ন্যাশনাল ডেস্ক: সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা পেতে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক। কেউ যদি মাস্ক না পড়ে তবে তার জন্য কোনো সার্ভিস মিলবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রিসভা।
আজ রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
শীতে করোনা বাড়তে পারে, সে জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছিল- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সেটা অলরেডি চারদিকে ম্যাসিভ ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দেয়া হয়েছে। চারদিকে যতগুলো আমাদের ইনস্টিটিউশন আছে, সোশ্যাল বা অর্গানাইজেশনাল বা ফরমাল প্রতিষ্ঠান-আমরা তাদের নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি। এক নম্বর হলো- নো মাস্ক নো সার্ভিস (মাস্ক না পরলে সেবা পাবেন না)। তারপর হলো সব জায়গায়, সব প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার বা শপিংমল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক ও ধর্মীয় সম্মেলনে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
আমরা এটা কম্পোলসারি (বাধ্যতামূলক) করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা বিভাগীয় কমিশনারদের ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি। সব সরকারি-বেসরকারি অফিসের বাইরে বড় একটা পোস্টারের মতো থাকবে- মাস্ক ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না, মাস্ক ছাড়া ব্যবহারও করতে পারবে না। ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে প্রচার করার জন্য বলা হয়েছে- দিনে দুইবার নামাজের পর প্রচার করার জন্য যে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। আলেমা-ওলামাদের সঙ্গেও কথা বলেছি ওনারাও এটা শুরু করেছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কীভাবে মাস্ক পরা নিশ্চিত করা হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইন্সপেকশন করা হবে। তাহলে মাস্ক ছাড়া কেউ এলে তাকে সেবা দেয়া হবে না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ঢুকতেই দেয়া হবে না, আমরা বলে দিয়েছি। শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও। বিভিন্ন প্রডিউসার তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি, তারাও তাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে সেটা চালু করছেন ইনশাআল্লাহ।
করোনার সময় অন্য রোগীদের সেবা পেতে সমস্যা হয়েছে, আবার দ্বিতীয় ঢেউ আসছে- এ বিষয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এখন আল্লাহর রহমতে ওই প্রবলেমটা হবে না। এখন একটা ট্রিটমেন্ট প্রোটকল চলে আসছে। ওই প্যানিকটা (আতঙ্ক) চলে গেছে। ইনিশিয়ালি (শুরুতে) তো বোঝা যাচ্ছিল না জিনিসটা কী? ডাক্তার-স্টাফরাও এখন আর অত ভয় পাচ্ছে না। আমি দু-একটি হাসপাতালে গিয়ে দেখেছি। হাসপাতালগুলোতে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আছে কিনা- এ বিষয়ে তিনি বলেন, নির্দেশনা আছে, কোভিড ও নন-কোভিড দুটোকে আলাদা করে চিকিৎসা করা। ঢাকা মেডিকেলেই দেখেন কোভিড আলাদা হয়ে গেছে, এটা আলাদা হয়ে গেছে। কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
গণপরিবহনে মানুষ মাস্ক পরছে না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা এটা দেখব। আজ এটা আলোচনা হলো। সড়ক সচিব, নৌপরিবহন সচিব ও রেল সচিবের সঙ্গে আমরা কাল-পরশু বসব ইনশাআল্লাহ। বসে ওটা একটা ওয়ার্ক আউট করা যাবে।
কোভিড-১৯ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভ্যাকসিন সংগ্রহে উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোথা থেকে সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পেতে পারি, সে বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ জারি আছে, আশা করি প্রথম দিকেই আমাদের ভ্যাকসিন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে চীনের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওটা নিয়ে কাজ করছে। সরকারি- বেসরকারি সব পর্যায়েই অ্যাফোর্ডগুলো নেয়ার জন্য বলেছে। চীনের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়ে রেখেছি, বিষয়টি আটকে নেই, তাদের ফান্ডিংয়ের সর্টেজ আছে। সেটা নিয়ে আলোচনা করছে তারা, বাংলাদেশের কাছে সম্ভবত কিছু ফান্ডিংয়ের অ্যাপ্রোচ করবে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন পাওয়া নিয়ে এক প্রশ্নে আনোয়ারুল বলেন, সেটা ভালোভাবেই আগাচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশে এখন ৯৩টি কেন্দ্রে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে, এরমধ্যে ৫০টি বেসরকারি। প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দুই হাজার চিকিৎসক এবং চার হাজার নার্স নিয়োগ দেয়ায় কোভিড-১৯ হ্যান্ডেল করার ক্ষেত্রে খুবই বড় অবলম্বন হিসেবে কাজ করেছে। এর বাইরেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দুই হাজার ৬৫৪ জন টেকনিশিয়ান ও সহকারীকে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি বলেন, এছাড়া পাঁচ হাজার ১০০ চিকিৎসক এবং এক হাজার ৭০০ নার্সকে আইইডিসিআরের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের ম্যানেজমেন্ট ও ইনফেকশন প্রিভেনশন কন্ট্রোল বিষয়ে ওরিয়েনটেশন দেয়া হয়েছিল। যার ফলে তারা মাঠপর্যায়ে করোনা মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি পুরো কাজ মনিটর করেছে। প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনার আলোকে ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রোটকল অনুসারে এ যাবত গৃহীত কার্যক্রমের পাশাপাশি সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
বৈঠকে পদ্মা সেতু নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পদ্মায় যেহেতু ৩৪ নম্বর স্প্যান বসে গেছে সে জন্য পদ্মার আর যে সাতটি স্প্যান সবগুলোই অলমোস্ট রেডি। ৪১ নম্বর স্প্যানের নাটবল্টু লাগানো হচ্ছে। আশা করি আগামী দুই-আড়াই মাসের মধ্যে হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ডিসেম্বরের মধ্যে সব স্প্যান বসানোর প্ল্যান না হলে হয়তো জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি হয়ে যাবে। কারণ ওদের ওই ক্রেনটি ছেড়ে দিতে হবে। কারণ এই ক্রেন পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। ওরাও অন্য জায়গায় কাজ করছে। সেখানে না পাঠালে দেরি হবে। এখন সবকিছু আল্লাহর রহমতে কমফোর্টে আছে।
Leave a Reply