সাতক্ষীরায় জাতীয় নাগরিক পার্টির পথসভা
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করতে সাতক্ষীরায় পদযাত্রা ও পথসভায় অংশ নিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। শনিবার দুপুট সাড়ে ১২টার দিকে তালা উপজেলার কুমিরা ফুটবল মাঠে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পৌঁছালে স্থানীয় নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে তাদের ফুলেল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এসময় এলাকাজুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।
দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহসহ কেন্দ্রীয় পর্যায়ের প্রায় এক ডজন নেতা এ সফরে অংশ নেন।
কুমিরায় সংক্ষিপ্ত পথসভা শেষে তারা শহরের দিকে রওনা হন। দুপুর দেড়টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের খুলনা রোড মোড়ে শহীদ আসিফ চত্বরে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, রোদ বৃষ্টি ঝড় উপেক্ষা করে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির নেতৃবৃন্দ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সনদ চেয়েছি, বিচার চেয়েছি এবং নতুন সংবিধান চেয়েছি।
কিন্তু সকল জনদাবির বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে একটি পক্ষ। তারা পুরাতন বন্দোবস্ত ধরে রাখতে চায়, তারা পুরাতন রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে চায়, তারা চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসকে টিকিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু আমরা বলেছি, গণঅভ্যুত্থানের পরে, এত মানুষের জীবন দানের পরে, তারা যদি মনে করে, তারা আগের পুরাতন রাজনীতি করবে, তাহলে তা এত সহজ হবে না। গণঅভ্যুত্থানের শক্তি এখনও মাঠে আছে। এখনো তাদের গর্জন রয়েছে।
তারা ভেবেছিল— দুই তিনটা আসন দেখিয়ে, ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারার লোভ দেখিয়ে, তারা গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে কিনে নিবে। কিন্তু যারা বিপ্লবের শক্তি, যারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে, তাদেরকে কিনে নেওয়ার সাধ্য কোন রাজনৈতিক দলের হয়নি। বলা হয়েছে —দরজা নাকি খোলা আছে, আমরা বলেছি, ৫ ই আগস্ট দরজা আমরা খুলে দিয়েছিলাম। ৫ই আগস্ট আমরা বলেছিলাম —আসুন জাতীয় সরকার গঠন করি, দেশটাকে পুনর্গঠন করি, সকল বিভাজন সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে, বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলি। কিন্তু তারা আমাদের সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি।
তারা বলেছিল তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। আবার বলেছিল ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারা ছাড়া দেশ সংস্কারে তাদের কোন সমর্থন পাওয়া যায়নি। আমরা বলেছিলাম —আমরা দেশের ভিতরে শত্রু তৈরি করতে চাই না। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ পুনর্গঠন করতে চাই। আমরা এখনো বলছি —নির্বাচনী ভাগ-বাটোয়ারা নয়, দেশ সংস্কারে আমাদের দরজা এখনো খোলা আছে। যদি এবার দরজা বন্ধ হয়, জনগণ আপনাদেরকে আর ক্ষমা করবে না।প্রিয় সাতক্ষীরাবাসি, আপনারা উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দা। যারা ঘূর্ণিঝড় প্রতিকূলতার মধ্যেও, আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্বেও, এই দেশকে উপকূলে পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন। সাতক্ষীরার শিক্ষার অব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যের অভাবে ব্যবস্থাপনা, যাতায়াতের অব্যবস্থাপনার কথা আমরা জানি।
সাতক্ষীরাবাসি এখনো রেললাইনের সুযোগ পায় না। ৫৪ বছর হয়ে গেছে এখনো রেল সংযোগ সাতক্ষীরায় এসে পৌঁছায়নি। আমরা কি সাতক্ষীরায় রেললাইন চাই? আমরা কি সাতক্ষীরার উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা চাই? আমরা কি সাতক্ষীরায় উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চাই? জনতার উদ্দেশ্যে এমন প্রশ্ন রেখে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের জলবায়ু রক্ষা করতে হবে, আমাদের সুন্দরবন ও উপকূল রক্ষা করতে হবে। জলবায়ু নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ করবে। সাতক্ষীরার মাটি ও মানুষকে রক্ষা করার জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ করবে।
আপনারা জাতীয় নাগরিক পার্টির সাথে থাকবেন—আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, চাঁদাবাজদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নাই। যে দেশের ছাত্র- মেহনতি জনতা ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে দিল্লি পাঠাতে পারে, সে দেশের ছাত্র-জনতা কোন চাঁদাবাজকে ভয় পাবে না। ছাত্র জনতা ও নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, নতুন করে প্রস্তুতি নিন।
আমাদেরকে বৈষম্য ও দুর্নীতি বিরোধী ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে হবে। সেকারণে আমাদের শহীদেরা রক্ত দিয়েছিল, সাতক্ষীরার মানুষ রক্ত দিয়েছিল তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় এনসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, আমাদের যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পূর্ব পর্যন্ত আমাদের এ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সাতক্ষীরা জেলার সমম্বয়ক কামরুজ্জামান বুলুর সভাপতিত্বে পথসভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মেজবাহ কামাল ও চিকিংসক তাসনীম জারা। এছাড়া মঞ্চে স্লোগান দেন দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
পথসভার আগে শহীদ আসিফ চত্বর এলাকায় জুলাই-বিপ্লবে আহত ও নিহতের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন নেতৃবৃন্দ। পরে একটি পদযাত্রা শহীদ আসিফ চত্বর থেকে বের হয়ে নিউমার্কেট মোড়ে শেষ হয়। এরপর নিউমার্কেট এলাকায় আল বারাকা হোটেলের দ্বিতীয় তলায় জেলা কার্যালয় উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
এতে শত শত নেতাকর্মী অংশ নেন, যাদের অনেকেই ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও দলীয় পতাকা বহন করছিলেন।
পদযাত্রা ও জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে আগেই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কার করা হয়।# সাতক্ষীরা প্রতিনিধি। তাং-১২.০৭.২৫ ছবি আছে।
Leave a Reply