর বঙ্গবন্ধুকে প্রকাশ্যে অবমাননা করার চেষ্টা করেন।
মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থিদের অবশ্যই অবদান ছিল। চীনপন্থি বামদেরও ছিল। কিন্তু ছিল বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত এবং জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রবিশেষ মূলধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সিপিবি মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সহযাত্রী ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দেখা গেল এই দলও ঘাতক জিয়াউর রহমানের মৈত্রী অর্জনের জন্য ব্যস্ত।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের বাম রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ছিল, নিজেদের তাত্ত্বিক বিবাদ দূরে রেখে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাজতান্ত্রিক সোনার বাংলা গঠনের কাজে সাহায্য করা। প্রতিবিপ্লবী শক্তিকে মাথা তুলতে না দেওয়া। সেখানে তারা নানা তাত্ত্বিক বিতর্ক তুলে জাতীয় নেতাদের ক্রমাগত বিরোধিতা করেছেন এবং তাদের কেউ শ্রেণি-সংগ্রাম, কেউ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধুয়া তুলে বঙ্গবন্ধুর জাতীয় নেতৃত্বকে ক্রমাগত আঘাত করেছেন এবং বাংলাদেশে প্রতিবিপ্লবী শক্তিকে ক্ষমতা দখলে সাহায্য জুগিয়েছেন। বামদের সব চাইতে বড় ভুল, জামায়াত-হেফাজতের হুমকির মুখেও বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রক্ষায় তারা এগিয়ে আসেননি। বরং আওয়ামী লীগকে ক্রমাগত প্রতিক্রিয়াশীলদের শিবিরে ঠেলে দিয়েছেন। হেফাজতিরা তাতে লাভবান হয়েছে। বঙ্গবন্ধু একটি সমাজতন্ত্রঘেঁষা দল ও দেশ গঠন করতে চেয়েছিলেন। দেশের বাম রাজনৈতিক দলগুলোর বেশিরভাগ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং তার কন্যা শেখ হাসিনাকে সেই অবস্থান থেকে চরম পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে।
পশ্চিমা পুঁজিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা দুই-ই সহোদর ভাই। পশ্চিমা পচনশীল পুঁজিবাদ বাংলাদেশেও ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্ম দিয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মওলানা ভাসানী, তাজউদ্দীনসহ চার জাতীয় নেতা এবং মণি সিংহ, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের মতো মুক্তি সংগ্রামের সামনের কাতারের নেতারাও যথোচিত সম্মান পাননি। তাদের মূল্যায়ন হয়নি। একটি আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জাতীয় নেতা ও বাম নেতৃত্বের এই স্বীকৃতি মেনন কি করে আশা করেন?
অনেক হতাশার মধ্যে আমার আশান্বিত হওয়ার কারণ এই, রাশেদ খান মেননের মতো বাম নেতাদের ভুল ভাঙছে, চোখ খুলছে। তাদের সঙ্গে দেশে নবপ্রজন্মের নতুন নেতৃত্বের পদধ্বনি আমি শুনছি। আমি আর হতাশ নই। বাংলাদেশে হাওয়া বদল হবেই।

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্ট শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর :
© All rights reserved © 2024
প্রযুক্তি সহায়তায়: csoftbd