1. faysal.ce@gmail.com : dakshinermashal :
  2. abuhasan670934@gmail.com : Hasan :
  3. sakalctc.bd@gmail.com : Nityananda Sarkar : Nityananda Sarkar
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১০ অপরাহ্ন
৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
Latest Posts
📰সাতক্ষীরা দেবহাটায় ছাত্রশিবিরের আন্ত:ওয়ার্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত 📰আশাশুনির গাজীপুর মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এতিমের অর্থ আত্মসাৎ ও নিয়োগ বাণিজ্য রোধের আবেদন📰প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দীন📰আন্দোলনে সাধারণের পক্ষে দাঁড়িয়ে আস্থার প্রতীক হয়েছে সেনাবাহিনী : ড. ইউনূস📰অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা, সাতক্ষীরা সীমান্তে আটক ২📰উপকূলীয় জীবনের সুরক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে বাগেরহাটে মানববন্ধন📰‘উপকূলীয় নারীদের সফলতা ও জ্ঞানের কথা’ শীর্ষক অভিজ্ঞতা সভা📰বর্ণাঢ্য আয়োজনে সপ্তাহ ব্যাপি বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলার উদ্বোধন📰আশাশুনির বুধহাটা ক্লাস্টারের দুরাবস্থাগ্রস্থ ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাণের ঝুঁকির মধ্যে চলছে ক্লাশ 📰আশাশুনিতে উপজেলা শুমারী  কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

শিঘ্রই করোনা চিকিৎসায় সাফল্য আসছে, আশাবাদ গবেষকদের

প্রতিবেদকের নাম :
  • হালনাগাদের সময় : শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০
  • ১৯৮ সংবাদটি পড়া হয়েছে


ড. দিলীপ কুমার দেব
‘করোনা’ টর্নাডোতে বিশ^ বিপর্যস্ত। পৃথিবীর জুড়ে মৃত্যুর আতঙ্ক। সর্বত্র হাহাকার। দিনে দিনে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মানুষ এখন চরম হতাশায় দিশেহারা। করোনা যুদ্ধে নেমেছে বিশে^র সব দেশ। এমন সময় করোনা মুক্তির আশার আলো দেখাচ্ছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। তাঁরা এখন আলোর দিশা। গবেষকরা বলছেন, আর মৃত্যু নয়, আর হতাশা নয়, শিঘ্রই আসছে করোনা মোকাবিরায় শক্তিশালী অস্ত্র। যে অজানা রোগের কোন ওষুধ নেই, সেই রোগের ওষুধ তৈরীতে একটু সময় তো লাগবেই। তবে সেসময় খুব বেশী দূরে নয়, আশাবাদ চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের। বসে নেই পৃথিবীর কোন দেশ। গবেষকরা কঠিন চেষ্টা করে চলেছেন করোনাকে হারাতে। করোনাযুদ্ধে ভ্যাকসিন ও ওষুধ উদ্ভাবনে দিনরাত কাজ করছে বিশে^র আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে সাফল্য অর্জনকারী দেশসমূহ। গবেষণায় কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, রাশিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ইটালী, হংকং, নরওয়ে, ইসরাইল, ভারতসহ পৃথিবীর অন্ততঃ ৮০ টি দেশ। এদের মধ্যে ১০৮ টি গবেষক দল ১০৮ টি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি করেছে। এর মধ্যে মাত্র ৮টিকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বা মানবদেহে পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা। এছাড়া বিশে^র বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত শীর্ষ ওষুধ প্রস্ততকারী কোম্পানীও ওষুধ তৈরীর কাজ করছে। অধিকাংশ দেশের গবেষণা প্রায়ই শেষের দিকে। শিঘ্রই এই অন্ধকার কেটে গিয়ে আসবে আলোর দিন। করোনা পারস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে। যেখানে চীনের হুবাই প্রদেশের উহান থেকে সর্ব প্রথম করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি ঘটেছে সেই উহান এখন সম্পূর্ণ করোনা মুক্ত হয়েছে। সম্প্রতি সর্বশেষ করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরে গেছেন। নিইজিল্যা-, স্পেন, সুইডেন, ফ্রান্স, চীন, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশ এখন স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এভাবে বাংলাদেশসহ আক্রান্ত সব দেশ করোনা মুক্ত হবে বলে পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ^াস রাখছেন সকল বিশ^াসী মানুষ।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসায় বহুল আলোচিত ওষুধ ‘রেমডেসিভির’-এর সাফল্যের ‘সুস্পষ্ট’ প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি করেছে আমেরিকা। বিশে^র বিভিন্ন হাসপাতালে ‘রেমডেসিভির’-এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের উপসর্গ ১১-১৫ দিনের মাথায় কমেছে বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এ্যালার্জি এ্যা- ইনফেকশন ডিজিজ-এর পরিচালক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিশেষজ্ঞ ডাঃ অ্যাস্থনি ফাউচি। গত ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ বিষয়ক শীর্ষ সংস্থা ফুড এ্য- ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ‘রেমডেসিভির’ প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে। ‘ইবোলা’ ভাইরাসের এই ওষুধটি ‘করোনা’ ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় এখন ব্যবহার হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ট ইউনিভার্সিটিতে এখন ‘রেমডেসিভির’ তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। কোভিড-১৯ পজিটিভ আক্রান্তদের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই সুস্থ হয়ে ওঠছেন। এদিকে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন ৪ মে বেক্সিমেকো ফার্মাসিউটিক্যালসসহ দেশের ছয়টি ওষুধ প্রস্ততকারক কোম্পানীকে ‘রেমডিসিভির’ ওষুধ উৎপাদনে অনুমতি দিয়েছে এবং আগামী ২০ মে’র মধ্যে এই ‘রেমডিসিভির’ পাওয়া যাবে বলে আশা করছে ওষুধ প্রশাসন। এই ওষুধ রোগীর শিরায় প্রয়োগ করার জন্য প্রস্তত করা হয়েছে। প্রতিটি ইনজেকশনের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার টাকা। ইবোলা ভাইরাসের ওষুধ হিসাবে এই ‘রেমডিসিভির’ আমেরিকায় প্রস্তত করা হয়েছিল।
এছাড়াও কিছু নতুন পদ্ধতিরও অবলম্বন করার চেষ্টা চলছে। যেমন, ‘স্টেম সেল’ পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসা। সংযুক্ত আরবআমীরশাহীতে ‘স্টেম সেল’ প্রযুক্তির ব্যবহারে চিকিৎসায় সাফল্যের দাবি ইতোমধ্যে সামনে এসেছে। আবুধাবি দাবি করেছে, তারা ‘স্টেম সেল’ ব্যবহার করে করোনার মোকাবিলায় সুফল পাচ্ছে। ‘স্টেম সেল’ চিকিৎসা হলো, রোগীর নিজের রক্ত থেকে ‘স্টেম সেল’ সংগ্রহ করে রোগীর ফুসফুসে ব্যবহার করা হয়। ইতোমধ্যে ৭৩ জন রোগীর দেহে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করায় সাফল্য এসেছে বলে দাবি করেছে আবুধাবি।
অন্যদিকে মোনোক্লানাল এন্টিবডি তৈরী করে করোনা চিকিৎসা শুরু করেছে ইসরাইল। ইটালীও এই পদ্ধতিতে কাজ করছে। এই পদ্ধতিতে চিকিৎসায় কোভিড-১৯ ভাইরাস শরীরে ছড়িয়ে পড়ার পক্রিয়া থামিয়ে দেবে। এছাড়া গত ৫ মে ইতালীর গবেষকদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রোমের স্পালানজানি হাসপাপতালের বিশেষজ্ঞরা করোনা নোভেল ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছেন। ইঁদুরের শরীরে প্রয়োগ করে আশাতীত সাফল্য পাওয়া গেছে। করোনা প্রতিষেক হিসাবে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করেও সুফল আসবে। তাঁরা এধরনের পাঁচটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করায় সরকারের অনুমোনের অপেক্ষায় আছেন। এই ভ্যাকসিনের মধ্যে সেরা দু’টি অনুমোন গ্রহণে আগ্রহী গবেষকরা।
