পরবর্তী অর্থবছরের বাজেটে যেসব পরিবর্তন আসছে

ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বদলে গেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে, তা স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী একটি বাজেট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে—এটি হবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় ছোট এবং সংসদের বাইরে ঘোষণা করা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের প্রণীত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বাজেটের মূল লক্ষ্য হবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং স্বল্প আয়ের মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া।

সাংবিধানিক কাঠামোর ব্যত্যয় এবং সংসদ না থাকায় এবার সংসদে বাজেট উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। ফলে আসন্ন বাজেটটি সরকারি টেলিভিশন বিটিভিসহ বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে সম্প্রচার করা হবে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালাহউদ্দিন আহমেদ সোমবার বিকেল ৪টায় জাতির উদ্দেশে বাজেট বক্তব্য দেবেন।

রাজস্ব ও ব্যয়ের খসড়া চিত্র

  • মোট আয়: ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা
  • এনবিআর থেকে: ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি
  • এনবিআর বহির্ভূত: ১৯ হাজার কোটি
  • কর বহির্ভূত আয়: ৪৬ হাজার কোটি
  • অনুন্নয়ন ব্যয়: ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৯০০ কোটি
  • উন্নয়ন ব্যয় (এডিপি): ২ লাখ ৩ হাজার কোটি
  • বাজেট ঘাটতি: ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা

এই ঘাটতি মেটাতে সরকার অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে।

মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা

  • মূল্যস্ফীতি: ৬.৫ শতাংশে সীমিত রাখার লক্ষ্য
  • জিডিপি প্রবৃদ্ধি: ৫.৫ শতাংশ

সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান
বাজেট পরিকল্পনায় গ্রামীণ অবকাঠামো, রাস্তা-ঘাট সংস্কার, নির্মাণ কাজে জোর দিয়ে কর্মসংস্থান তৈরির কথা বলা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে বলেও জানা গেছে।

মতামত চাওয়া হবে নাগরিকদের কাছ থেকে
এই ব্যতিক্রমী বাজেট ঘোষণার পর অর্থ মন্ত্রণালয় নাগরিকদের কাছে মতামত চাইবে, যা যাচাই-বাছাই করে ২৩ জুনের পর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে। সেখানে অনুমোদিত বাজেট রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ১ জুলাই ২০২৫ থেকে কার্যকর করা হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *