ন্যাশনাল ডেস্ক: ভারত থেকে চার দিন ধরে বাংলাদেশে আসছে না লিকুইড অক্সিজেন। ভারতে করোনার রেকর্ড ঊর্ধ্বগতিতে এই মুহূর্তে তাদের দেশেই অক্সিজেনের তুমুল চাহিদা। এ কারণেই তারা অক্সিজেন রফতানি করছে না বলে মনে করছেন আমদানিকারকরা। দেশের বড় উৎপাদকরা বলছেন, এই মুহূর্তে রোগী কম থাকায় সমস্যা হচ্ছে না, চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে। তবে রোগী বেড়ে গেলে সরবরাহে চাপ পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ভারতের অক্সিজেন রফতানি বন্ধে দেশে কোনও সংকট দেখছে না। চাপ বাড়লে বিকল্প উপায়ে সরবরাহের চিন্তা করছে তারা।
দেশে যখন করোনার উচ্চ সংক্রমণ চলছিল তখন মেডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা ছিল দিনে ১৮০-২০০ টন। তবে বর্তমানে এই চাহিদা কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন অক্সিজেন প্রস্তুতকারকরা। শিল্প কারখানায় এখন সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে দেশের দুই বৃহৎ অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে এবং স্পেক্ট্রা। যেটুকু উৎপাদন হচ্ছে তার সম্পূর্ণটুকু হাসপাতালে সরবরাহ করছে তারা। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কম থাকায় আপাতত স্বস্তি দেখছেন সরবরাহকারীরা। তবে রোগী বাড়লে নতুন করে সংকট দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে তাদের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের আপাতত কোনও সংকট নেই। আমাদের এখন যেভাবে রোগী কমছে, এই হারে যদি হাসপাতালে রোগী ভর্তি কম থাকে তাহলে সংকট হবে না। আমাদের দেশীয় এবং বিভিন্ন সোর্স থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করি। যেমন লিন্ডে এবং স্পেক্ট্রা থেকে আমরা হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ দেই দুটি ফর্মে। একটি লিকুইড অপরটি গ্যাস। এভাবে যদি চলে তাহলে আমরা সরবরাহ চালিয়ে যেতে পারবো।’
বিকল্প পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা ভারত থেকে লিকুইড অক্সিজেন নিয়ে আসি, সেক্ষেত্রে আমাদের সাপ্লাই চেইনে লিকুইড ট্যাংকের বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হতে পারে। তখন আমরা গ্যাস সরাসরি দিতে পারবো। আমাদের যে গ্যাস আছে দেশে তাতে অসুবিধা হয় না।’
বিকল্প এই ব্যবস্থা প্রসঙ্গে ফরিদ হোসেন আরও বলেন, ‘লিকুইড গ্যাস দিতে হলে আমাদের একটা ট্যাংক বসাতে হয়। সেই ট্যাংকের মাধ্যমে কতোগুলো সিস্টেম আছে, সেগুলোর মাধ্যমে ওয়ার্ডে যেখানে লাইন আছে সেখানে আমরা সরাসরি দিতে পারি। আমাদের বড় বড় সিলিন্ডার যেটা দিতে হয় সেটিকে আমরা ম্যানিফল্ডিং সিস্টেম বলি। লিকুইড অক্সিজেন এভাবে ট্যাংক থেকে গ্যাস হয়ে রোগীর কাছে পৌঁছায়। এখন যদি আমাদের লিকুইড অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায় তাহলে আমরা ট্যাংকে লিকুইড অক্সিজেন না দিয়ে সরাসরি সিলিন্ডারে গ্যাস দিয়ে এই কাজটি করতে পারি। আমাদের গ্যাসের এখন পর্যন্ত কোনও ঘাটতি নেই। আমাদের এখানে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান আছে যারা ছোট আকারে উৎপাদন করে নিজেদের জন্য। ইসলাম অক্সিজেন প্রায় ২০ টনের মতো আমাদের হাসপাতালগুলোতে দেয়। জিপিএইচ গ্রুপ স্পেক্ট্রাকে দেয়। এভাবেই আমাদের চলছে। বড় শিল্প কারখানা যেমন ইস্পাত ফ্যাক্টরিতে কিন্তু ছোট প্লান্ট আছে, নতুবা তারা চালাতে পারে না। তারা নিজেদের চাহিদা পূরণ করে বাইরে সরবরাহ করে।’
রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যখনই রোগী বেড়ে গিয়েছিল আমরা এবং লিন্ডে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। তাদের বলে দিয়েছি এই মুহূর্তে আমরা তাদের সরবরাহ করতে পারবো না। সেটা বন্ধ করে আমরা হাসপাতালে দিয়েছি। পাশাপাশি যাদের কাছে সিলিন্ডার যায় তাদের সরাসরি গ্যাস প্লান্ট থেকে সরবরাহ করছি। আগে আমরা গ্যাসের প্রোডাকশন কমিয়ে লিকুইড থেকে গ্যাস করতাম। এখন আমরা দুটি কোম্পানি শুধু গ্যাস প্লান্ট থেকে গ্যাসই দিচ্ছি। এই দুটি পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে আমাদের দুই কোম্পানিরই সক্ষমতা প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে।’
লিন্ডের মানবসম্পদ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এবং প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র সায়কা মাজেদ বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল বন্ধ রেখেছি। যা উৎপাদন হচ্ছে পুরোটাই হাসপাতালে দিচ্ছি। আমাদের এই মুহূর্তে হাসপাতালে রোগীর চাপ কম আছে। এখন আমরা যা আছে তা-ই দিয়ে দিচ্ছি। আমরা এভাবে চালাতে পারবো যদি রোগীর সংখ্যা না বাড়ে।’
Leave a Reply