তাছাড়া বিশে^র অনেক দেশ এখন প্লাজমা থেরাপী দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেছে। করোনা ভাইরাস থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তির রক্তের প্লাজমা সংগ্রহ করে করোনা আক্রান্ত রোগীর শরীরে দেওয়া হচ্ছে। এতে আক্রান্তদের শরীরে করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাচ্ছে এবং চিকিৎসা সুফল হচ্ছে। ভারতের কেরালা শ্রীচিত্রা তিরুনাল ইনস্টিটিউট ফর মেডিকেল সায়েন্স ও টেকনোলজি এই প্লাজমা থেরাপীর কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার মৃত্যুর ঝুকি কমাতে প্লাজমা থেরাপী অধিকতর কার্যকর এবং এই পদ্ধতিতে আক্রান্তদের শরীরে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে এ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। ভারতের ২০ টিরও বেশী মেডিকেল রিসার্স সেন্টার এই থেরাপী নিয়ে কাজ করছে। দিল্লী ও মহরাষ্ট্র স্বাস্থ্যমন্ত্রক প্লাজমা থেরাপী পদ্ধতিতে চিকিৎসায় অনুমোদন দিয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকার বলছে, সেখানে ২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়েছেন। লকনউ জর্জ মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় প্লাজমা থেরাপী নিয়েও কাজ করছে। পশি^মবঙ্গ সরকার এই প্লাজমা থেরাপী শুরু করছে। কলিকাতা বেলেঘাটা ইনফেকশন ডিজিজ (আইডি) হাসপাতাল প্রথম শুরু করতে যাচ্ছে। প্লাজমা থেরাপী চিকিৎসায় ভারতের আইসিএমআর অনুমোদন দিয়েছে। আমেরিকা, স্পেন, চীন, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক দেশ এই থেরাপী ব্যবহার করছে। ১৯১৮ সালে স্পেনিশ ফ্লুতে এবং ২০১৪ সালে ইবোলা ভাইরাস সারাতে প্লাজমা থেরাপী সাফল্য এনেছিল। দিল্লীর নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারে এক তাবলিক জামাতে যোগ দেওয়া ১৪ শত ব্যক্তির মধ্যে ৩৫০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের ১০ জন ব্যক্তি প্লাজমা দিয়েছেন। আমেরিকার নিউইয়র্কে যারা করোনা ভাইরাসে মৃদু আক্রান্ত হয়ে সেরে গেছেন, তাঁদের ২১ ভাগ শরীরে ভাইরাটির বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরী হয়ে গেছে।
গত ১৬ মার্চ প্রথমবারের মত করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে মানবদেহে প্রয়োগ করে দি আমেরিকান ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউট বা এনআইএস। এই পরীক্ষার পর আরও সাতটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা বায়োটেক কোম্পানী তাদের তৈরী ভ্যাসিন মানবদেহে প্রয়োগ করে। ভ্যাকসিন তৈরীতে একধাপ এগিয়ে চীন। বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বা মানবদেহে পরীক্ষার জন্য অনুমোদন পাওয়া ৮টি ভ্যাকসিনের মধ্যে ৫টি চীনের। এছাড়া ২৩ এপ্রিল ইংল্যা-ের অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যায়ের উদ্ভাবিত করোনা ভাইরাসের টিকা ‘শ্যাডক্স১-এনকভ১৯’-এর পরীক্ষামূলক ভাবে মানবদেহে প্রয়োগ শুরু করা হয়েছে। এই টিকা উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যারয়ের জেনার ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিনোলজির অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট। এই টিকা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ৮০ শতাংশ কার্যকর হবে বলে আশাবাদী গবেষকরা। এই টিকা করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ১০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন তৈরীর আশা করছেন তাঁরা। বিশে^র সাতটি জায়গায় এই প্রতিষেধক উৎপাদনের কাজ চলছে। এতে অক্সফোর্ডের অংশীদার হিসেবে রয়েছে যুক্তরাজ্যের তিনটি সংস্থা, ইউরোপের দুটি সংস্থা, চীনের একটি সংস্থা এবং ভারতের একটি সংস্থা। এই মে মাসেই ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতার ফলাফল বোঝা যাবে এবং শিঘ্রই বাজারে পাওয়া যেতে পারে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের টিকা। ভাইরাস প্রতিষেধক তৈরীতে সারাহ গিলবার্টের অতীত সাফল্য রয়েছে। তিনি ও তাঁর গবেষক দল ২০১২ সালে করোনা ভাইরাস গোত্রের সার্স ভাইরাস এবং ২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে ছিল, তার প্রতিরোধে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের কাজ করেছিলেন। এছাড়াও লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজেও টিকা তৈরীর কাজ চলছে। চীন করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরী করেছে বলে দাবী করেছে। চীনরে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্টোল এ- প্রিভেনশনের পরিচালক ডা: গাও ফু জানান। চীনের দু’টি কোম্পানী প্রতিষেধক তৈরীতে কাজ করছে। এই প্রতিষেধকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে এবং মানবদেহে প্রয়োগ হবে শিঘ্রই। সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাজারে আসতে পারে এই প্রতিষেধক।
এদিকে অন্যরোগের কয়েকটি ওষুধ নিয়ে বিশ^ব্যাপী অনেক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা করোনা চিকিৎসায় আশাবাদী হয়ে ওঠেছেন। এই ওষুধের মধ্যে ‘হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন’, ‘ক্লোরোকুইন’, ‘অ্যাজিথ্রোমাইসিন’ ও ‘ফ্যাভিপিরাভির’। ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসার জন্য জাপানি কোম্পানী ফুজিফিল্ম তোয়ামা কেমিক্যাল ফ্যাভিপিরাভির ওষুধটি তৈরী করেছিল। ওষুধটির ব্র্যান্ড নাম ‘অ্যাভিগান’। জাপান ওষুধটির ওপর নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ তৈরী করছে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত ২০টি দেশকে এই ওষুধ পরীক্ষার জন্য বিনামূল্যে সরবরাহ করছে জাপান। আরও ৩০টি দেশ এই ওষুধ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ২০১৪ সাল থেকে ‘অ্যাভিগান’ সেদেশের অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এই ওষুধ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশকারী সব দেশগুলোতে বিনামূল্যে ‘অ্যাভিগান’ সরবরাহের কথা জানিয়েছেন, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোতেগি। চীনের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ‘অ্যাভিগান’ প্রয়োগে তাঁরা সুফল পেয়েছেন। বিশে^র বিভিন্ন দেশ এই ওষুধ নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে।
করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় আলোচিত ‘ক্লোরোকুইন’, ‘হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন’ এবং ‘অ্যাজিথ্রোমাইসিন’ ওষুধের মধ্যে প্রথম দু’টি ওষুধ ম্যালেরিয়া ও রিউমেটয়েড আর্থাইটিসের চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হয় এবং ‘অ্যাজিথ্রোমাইসিন’ একটি কার্যকর অতি পরিচিত অ্যান্টিবায়টিক। তবে চিকিৎসকরা বলেন, এই ওষুধগুলোর ব্যবহার খুবই সর্তকতার সাথে করা প্রয়োজন। ‘হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন’ ও ‘অ্যাজিথ্রোমাইসিন’ এই দুটি ওষুধের কম্বিনেশন সম্পর্কে বিশেষ সর্তকতা দরকার। এই দু’টি ওষুধের ভয়ঙ্কর পাশর্^ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। দীর্ঘদিন অধিক মাত্রায় ‘হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন’ ব্যবহার করলে চোখের রেটিনার মারাত্মক ক্ষতি বা অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আতঙ্কিত হয়ে ঝোকের বশে এসব ওষুধ খেলে বিপদই ঘটতে পারে বলে জানিয়েছে, আমেরিকার ফুড এ- ড্রাগস অ্যাডসিনিস্টেশন (এফডিএ)। এদিকে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই এই কাজে। নিজেদের সামর্থকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের গবেষকরা এনিয়ে কাজ করে চলেছেন। বাংলাদেশের চিকিৎসকরা কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় ‘হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন’ ও ‘ক্লোরোকুইন’ ব্যবহারে কার্যকর সাফল্য পেয়েছেন। আমেরিকা, ভারত, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ ‘হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন’, ‘ক্লোরোকুইন’ ও ‘অ্যাজিথ্রোমাইসিন’ ওষুধ ব্যবহার করছে। এই ওষুধ এক সপ্তাহ ব্যবহারে অধিকাংশ রোগী সুস্থ হচ্ছেন বলে দাবী করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় ‘হাড্রোক্সিক্লোরোকুইন’ ও ‘ক্লোরোকুইন’ কার্যকর বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের বিশেষজ্ঞরা। সোসাইটির পক্ষ থেকে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি স্ট্যান্ডর্ড ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন প্রণয়ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে এই ওষুধগুলো উৎপাদনে দেশীয় কোম্পানীগুলোকে ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ভারত সরকার তাদের দেশের ৬ টি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানীকে ‘হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন’ ‘ক্লোরোকুইন’ ওষুধ প্রস্ততের অনুমোদন দিয়েছে। এদিকে গণস্বাস্থ্য সংস্থার বিজ্ঞানীরা কোভিড-১৯ ভাইরাস পরীক্ষায় কিট আবিষ্কারের সাফল্য দেখিছেন। বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত করোনা ভাইরাস শনাক্তের কিটের নাম ‘জি র‌্যাপিড ডট ব্লট’। এই কিট পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
ওদিকে পশ্চিমবঙ্গে করোনা টেষ্ট কিট তৈরী করেছে। এই কিট দ্বারা করোনা পরীক্ষার জন্য আইসিএমআর-এর ছাড়পত্র পেয়েছে। এছাড়া ভারতে ‘টুন্যন্ট’ পদ্ধতিতে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। নাক ও মূখের লালারসের নমুনায় কোভিড-১৯ ভাইরাস পরীক্ষায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। এই পদ্ধতিতে সহজে এবং দ্রুত ভাইরাস সনাক্ত করা যাবে এবং পোর্টেবল যন্ত্র ব্যবহার করে বাড়ীতে গিয়ে এই পরীক্ষা করা যাবে। এই পরীক্ষা সমূহের অনুমোদন দিয়েছে ভারতের আইসিএমআর।
