সাতক্ষীরায় ভারী বৃষ্টিতে পানিবন্দী শত শত পরিবার

টানা প্রায় দুই সপ্তাহ পর দুইদিন বিরতি দিয়ে সাতক্ষীরা (১৪ জুলাই) ফের শুরু হয়েছে ব্যাপক বৃষ্টিপাত। এতে করে সাতক্ষীরা পৌরসভার নিম্নাঞ্চলের পাশপাশি সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বিল, খাল, পুকুর, মাছের ঘের, রাস্তাঘাট, আউশ ধানের ক্ষেত ও আমন বীজতলা। বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ ও কৃষকরা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্লাবিত এলাকার বহু পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পৌরসভার কামালনগর, ইটাগাছা, পলাশপোলের মধুমোল্লারডাঙি, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বকচরা, রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলার বিল, গদাইবিল, মাঠপাড়া, পার-মাছখোলা ও পুরাতন সাতক্ষীরার মতো নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পৌরসভার ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা। একই সাথে সদর উপজেলার আলিপুর, কাশেমপুর, বালিয়াডাঙ্গা, বাবুলিয়া, লাবসার মাগুরা, খেজুরডাঙি, গোপিনাথপুর, বল্লী, বিনেরপোতা, শাল্যে, মাছখোলাসহ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বহু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে না পারায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব অঞ্চলের বহু পরিবার। ঘরের ভিতর পানি ঢুকে পড়ায় অনেকেই মাচান বানিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন।

প্লাবিত এসব এলাকার কিছু পরিবারকে কলাগাছের ভেলায় চলাফেরা করতে দেখা গেছে। রান্না ঘরে পানি উঠায় পানিবন্দী পরিবারগুলোতে রান্নাবান্না একরকম বন্ধ রয়েছে। চুলায় আগুন জ্বালানো তো দূরের কথা, খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন অনেক পরিবার। টিউবওয়েল ডুবে গেছে পানিতে। বাড়ির উঠানে হাটু সমান পানি। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। চরম দুর্ভোগের মধ্যে রযেছে প্লাবিত এলাকার এসব মানুষ।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস জানায়, মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুর ১২টা পর্যন্ত সোমবার ভোর রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে ১৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই দুপুর ১২ টা পর্যন্ত মোট ৫৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, টানা বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানি জমে গেছে। বুধবার (১৬ জুলাই) থেকে বৃষ্টিপাত কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে, টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রোপা আউশ ধানের ক্ষেত, আমন ধানের বীজতলা। সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় থাকা মৎস্য ঘেরগুলোতেও পানি ঢুকে পড়েছে। অনেক ঘেরে সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বিল একাকার হয়ে গেছে।

কৃষকরা জানিয়েছেন, বীজতলা নষ্ট হওয়ায় এবার আমন রোপণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নিম্নাঞ্চলের পুকুর, সড়ক ও খানাখন্দ তলিয়ে যাওয়ায় ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় প্রতিবছর বর্ষা এলেই ডুবে যায় পৌরসভার নিম্নাঞ্চলের পাশপাশি শহরতলীর বিভিন্ন এলাকা।

সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রশাসক মাশরুবা ফেরদাউস বলেন, দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য পৌর এলাকার ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সব ড্রেনের মুখগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের পৌরসভার কর্মীরা ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে যে সকল খাল রয়েছে তার কচুরিপানা পরিষ্কার করছে, যাতে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হয়।

তিনি আরও বলেন, পৌর সভার পানি নিষ্কাশনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সার্কিট হাউস থেকে বাইপাস পর্যন্ত একটি বড় ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাজেটের সঙ্গে সঙ্গে বাকি কাজগুলোও বাস্তবায়ন করা হবে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহমান তাযকিয়া বলেন, সদর উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলের পাশাপাশি পৌরসভার কয়েকটি এলাকার নিম্নাঞ্চলে জমে থাকা বৃষ্টির পানি যাতে দ্রুত নিষ্কাশিত হতে পারে সেজন্য বেতনা নদীর গাবতলা-উত্তর চাপড়া এলাকায় দেওয়া আড়াআড়ি বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। এখন উজান থেকে পানি দ্রুত ভাটায় নেমে যাচ্ছে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষায় ২ হাজার হেক্টর জমির আউস ধান, ধানের বীজতলা ও সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পেতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *