জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, এবং এর সরাসরি শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল। ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, বন্যা ও লবণাক্ততার মতো ঘন ঘন দুর্যোগ এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকাকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। যদিও বাংলাদেশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে অত্যন্ত ক্ষুদ্র ভূমিকা রাখে, তথাপি ক্ষতির মাত্রা বিশাল। এসব প্রেক্ষাপটে, ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সম্প্রদায়ভিত্তিক টেকসই কৌশল নির্ধারণে বাস্তবায়ন করেছে একটি পাইলট প্রকল্প ” PROTECT- L&D: জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য জনগণের সহনশীলতায় রূপান্তর ” প্রকল্প।
এই প্র কল্পটি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলায় বাস্তবায়িত হয়েছে। আজ ৩০ জুলাই খুলনা সি এস এস আভা সেন্টারে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা, অর্জিত শিক্ষা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের কৌশল নিয়ে একটি লার্নিং শেয়ারিং মিটিং আয়োজন করা হয়। আজকের সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক)- বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় জনাব মোঃ হুসাইন শওকত, কান্ট্রি ডিরেক্টর- অ্যাকশন এইড জনাব নুজহাত জেবিন, উপ-পরিচালক- মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর জনাব সুরাইয়া সিদ্দিকা, উপ-পরিচালক- জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর জনাব কানিজ মোস্তফা, অতিরিক্ত উপ-পরিচালক- বিভাগীয় কৃষি অধিদপ্তর জনাব মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয় জনাব মমতাজ বেগম, সহকারী প্রকৌশলী পানি উন্নয়ন বোর্ড জনাব আব্দুস সোবহান হাওলাদার, খুলনা জেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সভাপতি জনাব গৌরাঙ্গ নন্দী, খুলনা জে্লা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সম্পাদক জনাব মাহফুজুর রহমান মুকুল সহ আরো অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব, উপকারভোগী এবং সাংবাদিকবৃন্দ।
সভার সভাপতি লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহন কুমার মন্ডলের শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে সভা শুরু হয়। প্রকল্পের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে তুলে ধরেন লিডার্সের ডিরেক্টর প্রোগ্রাম এ বি এম জাকারিয়া। তিনি বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসা ফলাফলের ভিত্তিতে বলেন যে, ২০০৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সাতক্ষীরা ও খুলনার উপকূলীয় পরিবারগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছর গড়ে ১,০২,৪৮৯ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু দুর্যোগ-পরবর্তী সহায়তা কার্যক্রমে বাস্তব ক্ষয়ক্ষতির প্রতিফলন হয় না। বেশিরভাগ পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা কেবল অবকাঠামোর ওপর কেন্দ্রীভূত থাকে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোকে চরম ঝুঁকিতে ফেলেছে। ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেই আমাদের টেকসই সমাধান খুঁজতে হবে।”
বিশেষ অতিথি তাদের বক্তব্যে বলেন, “বৈশ্বিক উষ্ণতা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় মানুষ প্রতিনিয়ত ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে। এসব মানুষের জীবনমান রক্ষায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে হবে।” আরেক বিশেষ অতিথি বলেন, “আমাদের এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা এবং ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন সময় এসেছে, তারা যেন সরাসরি সহায়তা পায় এবং নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে পারে।”
সভায় উপস্থিত একজন উপকারভোগী বলেন, “আগে দুর্যোগ আসলে আমরা শুধু ক্ষতির জন্য প্রস্তুত থাকতাম, এখন আমরা টিকে থাকার পথ জানি। এই প্রকল্প আমাদের শিখিয়েছে কিভাবে দুর্যোগের পরও নতুনভাবে শুরু করা যায়।”
লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক তার বক্তব্যে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের দায় বাংলাদেশ বহন না করলেও, ক্ষতির ভার আমাদের কাঁধে। PROTECT- L&D: প্রকল্পের শিক্ষা আমাদের ভবিষ্যৎ অভিযোজন কৌশলের ভিত্তি তৈরি করবে।”
আজকের লার্নিং শেয়ারিং মিটিং-এর উদ্দেশ্য PROTECT- L&D হল প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করা, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা এবং চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে ভবিষ্যতের জন্য বাস্তবভিত্তিক সুপারিশ প্রদান করা। ” PROTECT- L&D: ” প্রকল্প প্রমাণ করেছে যে, কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন, জ্ঞানভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলার কার্যকর উপায় হতে পারে। এই প্রকল্পের শেখা ও অভিজ্ঞতা আগামী দিনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে মূল্যবান অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
Leave a Reply