ভারতের হায়দ্রাবাদের ভারত বায়োটেক করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরীর চেষ্টা চালাচ্ছে। এছাড়াও ভারতে পাঁচ ধরনের ভ্যাকসিনের ওপর কাজ চলছে। কিন্তু কোভিড-১৯ যখন তখন তার চরিত্র পাল্টাচ্ছে। একটা টাইপ হতে অন্য টাইপে যাচ্ছে। করেনার চরিত্র নির্ধারণ না করতে পারলে প্রতিষেধক তৈরী সম্ভব নয়। করোনার নির্দিষ্ট চরিত্র জানলে সেটাকে ধরে প্রতিষেধক তৈরী সম্ভব হবে। এই চরিত্র নির্ধারণের জন্য ভারতের আইসিএমআর-এর মেডিকেল জার্নালে ভারতের দুইজন বাঙ্গালী বিজ্ঞানীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হচ্ছেন বিজ্ঞানী ডাঃ পার্থ মজুমদার ও ডাঃ নিধান বিশ^াস। তাঁরা করোনা ভাইরাসের চরিত্র নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের গবেষণায় করোনা ভাইরাসের ডিএনএ তে ১১ ধরনের চরিত্রের খোঁজ চলছে। এই নির্দিষ্ট চরিত্রের খোঁজ পাওয়া গেলে এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরীতে গতি আসবে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট লাগাতার ভাবে গবেষণার কাজ করে যাচ্ছে।
অন্যদিকে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নাইজেরিয়ার ওজো রাজ্যের গভর্নর সেয়ি মাকেন্দে প্রতিদিন দুইবার সকাল ও সন্ধ্যায় নিয়মিত এক চামচ করে মধুর সঙ্গে কালোজিরার তেল সেবন করে সুস্থ হয়েছেন। গভর্নর সেয়ি মাকেন্দে বলেন, তাঁর বন্ধু ডাঃ মুইদিন ওলাতুনজি কালোজিরার তেল ও মধু খাওয়ার পরামর্শ দেন। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সেই সাথে তিনি ভিটামিন সি খেয়েছেন। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে পবিত্র হাদিস শরীফে কালোজিরার তেল ও মধুর কথাও উল্লেখ রয়েছে। এমনও বলা হয়েছে যে, মৃত্যুব্যতীত সকল রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কালোজিরার তেল কার্যকর এবং মহৌষধ হিসেবে মধুর ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া হিন্দু পৌরাণিক শাস্ত্রে বিভিন্ন চিকিৎসায় ও কবিরাজী চিকিৎসা বিজ্ঞানে মধু মহৌষধী হিসেবে ব্যবহারের কথা উল্লেখ রয়েছে।
করোনা প্রতিরোধে এলাপ্যাথিক গবেষণা ছাড়াও হোমিওপ্যাথিক বিভিন্ন গবেষণা চলছে বিশে^র বিভিন্ন দেশে। ভারতের হোমিও গবেষকরা করোনা প্রতিষেধক ও চিকিৎসায় গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে অনেক চিকিৎসক করোনার প্রতিষেধক হিসেবে ‘আর্সেনিকাম ৩০’ ব্যবহারের কথা বলছেন। খাওয়ার নিয়ম হিসেবে বলা হয়েছে, সকালে খালি পেটে এক ফোটা করে তিন দিন খেতে হবে এবং একমাস পর অনুরূপ সেব্য। তবে এই প্রতিষেধকের কতটুকু কার্যকর তার ওপর এখনো পরীক্ষা চলছে।
করোনার ভ্যাকসিন ও ওষুধ আবিষ্কারে গবেষকদের চিন্তা-ভাবনার পাশাপাশি প্রাণঘাতী এই ভাইরাসকে প্রতিহত করতে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন, ‘সরিষার তেল’ ব্যবহারের কথা বলছেন ভারতের যোগ গুরু বাবা শ্রী রামদেব। তিনি বলেন, দুই নাকের দুই ছিদ্রে দুই ফোটা করে ‘সরিষার তেল’ দিয়ে শ^াস টানলে শ^াসযন্ত্রে আটকে থাকা করোনা ভাইরাস পেটে চলে যাবে। এরপর পেটের মধ্যে থাকা এসিড সেগুলো মেরে ফেলবে বলে দাবি করছেন তিনি। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি সর্বভারতীয় একটি সংবাদ মাধ্যমের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে শ্রী রামদেব এসব কথা বলেন।
এছাড়া আয়ুরবেদিক ও ইউনানীসহ চিকিৎসকদের অভিমত, ভিবিন্ন ভেষজ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরে বল বা শক্তি বৃদ্ধি করে। এসব উপাদান ব্যবহারে শুধু সর্দি-কাঁশি, গলা ব্যাথা, জ¦র থেকে মুক্ত থাকা যায়। যেমন, কালোজিরা ভাজা নিয়মিত খাওয়া, কালোজিরার তেল বা কালোজিরার ক্যাপসুল, প্রতিদিন অন্ততঃ দুইবার মধু পান করা, টক বা ভিটামিন সি জাতীয় খাবার, লেবু, লেবুর সরবত, লেবু চা, কমলা, তেঁতুল, আমলকি, কাঁচা আম আমের আঁচার, কাঁচা আমের কাসুন্দি, কুল, কুলের আঁচার, চালিতা, আমলকি, কামরাঙ্গা, পাঁকা পেপে, অ্যাপেল, আঙ্গুর, কাঁচা হলুদ, আদা ও গোল মরিচ একত্রে চিবিয়ে খাওয়া, আদা চা, কসুম গরম পানি বেশী বেশী করে খাওয়া, গলায় ব্যাথা অনুভব হলে লবন মিশিয়ে গরম পানির গড়গড়া করা, এতে কোন প্রকার ভাইরাস বা জীবানু থাকলে বিনষ্ট হবে ও গলার ভিতরে চলে যাবে। টাটকা সবুজ শাঁক-সবজি, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি। এছাড়া ফাস্টফুড, হাফ বয়েল ডিম, কাঁচা সবজী না খাওয়া হতে বিরত থাকা।
