দীর্ঘদিন পর জাতীয় স্টেডিয়ামে ফিরেছে বাংলাদেশ। ফেরার উপলক্ষ্যটা রাঙাতে দরকার ছিল দারুণ এক জয়। জাতীয় স্টেডিয়ামে দুই মিডফিল্ডারের কল্যাণে সেটাই করেছে বাংলাদেশ। হামজা চৌধুরী আর সোহেল রানার দুই গোল বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে দাপুটে এক জয়।
ঘরের মাঠে হামজা চৌধুরীর অভিষেক। ফাহামিদুল প্রথমবার জাতীয় দলের জার্সিতে। মাঝমাঠে জামাল ভূইয়া আর হামজা চৌধুরীর রসায়ন। বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তরা যেমনটা দেখতে চেয়েছিলেন কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা বুঝি সেটাই পূরণ করেছেন।
বাংলাদেশের শুরুটাও ছিল দারুণ। রাইট উইং থেকে ভয় ধরানো আক্রমণ হয়েছে। গোল পেতে অবশ্য খুব বেশি সময়ও লাগেনি বাংলাদেশের৷ ম্যাচের মাত্র ছয় মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে জামাল ভূঁইয়ার কর্ণার কিক নেন। সেই কিকে উড়ে আসা বলে হেড করতে সময়ক্ষেপন করেননি বারের খুব সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হামজা চৌধুরী।
হোম ম্যাচে অভিষেকেই গোল করে দর্শকদের বাহবা কুড়ান ইংলিশ লিগে খেলা মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী। ইতালি প্রবাসী ফরোয়ার্ড ফাহমিদুলের পাস ৩০ মিনিটে ফাহামেদুল থেকে রাকিব বল পেয়ে শট করেন। গড়িয়ে আসা বলে জামাল ভূঁইয়ার শট পোস্ট ঘেষে বাইর চলে যায়।
আজকের ম্যাচে অভিষেক হয়েছে ফাহমিদুল ইসলামের। তার গতির ঝড় দেখেছে ঢাকা স্টেডিয়ামের দর্শকরা। হামজা চৌধুরী আর ফাহামেদুল ইসলামের গতির কাছে ম্যাচের শুরু থেকেই কুপোকাত হয়ে পড়ে ভুটান। প্রায়ই ভুটানের রক্ষণভাগ ভেঙ্গে চুরমার হয়েছে।
ফাহমেদুল বাম প্রান্তে বারবার গতি দিয়ে পরাস্ত করছিলেন ভুটানের রক্ষণকে। অন্তত দুবার ভালো কাটব্যাক ছিল, যদিও সেটা গোলে পরিণত করা হয়নি। আবার ডানপ্রান্তে কাজেম শাহ কিংবা তাজউদ্দিনরাও ছিলেন উজ্জ্বল। তবে সবকিছু ছাপিয়ে প্রথমার্ধে গোল আর পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। ১-০ ব্যবধান নিয়েই টানেলে ফেরে স্বাগতিকরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বাংলাদেশের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা হামজা, জামাল ভুইয়া ও কাজেমকে তুলে নেন৷ তাদের পরিবর্তে হৃদয়, মোরসালিন ও ইব্রাহিম নামেন। প্রীতি ম্যাচে নির্ধারিত ৫ জনের বেশিও খেলোয়াড় বদল করা যায়। সিঙ্গাপুর ম্যাচের জন্য কোচ ফুটবলারের পরখ করছেন।
দ্বিতীয়ার্ধের তিন মিনিটে সোহেল রানা দুর্দান্ত গোল করেন। দূরপাল্লার শটে ভুটানের জালে বল পাঠান সিনিয়র এই ফুটবলার। বাংলাদেশ ২-০ লিড পায়। রাকিব হোসেন খানিকক্ষণ পর আরেকটি গোল মিস করেন। খালি বারপোস্টেও বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে গোল মিসের হতাশায় ভুগেন রাকিব।
কাজেম এবং হামজাকে আগেই আগেই উঠিয়ে নিয়েছিলেন কোচ। ফাহামিদুলকেও একপর্যায়ে উঠিয়ে নেন ক্যাবরেরা। তবে মাঠ ছাড়ার আগেও দারুণ এক মাপা ক্রস ফেলেছিলেন বক্সে। তবে ভুটানি গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় সেখান থেকে গোল আসেনি।
ফাহামিদুল ইসলাম ওঠার পর খেলার গতি অবশ্য খানিক কমেছে। দুই গোল পাওয়ার পর বাংলাদেশ অনেকটাই নির্ভার হয়েই খেলেছে। তারমাঝেও ফয়সাল আহমেদ ফাহিম বা শেখ মোরসালিনরা চেষ্টা করেছিলেন ব্যবধান বাড়াতে।
খেলার ধারার অনেকটা বিপরীতে ৭৬ মিনিটে গোল প্রায় হজমই করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। কর্নার থেকে আসা বল অনেকটাই ফাঁকায় পেয়ে যান সেলটব দর্জি। তবে হেড থাকেনি লক্ষ্যে। ২-০ গোলের লিড অক্ষুন্ন থাকে বাংলাদেশের।
ম্যাচের শেষদিকে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা খানিক বাড়িয়েছেন অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার সাদউদ্দিন। ইনজুরিতে মাঠ ছেড়েছেন স্ট্রেচারে করেই। আগেই খেলোয়াড় বদলের কোটা শেষ হওয়ায় শেষ কয়েকমিনিট বাংলাদেশ খেলেছে ১০ জন নিয়ে।
সাদ মাঠ ছাড়ার পরেই বাংলাদেশ দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিল। তবে ভুটান গোলরক্ষক আরও একবার হতাশ করেছেন বাংলাদেশ দল আর জাতীয় স্টেডিয়ামে আসা দর্শকদের। ম্যাচের ইনজুরি সময়ে জিগমে নামগয়ালের শট একেবারে কাছ থেকে দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশি গোলরক্ষক মিতুল মারমা। পুরো ম্যাচে খুব একটা পরীক্ষা দিতে না হলেও শেষের এই সেইভে দলের ত্রাতা হয়েছেন মিতুল।
ম্যাচে ফাহামিদুলের পাশাপাশি অভিষেকের স্বাদ পেয়েছেন ফরোয়ার্ড আল আমিন। ঘরোয়া ফুটবলে ভালো খেলার পুরস্কার পেলেন ভুটান ম্যাচে। সেই সাথে আজকের ম্যাচে ৬ খেলোয়াড়কে বদল করেছেন হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। সিঙ্গাপুর ম্যাচের আগে দলের খেলোয়াড়দের পরখ করতে চেয়েছেন তিনি। সাধারণ ফিফা প্রীতিম্যাচে ৫ বদলের নিয়ম থাকলেও ক্যাবরেরা আজকের ম্যাচে এনেছেন ৬ বদল।
Leave a Reply