নিজস্ব প্রতিনিধি : জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামালের টিকা নেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সাতক্ষীরায় কোভিড-১৯ এর টিকা গ্রহণের কার্যক্রম। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে রোববার দুপুর ১২টায় এর উদ্বোধন করেন সদর আসনের সাংসদ মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি।
এরপর একে একে টিকা গ্রহণ করেন সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ হুসাইন সাফায়েত, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তাঞ্জিলুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এমএম মাহামুদুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজাল হোসেন, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জুবায়ের হোসেন, বিজিবি’র মাদ্রা কোম্পানী কমান্ডার (মেজর সিটি) নায়েক মীর আবু সাঈদ আহমেদ প্রমুখ।
সিভিল সার্জন ডাঃ হুসাইন সাফায়েত জানান, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোববার থেকে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। একটানা ১২ দিন এ কার্যক্রম চলবে। প্রথম দিনে জেলায় ৮৪৬ জনকে টিকা দেওয়া হবে। প্রতিদিন তারা জেলায় এক হাজার ২০০ লোককে টিকা দিতে পারবেন। প্রতি হাসপাতালে ১৬ জন সেবিকা ও ৩২ জন স্বেচ্ছাসেবক টিকা দেয়ার কাজ করছেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্ফা কামাল টিকা গ্রহণের পর বলেন, বিশ্বের অনেক ধনী দেশ থাকতেও বাংলাদেশের মত একটি দেশে এত তাড়াতাড়ি টিকা পাওয়া এবং তিনি তা গ্রহণে করতে পারায় নিজেকে গর্বিত বোধ করছেন। তিনি আরো জানান, এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তিনি এ সময় কোন গুজবে কান না দেয়ার আহবান জানান।
এদিকে রবিবার বেলা ১১টায় দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোভিশিল্ড টিকাদান কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়। এসময় উপজেলার মধ্যে প্রথম কোভিশিল্ড টিকা নেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. বিপ্লব মন্ডল। তিনি ছাড়াও প্রথম দিনে টিকা নিয়েছেন উপজেলার মোট ৩৮ জন ব্যাক্তি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচএফপিও ডা. আব্দুল লতিফ বলেন, আমরা এপর্যন্ত দেবহাটা উপজেলাতে ৩৭০ ভায়াল কোভিশিল্ড টিকা পেয়েছি।
যা থেকে তিনহাজার সাতশ জনকে প্রথম পর্যায়ে এই টিকা দেয়া সম্ভব। কেবলমাত্র যারা অনলাইনে টিকার জন্য আবেদন করেছেন তারা টিকা নিতে পারবেন। তবে প্রথম পর্যায়ে শুধুমাত্র মনোনীত সম্মুখ সারির করোনা যোদ্ধা এবং ৫৫ বছরের উর্দ্ধে বয়স্ক নাগরিকদের কোভিশিল্ড টিকার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারছেন। বাকিরাও শীঘ্রই কোভিশিল্ড টিকা পাবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এপর্যন্ত দেবহাটা থেকে প্রায় দেড়শ ব্যাক্তি অনলাইনে টিকার জন্য আবেদন করেছেন। টিকা প্রদানকালে ইউএইচএফপিও ডা. আব্দুল লতিফ, আরএমও ডা. বিপ্লব মন্ডল, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার শফিউল বশার, দেবহাটা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান শাওনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
কালিগঞ্জে নিজে গ্রহণের মাধ্যমে টিকা কাযক্রমের উদ্বোধন করলেন রুহুল হক এমপি
অপরদিকে দৈনিক দক্ষিণের মশালের কালিগঞ্জ শহর প্রতিনিধি মুহিবুল্লাহর পাঠানো তথ্য অনুযায়ী¡ রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার সময় কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা নেন সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক। কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিজে টিকা নিয়ে টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর নিজে হাতে একজন ডাক্তার হিসাবে কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী কে নিজে হাতে টিকা প্রদান করেন। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম, থানা অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার হুসেন, মেডিকেল অফিসার মোয়াজ আরবার প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী অধ্যাপক আলহাজ্ব ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক এমপি বলেন টিকা নেওয়াতে ভয়ের কিছু নাই। কোন গুজবে কান না দিয়ে নিজের জীবনের নিরাপত্তার বিধানের জন্য নিবন্ধন করে এই টিকা গ্রহন করার অনুরোধ জানান। পরে তিনি হাসপাতালে ঘুরে দেখেন এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
অপরদিকে তালা প্রতিনিধি শাহীনুর রহমানের পাঠানো তথ্যে জানা যায়, তালা হাসপাতালের কোনো ডাক্তার বা নার্স ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় অগত্যা জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ আমিনুর শেখ (৩১)’র শরীরে টিকা দিয়ে কার্যক্রম উদ্ভোধন করা হয়। তিনি আটুলিয়া গ্রামের মৃত্যু সিরাজ শেখের পুত্র।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাজিব সরদারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন, তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তারিফ-উল-হাসান, আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, তালা থানা অফিসার ইনচার্জ মেহেদী রাসেল, তালা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার মহমান, ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) মুর্শিদা পারভিন পাপড়ি’সহ হাসপাতালের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বৃন্দ।
রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারী) অনলাইনে আবেদনকৃত ১৭ জন ব্যক্তিকে টিকা প্রদানের তালিকা ভূক্ত করা হলেও কেহই টিকা নেননি। গ্রাম পুলিশ আমিনুর তালিকা ভূক্ত না হলেও তাকে টিকা প্রদানের মাধ্যমে উদ্ভোধন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সময় হাসপাতালের সকল ডাক্তার ও নার্স উপস্থিত থাকলেও তারা টিকা নেননি।
এ বিষয়টি নিয়ে তালা উপজেলা সদরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।
গ্রাম পুলিশ আমিনুর বলেন, হাসপাতালের কেহই টিকা নিতে রাজি না হওয়ায় আমি সাহস করে এগিয়ে গিয়ে টিকা নিয়েছি। আমি এখনো সুস্থ আছি, আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
ডাঃ রাজিব সরদার বলেন, আজ টিকা কার্যক্রম উদ্ভোধন হয়েছে, পর্যায়ক্রমে আমরাও টিকা নিব। আজ নিলেন না কেন বা হাসপাতালের কেহই টিকা না নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি কাজের ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যান।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, হাসপাতালের ডাক্তার বা নার্সরা টিকা না নেওয়া দুঃখজনক। সবার আগে তাদের টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে ভিতি দূর করতে হবে। তা না হলে সরকারের এ মহতি উদ্দ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।
Leave a Reply