তাছাড়া নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মানতে হবে। খাবার আগে ও পরে সাবান বা হ্যা-ওয়াশ বা সোডা দিয়ে অন্ততঃ ২০ সেকে- ধরে হাত ধুতে হবে। বাসার অধিক ব্যবহার্য জিনিষপত্র স্যানেটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। দূরে অবস্থিত আত্মীয়দের ও পরিচিতদের সাথে সম্পর্ক সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে করতে হবে। সকলে একটু কষ্ট শিকার করে নিজ নিজ বাসায় বা বাড়ীতে অবস্থান করতেই হবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না। যদি বাইরে যেতেই হয় তাহলে বাইরের কোন ব্যক্তির শরীরের সাথে নিজ শরীরে যেন কোন প্রকার স্পর্শ না লাগে। অর্থাৎ বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার মত অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি হতে অন্যজন ব্যক্তির কমপক্ষে ৬ ফুট দুরত্বে অবস্থান করতে হবে। ফুলহাতা জামা এবং প্যান্ট পড়তে হবে। হাতে গ্লোপস ও মুখে মাস্ক অবশ্যই পড়তে হবে। ঘরে স্যাভলোন বা ডেটল বা ব্লিসিং পাউডার পানিতে মিশিয়ে জীবানু নাশক তৈরী করে ছিটাতে হবে। বাইরের থেকে আসার পর জুতার তলায় জীবানুনাশক ছিটাতে হবে। ঘরে বসে বসে মানসিক চাপ নেওয়া যাবে না। সকল সময় আনন্দে সময় কাটাতে হবে। ঘরে বসে গান শোনা ও গাঁওয়া, টেলিভিশন দেখা, বই পড়া, লেখালেখি করা, ছবি আঁকা, বাচ্চাদের লেখাপড়া করানো, গল্প করা, গল্প শোনা, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা, নামাজ পড়া-ইবাদত করা, পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা, প্রার্থনা করা, কম্পিউটারে কাজ করাসহ বিভিন্ন সুন্দর চিন্তা ভাবনায় সময় কাটাত হবে।
করোনা সংকটে মানুষকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বিশে^র চিকিৎসক আর স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেই সাথে সার্বক্ষণিক প্রশাসন, পুলিশকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী ও সমাজকর্মী অসুস্থ মানুষের পাশে রয়েছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, পরম দয়ালু আল্লাহ পৃথিবীতে এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি, যে রোগের কোন চিকিৎসা নেই। আশা হত নয়, আশার আলো ফুটবেই। দুর্যোগ আসে, আবার দুর্যোগ কেটে যায়, দুর্যোগ মোকাবিলা করেই বাঁচতে হয়। দুর্দিন আসছে, আসবেই সুদিন। নিরানন্দ যেখানে, আনন্দও সেখানে। নদীর এপাড় ভাঙ্গলে ওপাড় গড়বেই। আস্তে আস্তে সব কঠিন সমস্যা কেটে যাবে। এখন এক বিশ^, এক সমস্যা, এক চিন্তা, সব সমস্যা দূর হয়ে আসবে আলোর সুদিন। অপ্রতিরোধ্য মহাসংকটে প্রতিমুহূর্তে লড়াই করে মানুষ সকল সময়ই জয়ী হয়েছে। ভয় নাই, করোনা যুদ্ধেও মানুষ জিতবেই করুণাময়ের কৃপায়।(তথ্য সূত্র: বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও সংবাদ মাধ্যম)

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় এই পোস্ট শেয়ার করুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর :
© All rights reserved © 2024
প্রযুক্তি সহায়তায়: csoftbd