মোঃ আলফাত হাসান
জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ মোটেও সহজ কাজ নয়। সুন্দরবনে তো জীবন হাতে করে মধু আহরণে যেতে হয়। যে কোনো মুহূর্তে নরখাদক বাঘের কবলে পরার সম্ভাবনা থাকে। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বাংলার গর্ব – কিন্তু সুন্দরবনের মধু সংগ্রাহকের সবথেকে বড়ো বিপদও বটে। নানা ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও বাঘের আক্রমণে জীবন দিতে হয়
রেজাউল ইসলাম একজন প্রাক্তন মৌওয়ালি। এখন তাঁর গ্রামের কয়েকজন মৌওয়াল ও অন্যান্য সদস্যদের মধু সংগ্রহে সাহায্য করেন। তিনি জানান, জঙ্গল থেকে মধু আনতে গিয়ে জীবন দিতে হয় অনেকর। জীবনের ঝুঁকি নিতে হয় নানা রকমের বিশেষ করে যারা সরকারি অনুমতিপত্র ছাড়াই মধু সংগ্রহে যান, তারাই বাঘের শিকার হন বেশি। সরকারের অনুপতিপত্র একবার পাওয়া গেলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সহজেই নবীকরণ করা যায়। গত কয়েক বছরে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ অঞ্চলে কিছু মধুমক্ষীশালা গড়ে উঠেছে। মৌমাছির চাষ করে সেখানে মধু উৎপাদন করা হয়। তা সত্ত্বেও বলা যায়, আমাদের কাছে যে অপরিশোধিত মধু এসে পৌঁছয়, তার পিছনে লুকিয়ে আছে যথেষ্ট ঝুঁকি, পরিশ্রম ও সাহস।
অপরিশোধিত মধুর খাদ্যগুণ প্রচুর। পাস্তুরীকৃত মধুর থেকে এটি আলাদা। অপরিশোধিত মধু সরাসরি মৌচাক থেকে সংগ্রহ করা হয়। তাতে থাকে মৌমাছির পরাগ, যা খুবই উপকারী। এছাড়া মৌমাছির আঠা এবং বেশ কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। অনেকেই প্রচার করে যে বিশুদ্ধ মধুতে অনাক্রম্যতা বাড়ে। সেই প্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়াই ভালো। বহু লোকই জানেন না যে অপরিশোধিত মধুর উপকারিতা অনেক।
অপরিশোধিত মধুকে ছাঁকা হয় না। মধুকে পরিশোধন করলে অনেক উপাদান বেরিয়ে যায়। পাস্তুরীকরণের ফলে ইস্ট কোষের মৃত্যু ঘটে। স্বাদে পরিবর্তন আসে। মধু অনেকদিন টেকসই হয়, রং হয় বাদামি ঘেঁষা সোনালি। কিন্তু মধুর অনেক খাদ্যগুণই তাতে নষ্ট হয়ে যায়। অপরিশোধিত মধু সরাসরি মৌচাক থেকে সংগ্রহ করা হয়। তাতে থাকে মৌমাছির পরাগ, যা খুবই উপকারী। এছাড়া মৌমাছির আঠা এবং বেশ কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর।
মধু যখন প্রকৃতির মধ্যে থাকে, তার ভিতর কিছু জীবাণুনাশক এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। ক্ষতস্থান নিরাময় করতে, দীর্ঘদিনের সর্দিকাশি সারাতে, প্রদাহের উপশম ঘটাতে সেগুলি কাজে লাগে। অপরিশোধিত মধু অনেক খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। যেমন নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম, ফসফরাস এবং দস্তা।
এক টেবিলচামচ অর্থাৎ ২১ গ্রাম অপরিশোধিত মধুতে ৬৪ ক্যালোরি এবং ১৬ গ্রাম শর্করা থাকে। সেই শর্করার অর্ধেকের বেশি যদিও ফলশর্করা, যা সবার উপকারী নয়। ফলশর্করা বাদ দিলে চিনির থেকে মধু বেশি উপকারী। কোনো গবেষকের মতে মধু ডায়বেটিস থেকে রক্ষা করে, এবং কিছু ধরনের মধু কোলেস্টেরল লেভেলের উন্নতিতে সাহায্য করে।
Leave a Reply