দেবহাটা ব্যুরো: সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলা একটি ঐতিহ্যবাহী ও বহু প্রাচীন ইতিহাসের ধারক ও বাহক উপজেলা হিসেবে পরিচিত। এখানে বৃটিশ আমলে ছিল পৌরসভা ও জমিদারদের বসবাস। উপজেলা সদর থেকে টাউনশ্রীপুর পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৩ কিঃমিঃ এর মধ্যে ছিল ১৮ জন জমিদারের বসবাস। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এই টাউনশ্রীপুরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় পৌরসভা ছিল। যার নাম ছিল দেবহাটা মিউনিসিপ্যালিটি এবং প্রতিষ্টা হয়েছিল ১৮৬৮ সালে। আর ১৯৫৫ সালে সেই পৌরসভার বিলুপ্তি ঘটে। পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন জমিদারদের প্রধান বাবু ফনীভূষন মন্ডল। ফনীভূষন মন্ডল দেবহাটার উন্নয়নের স্বার্থে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করে গেছেন। যার নিদর্শন স্বরুপ আছে দেবহাটা থানা ভবন, স্কুল, হাসপাতাল সহ বিভিন্ন স্থাপনা। তেমনি এখানে আরেকটি বড় ঐতিহ্যবাহী জিনিষ হচ্ছে সদরের শতবছরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী একটি বটগাছ। যার অপর নাম বনবিবিতলা। দেবহাটা উপজেলা সদর থেকে মাত্র ২ শত গজ পূর্বে এই গাছটি অবস্থিত। যে বটগাছটিকে ঘিরে রহস্য ও কৌতুহলের শেষ নেই। গাছটির না জানে কেউ জন্ম সাল বা না জানে কেউ জন্মের রহস্য। কথিত আছে শত বছরের পূর্বে একটি কাক উড়ে যাওয়ার সময় এখানে একটি ফল ফেলে দেয়। আর সেই ফল থেকেই এই গাছটির জন্ম। যে গাছটি এখন বিশাল বিস্তৃতি ঘটেছে। তবে আসল গাছ যে কোনটি সেটা কেউ বলতে পারেনা। জানা যায়, গাছটি যেখানে অবস্থিত সে জায়গাটির মালিক ছিলেন জমিদার ফনীভূষন মন্ডল। সেসময় অনেকে গাছটি কাটতে চাইলে ফনীবাবু গাছটিকে দেবতা মনে করে হিন্দুদের প্রথা অনুযায়ী গাছটিকে কাটতে দেননি। সেসময় থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বাংলা ১লা মাঘ তারিখে গাছটিকে দেবতা মনে করে কলা, মিষ্টি, দুধ, মুরগী সহ বিভিন্ন জিনিষ দিয়ে মানত করত। বনবিবি মা সকলের মনবাসনা পূরন করে দিতেন বলে অনেকে জানান। পরবর্তীতে জমিদার ফনীভূষন গাছটিকে রক্ষানাবেক্ষনের জন্য জসিমউদ্দীন কারিকার নামে একজনকে দায়িত্ব দেন। জসিমউদ্দীন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এখানে হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলমানেরাও যাওয়া শুরু করে। জসিমউদ্দীন কারিকারের মৃত্যুর পর তার ছেলে আইজুদ্দীন কারিকার গাছটিকে দেখাশুনা করত। সেখান থেকে আজ পর্যন্ত এখানে ১লা মাঘ তারিখে বনবিবি মার নামে মেলা বসে। এই সুন্দর ও মনোরম জায়গাটি একদিকে যেমন হয়ে উঠতে পারে সরকারের রাজস্ব আয়ের একটি পহ্না ঠিক তেমনি হয়ে উঠতে পারে ভ্রমন পিপাসুদের বেড়ানোর মনোরম স্থান। কথিত আছে অনেক বছর আগে কোন এক ব্যক্তি এই গাছটির ডাল কাটলে গেলে সে এমন ভয়ঙ্কর জিনিষ দেখে যে দুইদিনের মধ্যে সে মারা যায়। এখানে অনেক দূর দূরান্ত থেকে মানুষেরা বেড়ানোর জন্য আসেন। অনেকে আবার বনভোজনের উদ্দ্যেশ্যেও এখানে আসেন। তাই এই ঐতিহ্যবাহী স্থানটিকে ঘিরে সরকারী বা বেসরকারী পর্যায়ে গড়ে উঠতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র। দেবহাটা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ এই বনবিবিতলায় জাকজমকপূর্নভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ঐদিনে এখানে বিভিন্ন লোকজ ও বাউল সঙ্গীত সহ দেশী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাই স্থানীয়দের দাবী এই ঐতিহ্যবাহী স্থানটিকে আরো সুন্দর ও নান্দনিক করে গড়ে তুলতে সরকারীভাবে উদ্যোগ গ্রহন করা হোক।
Leave a Reply