নিজস্ব প্রতিনিধি
বছর দু’এক আগেও রওশন এরশাদকে ঘিরে সরব ছিল জাতীয় পার্টি। কে বেশি সময় পাশে থাকতে পারেন, এ নিয়ে প্রতিযোগীতা ছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির ‘প্রধান পৃষ্ঠপোশক’ রওশন এরশাদের সেদিন এখন আর নেই। কার্যত দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা।
নিজের দল জাতীয় পার্টি থেকে ময়মনসিংহ-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে শুরুতে এলাকায় চমক দেখানো অনেক কাজই করেছেন ‘সাবেক ফার্স্ট লেডি’ রওশন এরশাদ। তৃণমূলকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন। কিন্তু ময়মনসিংহ সদরের ভোটাররা এখন আর তাঁর খুব একটা দেখা পান না। গেলো এক বছর কোন দৃশ্যমান কর্মসূচিতে দেখা যায়নি তাকে। এমন কি জাতীয় পার্টিতেও তার অবস্থান বেশ নাজুক। করোনার কারনেই মনে হয় একাকিত্ব বরণ করছেন তিনি। দীর্ঘদিন জাতীয় সংসদের কোন কার্যক্রমেও তাকে দেখা যায়নি।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলে পদ-পদবি নিয়ে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের মধ্যে। পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার পদ নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জেরে দলটিতে পাল্টাপাল্টি অবস্থান দেখা যায় নেতাকর্মীদের। পরবর্তীতে বৈঠকের মাধ্যমে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। দলের নবম কাউন্সিলে ক্ষমতাহীন ‘চিফ প্যাট্রন’ বা প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তাকে মনোনীত করা হয়। কাউন্সিল পরবর্তীতে তার কার্যক্রম সীমিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে অনেকটা আড়ালে চলে যান তিনি।
তবে রওশন এরশাদের নীরবতার পেছনে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন কেউ কেউ। পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম একটি গণমাধ্যমে দেয়া স্বাক্ষাতকারে বলেন, রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রধান উপদেষ্টা। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচিতে তিনি অংশ নিচ্ছেন না। তার মানে এই নয় যে তিনি সংগঠন থেকে দূরে সরে গেছেন। তিনি সবসময় দলের খোঁজখবর রাখছেন। জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গেও তার যোগাযোগ আছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি দৃশ্যমান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।
তবে গুঞ্জন উঠেছে, দলীয় রাজনীতিতে বেশ কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন রওশন এরশাদ। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর যারা রওশনপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তাদের একটি বড় অংশ পরবর্তীতে বড় পদ পেয়ে নিজেরে অবস্থান পরিবর্তন করেন। বাকিরা দলের প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। এদিকে ক্ষমতা ও কর্মহীন পদ পাওয়ায় নিজেও চুপসে গেছেন রওশন এরশাদ। বের হচ্ছেন না ঘর থেকেও। বয়সের ভারেও তিনি নুয্য।
জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, রওশন এরশাদ শারীরিকভাবে অসুস্থ। মহামারী করোনা প্রাদুর্ভাবের পর তিনি নেতাকর্মীদের সাথে স্বাক্ষাত করা কমিয়ে দেন। বয়সের কারণে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তার বাসায় একজন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তিনি সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়া থেকেও অধিবেশনে যোগ দিতে পারেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির একজন কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এক নেতা জানান, মহামারিকালের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে তিনি বাসা থেকে বের হন না। বয়সজনিত কারণে তিনি শারিরীকভাবে সুস্থও নন। তবে দুএক দিনের মধ্যেই তার সংসদে যাওয়ার কথা রয়েছে। তিনি সেখানে টিকা নেবেন বলে শুনেছি।
Leave a Reply