জহুরুল কবীর : চতুর্থ ধাপে পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের ৫৬টি পৌরসভার সাথে সাতক্ষীরা পৌরসভাতেও ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পৌর নির্বাচন নিয়ে সাতক্ষীরার পৌরসভার প্রার্থীদের মধ্যে বেশকদিন ধরেই সাজ সাজ রব থাকলেও এবার তা পূর্ণ ভোটযুদ্ধে পরিনত হবে। ইতোমধ্যেই প্রার্থীরা সভা, সমাবেশ ও নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা জোরদার করেছেন। তবে দলীয় প্রতীক না পেলে শেষ মূহুর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাড়াবেন অনেকেই।
সাতক্ষীরার মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীগণ হলেন- সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নাসেরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদৎ হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা এজাজ আহম্মেদ স্বপন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জ্যোস্না আরা, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুর রহমান বাবু, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেত্রী আয়েশা সিদ্দিকা এবং প্রবাসী মাহমুদুল আলম বিবিসি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় নিজ নিজ সমর্থকদের দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
গত পৌর নির্বাচনের উল্লেখ্যযোগ্য ভোট পাওয়া সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাছিম ফারুক খান মিঠুও স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন মাঠে রয়েছেন। এখন পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বর্তমান মেয়র সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য তাজকিন আহমেদ চিশতী, মাসুম বিল্লাহ শাহীন ও সাতক্ষীরা পৌর বিএনপির সভাপতি বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হবি। সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি নূরুল হুদা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন। জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থীকে এখনও মাঠে দেখা প্রচার প্রচারণা করতে দেখা যাচ্ছে না।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পৌরসভা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রীর সভাপতি নাছিম ফারুক খান মিঠু। গত পৌর নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ভোট পাওয়া এ প্রার্থী জানান, “সাতক্ষীরা অবহেলিত এলাকা। আমাদের রাস্তা গুলোর সমস্যাতো আছেই সেই আছে জলাবদ্ধতা। পৌরসভার বেশ কিছু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এছাড়াও পৌরসভার প্রতিটা ওয়ার্ডের গোরস্থান নিয়েও জটিলতা আছে। এসব অসুবিধা দুরকরণসহ আমি পৌরসভার সৌন্দর্যবর্ধনেও কাজ করব। সর্বোপরি পৌরবাসীর জীবনমান উন্নয়নের সাথে সাথে আধূনিক পৌরসভা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করব।”
আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নাসেরুল হক বলেন, “দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে সর্বস্তরের জনগনকে সাথে রেখে পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করে যাব।” এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলীয় ডিসিপ্লিন ভঙ্গ আমি কখনই করবো না। দল যাকে মনোনয়ন দিবে আমরা তার সাথেই কাজ করব।”
অন্যদিকে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, “দলের বাই যাওয়ার কোন ধরনের চিন্তা ভাবনা আমার মধ্যে নাই। এবার মনোনয়ন পেলে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবো এবং সাতক্ষীরা পৌরসভার রাস্তা নির্মান ও সংস্কার, জলাবদ্ধতা দূরীকরসহ সৌন্দর্যবর্ধন করে ডিজিটাল পৌরসভায় রূপান্তর করবো।”
এদিকে সাবেক ছাত্র নেতা এজাজ আহম্মেদ স্বপন পৌর নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এ বিষয়ে স্বপন জানান, “যদি দল আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে সাতক্ষীরা পৌরসভায় একটি ভাল ভোট যুদ্ধ উপহার দিয়ে মেয়র হব।” তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচন করবেন না।
মেয়র প্রার্থী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কাউন্সিলর জ্যোস্না আরা জানান, আমি দেশনেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার একজন ক্ষুদ্র কর্মী। মহিলা প্রার্থী হিসেবে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা চাইব। যদি নেত্রী আমাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়োন দেন অবশ্যই আমি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দীতা করব।
সংকটে, সংগ্রামে, সহযোগীতায় উন্নয়নের অঙ্গীকার নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুর রহমান বাবু।
এদিকে প্রাবাসী ও সংযুক্ত আরব আমিরাত জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহমুদুল আলম বিবিসির সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রার্থী জানান, “হঠাৎ করে দেশে দু-চারদিন ত্রান বিতরণ করে তিনি মেয়র পদে দাঁড়িয়েছেন। সারা বছর ভোটারদের পাশে না থেকে হঠাৎ এসে নির্বাচন করবেন। তিনি মনোনয়ন পেলে সাতক্ষীরা পৌরসভায় দলের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।”
জাতীয় পার্টির পক্ষে পৌরসভা নির্বাচনে এখনও কেউ প্রচার প্রচারণা করেননি। তবে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজাহার হোসেন জানান তিনি এখনও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি।
মেয়র পদে জামায়াত থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জেলা সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি নূরুল হুদা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন তিনি।
আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে মাঠ চষে বেড়ানো প্রার্থীদের মধ্যে অনেক প্রার্থীই শেষ সময়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কি না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। তবে এ প্রশ্নে র উত্তর পেতে আগামী ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনোনয়ন না পেয়ে যিনি নৌকা প্রতীক পাবেন তাকেই সমর্থন দিবেন বলে সকল প্রার্থীরা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, চতুর্থ ধাপের ৫৬টি পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আগামী ১৭ জানুয়ারি। যাচাইবাছাই হবে ১৯ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৬ জানুয়ারি। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। ৫৬টি পৌরসভার মধ্যে সাতক্ষীরাসহ ৩১টি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং ২৫টি পৌরসভায় ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
Leave a Reply