শার্শা (যশোর)প্রতিনিধি: দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে স্থলপথে গত (২৬ এপ্রিল) সকাল থেকে পূর্ব ঘোষনায় যশোরের বেনাপোল দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত ১৪ দিনের জন্য বন্ধ রয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশী পাসপোর্ট যাত্রীরা নিজ দেশে ফিরে আসতে পারবেন। তবে যারা ভারত থেকে ফিরবেন অবশ্যই ব্যক্তিগত খরচে ১৪ দিন বেনাপোলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিয়েও এখন চলছে বড় ধরণের বাণিজ্য।
অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে বেনাপোল ফ্রেস আবাসিক হোটেলে সামাজিক দুরাত্ব বজায় রেখে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা পাসপোর্ট যাত্রীদের সাথে কথা হলে তারা সর্বপ্রথমে অভিযোগের তীর ছোড়েন হোটেল মালিক আঃ কাদের ও বেনাপোল পৌর স্যানেটারী ইন্সপেক্টর রাশিদা খাতুনের উপর।
এসময় কোয়ারেন্টাইনে থাকা যাত্রীরা বলেন, এখানে আমরা কোন ধরণের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছিনা। অথচ ছোট্ট এক একটা রুম প্রতি প্রতিদিন হোটেল ভাড়া গুনতে হচ্ছে হাজার টাকা করে।
কোয়ারেন্টাইনে থাকা রাজশাহীর শামীম হোসেন জানান, আমরা এই হোটেলে যারা আছি তারা প্রত্যেকেই চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিল। দেশে ফিরে এসে পোহাতে হচ্ছে কোয়ারেন্টাইনের নামে ছোট্ট একটা ঘরের অধিক ভাড়ার ও ব্যয় বহল খরচের জীবনযাপন।
তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রমের পর পৌর স্যানেটারী ইন্সপেক্টর (রাশিদা খাতুন) অন্য হোটেলে অনেক বেশি ভাড়া এর চেয়ে ফ্রেশ আবাসিক হোটেলে কম ভাড়া বলে আমাদেরকে এখানে নিয়ে আসেন। এবং ভাড়ার বিষয়েও তিনিই হোটেল মালিকের সাথে ডিল করে নিজে সেখান থেকে সুবিধা ভোগ করেন বলেও উপস্থিত কোয়ারেন্টাইনে থাকা যাত্রীরা অভিযোগ করেন।
বরিশালের হেলাল উদ্দিন জানান, অমরা জানি প্রতিটি হোটেল থেকে খাবারের পানি দেওয়া হয় কিন্তু এই হোটেল থেকে আমাদেরকে খাবারের পানি দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের প্রত্যেকের দোকান থেকে পানি কিনে খেতে হয়। অথচ রুম হিসেবে ভাড়া নিচ্ছেন অনেক বেশি।
এসময় অন্যান্য যাত্রীরা বলেন, গতকাল সোমবার দুপুর থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘন্টা পানি দেয়নি। পানি ছাড়ার কথা বললে হোটেল মালিকের স্ত্রী উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমাদের হোটেল থেকে পৌর স্যানেটারী ইন্সপেক্টরকে প্রতিদিন হাজার টাকা করে দিতে হয়। যাদের টাকা বাকি আছে তারা টাকা পরিশোধ না করলে পানি দেওয়া হবে না।
এবিষয়ে পৌর স্যানেটারী ইন্সপেক্টর রাশেদা খাতুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার উপর আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এধরণের কাজে তিনি সম্পৃক্ত নন বলেও তিনি জানান।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার আগে ফ্রেশ হোটেলে রুম প্রতি ভাড়া ছিল ৩ থেকে ৪শ টাকা। দুঃসময়ে ভারত থেকে নিজ দেশে ফিরে আসা কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাকে পুজি করে এধরনের হাজার টাকার বাণিজ্য করা ফ্রেশ হোটেলের মালিকের বিরুদ্ধে আইনুগত ব্যবস্থা গ্রহন করে, করোনা এই মহামারির মধ্যে বিপদে থাকা যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত ভাড়া ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা (ভূমি) রাসনা শারমিন মিথি উক্ত হোটেলে এসে যাত্রীদের অভিযোগ শুনে ফ্রেশ হোটেলের মালিক আঃ কাদেরকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা সম্পর্কে অবগত করে, তিনি পূর্বের হোটেল ভাড়ার অর্ধেক ভাড়া নিতে নির্দেশ দেন। সেই সাথে আগামীকাল বেলা ১১টার সময় ইমিগ্রেশন দ্বিতীয় তলায় সকল হোটেল মালিকদের নিয়ে জরুরি মিটিং ডাকা হয়েছে। উক্ত মিটিংয়ে তাকে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়।
তবে বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকার অন্যান্য হোটেলগুলোতে রুম ভাড়া অনেকটা স্বাভাবিক আছে।
Leave a Reply