শ্যামনগর উপাজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে এক সপ্তাহ আগে এক কলেজ ছাত্রীকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদের বিষয়টি দাবার গুটি হিসেবে কাজে লাগিয়ে ফুলতলা এলাকায় দু’টি বাড়ি, রাস মন্দির, শীতলা মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে চারজন নারীসহ ১১জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আগামি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হিন্দুরা হরিপদ হালাদারকে ভোট দেবে এমন আশঙ্কা করে তার প্রতিশোধ নিতে গত মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আকবর আলী পাড়ের নেতৃত্বে তার শ্যালক বংশীপুরের আব্দুল আলিমসহ শতাধিক ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী এ হামলা চালিয়েছে। আকবর পাড় ও আব্দুল আলীমসহ সকল হামলাকারিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। হিন্দু পাড়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নিজেদের একতাবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করার বিকল্প কিছু নেই।
শুক্রবার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কদমতলা গ্রামের ফুলতলা রাস মন্দির ও শীতলা মন্দির প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের শ্যামনগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিকাশ কুমার ম-লের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন, প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার কল্যাণ ব্যানার্জী, দীপ্ত টেলিভিশনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি রঘুনাথ খাঁ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, সাংবাদিক পিযুষ বাউয়ালিয়া পিন্টু, শিক্ষক জয়দেব বিশ্বাস, উপজেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোলায়মান কবীর, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মাজেদ, সুনাম শ্যামনগর শাখার সভাপতি কুমুদ রঞ্জন গাইন, সুশীলনের সহকারি পরিচালক মনিরুজ্জামান বাবলু, ব্যবসায়ি বরুণ ঘোষ,সমাজসেবক আব্দুর রশীদ, হরিপদ হালদার, সাবেক ইউপি সদস্য খায়রুল আলম, নির্যাতিত রীতা বাউলিয়া, মমতা ম-ল প্রমুখ।
গোবিন্দ বাউলিয়ার স্ত্রী রীতা বাউলিয়া বলেন, তারা দীর্ঘদিন আকবর পাড়কে ভোট দেন। বর্তমানে তার স্বামী গোবিন্দ বাউলিয়া সম্ভাব্য ইউপি সদস্য প্রার্থী হরিদাস হালদারের সঙ্গে চলাফেরা করে। এরজন্য তাকে ডেকে সতর্ক করেছেন আকবর আলী পাড়। হরিদাসের পক্ষে ভোট করবে বলে আকবর মেম্বর সুভাষ বাউলিয়া, মৃত্যুঞ্জয় বাউলিয়া, গোবিন্দ বাউলিয়া ও তারক বাউলিয়াকে ভাল চোখে দেখতেন না। তাই গত ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় গ্রামের পূজা ম-লকে উত্যক্ত করার ঘটনার প্রতিবাদ করার ঘটনাটি এক সপ্তাহ পর ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে হিন্দু পাড়ার ভোটারদের তার পক্ষে নিয়ে আসতে ১৩ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরপরই দূর সম্পর্কের শ্যালক ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বংশীপুরের আব্দুল আলিম ও আকবর পাড়ের নেতৃত্বে নগেন বাউলিয়া ও সুভাষ বাউলিয়ার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এর আগে ওই দু’টি বাড়ির বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন্ করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে আকবরের বাড়ির ছাদ থেকে ইট ভেঙে সুভাষ ও নগেন বাউলিয়ার বাড়ি, রান্না ঘর ও গোয়াল ঘরের চাল ভেঙে দেওয়া ড়য়। অগ্নিসংযোগ করা হয় ঘরের উঠানে। তারপর ঘরের মধ্যে ঢুকে খাটের নিচে দু’শিশুকে নিয়ে পালিয়ে থাকা মমতাকে টেনে হিঁচড়ে বের করা হয়। খুলে নেওয়া হয় তার কানের দুুল, গলার সোনার চেইন ও মোবাইল সেট। নগেন বাউলিয়ার দু’কিশোরী মেয়েকে টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। দু’টি সাইকেল, ল্যপটপ ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ঘর থেকে বের হয়ে হামসলাকারিদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলে গোবিন্দ বাউলিয়া, সুভাষ বাউলিয়া, নিত্যানন্দ বাউলিয়া, মিলন বাউলিয়া, মমতা, যতীন ও দীপিকাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। মন্দিরে অবস্থানকারি তপন ম-লকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করার পর শীতলা প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর চালানো হয় রাস মন্দির ও শীতলা মন্দিরে। রীতা ও মমতা আত্মরক্ষার জন্য আকবর মেম্বরের পায়ে ধরেও ক্ষমা পাননি। মামলা করায় এখনো বহিরাগতরা সন্ধ্যার পর হিন্দু পাড়ায় এসে বাড়ি[ বাড়ি হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রীতা ও মমতা।
প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আব্দুর রশীদ আকবর পাড় ও আলীমের নেতৃত্বে নগেন ও সুভাষ বাউলিয়ার বাড়ি ও দুটি মন্দিরে ভাঙচুরের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন।
সাবেক ইউপি সদস্য খায়রুল ইসলাম বলেন, আকবর পাড়ের বাবা রাজাকার ছিল। নকিপুরের সুরেন ম-লকে ১৯৭১ সালে গুলি করে হত্যা করেন আকবরের বাবা আব্দুর রাজ্জাক। এ ছাড়া হরিনগরে ৭১ জনকে লাইনে দাড় করিয়ে হত্যার ঘটনায় আব্দুর রাজ্জাকের হাত ছিল। বাউলিয়া পাড়ায় ও মন্দিরে বর্বরোচিত হামলার ভয়াবহ বর্ণনা দিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পাশপাশি নির্যাতিতদের সার্বিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে খায়রুল ইসলাম আরো বলেন, আকবর ২০১৬ সালে মন্দিরের পাশে তাপস মু-া ও মৃত্যুঞ্জয় মু-ার জমি জবরদখল করে বাড়ি বানিয়েছে। সরকারি বিভিন্ন অনুদান পাইয়ে দেওয়ার নাম করে জামায়াতের সাবেক সক্রিয় জামায়াত কর্মী আকবর সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ইচ্ছামত টাকা আদায় করে থাকে।
শ্যামনগর থানার উপ-পরিদর্শক রিপন মল্লিক জানান, কদমতলায় দুটি বাড়িতে হামলা ভাঙচুর, লুটপাটসহ ১১জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করার পাশপাশি মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের মামলায় বংশীপুরের ইউসুফ গাজী ও জমাত গাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply