ন্যাশনাল ডেস্ক: পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদানের নিমিত্তে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ সংশোধন করার পদক্ষেপ বাতিলের দাবি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (১৭ মে) অ্যাডভোকেট মো. কামরুজ্জামান এ চিঠি প্রেরণ করেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা বা ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার পদক্ষেপটি অনতিবিলম্বে বাতিল করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদেরকেই এ কাজে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত করা যুক্তিযুক্ত হবে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের স্বল্পতায় শিক্ষা ক্যাডারসহ অন্যান্য বিবিএস ক্যাডারদেরকে অন্তবর্তীকালীন নিযুক্ত করা যেতে পারে।’
‘পুলিশকে বিচারিক ক্ষমতা বা ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হলে তা হবে সাধারণ বিচারিক মূলনীতির পরিপন্থী, সংবিধানের মূল প্রস্তাবনা, বিচারিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ, বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ, মাসদার হোসেন মামলার রায় এবং বর্তমানে বলবৎ আইনি কাঠামোর সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।’
‘পুলিশই অপরাধীকে ধরবেন এবং তিনিই বিচার করবেন এটা সাধারণ বিচারিক মূলনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। পুলিশ অপরাধ আমলে নেবে, তার কাছেই ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার থাকবে, অস্ত্রও থাকবে এবং তিনি বিচারও করবেন- এটা কোনভাবে হতে পারে না। যেকোনও জরুরি/দুর্যোগ/মহামারির সময়েও তা যুক্তিযুক্ত নয়। পুলিশকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিলে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের অপূরণীয় ক্ষতি হবে, সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়া সুদূর পরাহত হবে। আপাতত কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য এটি করার কথা বলা হলেও এর মাধ্যমে বাস্তবে বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় একটি ক্যান্সার কোষের সৃষ্টি করবে বটে।’
‘বিচারিক প্রক্রিয়া একটি বিশেষায়িত বিষয়। যারা বিচারকার্য পরিচালনা করবেন তাদের মধ্যে এ বিষয়ে একাডেমিক জ্ঞান, বাস্তব চর্চা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা এগুলো একসঙ্গে গ্রথিত থাকতেই হবে। যদি না থাকে তবে পুলিশ হোক কিংবা নির্বাহী কর্মকর্তা হোক বা অনন্য যোগ্যতা সম্পন্ন কারও পক্ষে বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে ন্যায় বিচার করা সম্ভবপর নয়।’
‘‘করোনাকালে মানুষের- ‘ভাত দে হারামজাদা, নইলে মানচিত্র খাব’ এরকম অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। তাই এসময়ে আইনি কঠোরতা/জেল-জরিমানা/জুলুম কোনভাবেই কাম্য নয়। মানবিক পদক্ষেপই কাম্য। বাস্তবে বাংলাদেশে পুলিশের যে ক্ষমতা রয়েছে তার চেয়ে শত শত গুন বেশি প্রয়োগ/অপ্রয়োগ করতে দেখা যায়। তার ওপর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার বর্তালে বাংলাদেশে জনগণের দশা যে কী হবে তা সকলেরই বোধগম্য।’’
প্রসঙ্গত, উক্ত চিঠির অনুলিপি ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ, ঢাকা সিএমএম ও ঢাকা সিজিএম বরাবরেও পাঠানো হয়েছে বলে আইনজীবী জানিয়েছেন।
Leave a Reply