আশাশুনির কাদাকাটিতে কাবিখা প্রকল্পের মাটির কাজে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ

  •  খাল খননের মাটি বিছিয়ে রাস্তা নির্মান
  •  পিআইও বলছেন কাজ শেষ হয়নি
  • প্রকল্প সভাপতি বলছেন কাজ শেষ টাকাও পেয়েছি
আশাশুনি প্রতিনিধি:
আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নে কাবিখা কর্মসূচির রাস্তা নির্মান কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার লুকোচুরি, প্রকল্পের সভাপতির ভূমিকা ও কাজের পরিণতি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিরুল ইসলামের বিশেষ ব্যবস্থাপনায়, কাদাকাটি ইউপি চেয়ারম্যান দিপঙ্কর সরকার দিপের নেতৃত্বে মহিলা মেম্বার গীতা রানির (প্রকল্প সভাপতি) নামে টেংরাখালী হাই স্কুল থেকে শফিকের মৎস্য ঘের পর্যন্ত রাস্তা নির্মান (মাটির) কাজ শেষ হয়েছে। ৩০০ মিটার (১০ চেইন) রাস্তার কাজে ব্যয় বরাদ্দ ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। স্কুল থেকে শ্মশান ঘাট পর্যন্ত রাস্তার প্রস্থ ১২ ফিট, স্লোবসহ ২২ ফিট ও উচ্চতা ৫ ফিট করার কথা থাকলেও সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রস্থ (মাথা) প্রায় ১২ ফিট, স্লোবসহ ১৫ থেকে ১৭ ফিট এবং হাইড করা হয়েছে ৬ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ৩ ফিট করে। তবে বেশীর ভাগ স্থানে দেড়-দুই ফিট করে করা হয়েছে। শ্মশান ঘাট থেকে সফিকের ঘের পর্যন্ত চওড়া (মাথা) ১০ ফিট, স্লোবসহ ২০ ফিট ও হাইড ৫ ফুট করে করার কথা থাকলেও তদস্থলে করা হয়েছে চওড়া (মাথা) ৭-৮ ফিট, স্লোবসহ ১০-১১ ফিট ও হাইড করা হয়েছে ৩-৪ ফিট করে। এছাড়া খাল খনের সময় রাস্তার পরে ও পাশে রাখা মাটি (যা খালের পাড় হিসাবে ড্রেজিং করে পৃথক প্রতিরক্ষা বাঁধ হওয়ার কথা) টেনে নিয়ে রাস্তায় বিছিয়ে দিয়ে রাস্তার কাজ করা হয়েছে।
এলাকাবাসীর যুগ যুগ ধরে রাস্তা নির্মানের দাবী পুরনে সরকারি বরাদ্দে কাজ শুরু হলে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছিল। কিন্তু তাদের স্বস্তিকে ধুলিস্মাত করে দিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লোপাটের ঘটনা দেখে তাদের চোখ ছানাবড়া হতে বসেছে। তাদের অভিযোগ ও জিজ্ঞাসা, এহেন জলজ্যান্ত দুর্নীতি প্রকাশ্যে করার পরও কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা? এভাবে কাজ শেষ করা হলে সরকারের লক্ষ্য ব্যর্থ হবে এবং খুব দ্রুত রাস্তা পাকাকরনের পরিবর্তে পুনরায় মাটির কাজ করা লাগবে। এলাকার কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান ইউনিয়নের বড় প্রকল্প ইউপি সদস্যদের সভাপতি না করে মহিলা মেম্বারদের সভাপতি করে নিজেই কাজ বাস্তবায়ন করে থাকেন। কোন কোন কাজ আবার মহিলা মেম্বার সভাপতি নামে থাকলেও তার অজ্ঞাতে কাজ করেন চেয়ারম্যান নিজে বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রকল্পের সভাপতি মহিলা মেম্বার গীতা রানী সাংবাদিকদের জানান, চেয়ারম্যানকে নিয়ে তারা যৌথ ভাবে কাজটি করেছেন। কাজ দেখতে পিআইও সাহেব এসেছিলেন, ২/১ স্থানে সমস্যা থাকায় সেগুলো ঠিক করতে বললে তা ঠিক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কাজের সমস্ত টাকার চেক তারা নিয়েছেন। পিআইও বলেছিলেন, বসে আছেন কেন? চেক নিয়ে যান, তখন চেক নিয়ে এসেছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর মোড়ল ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মেম্বার অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান মহিলা মেম্বারদের নামে বড় বড় প্রকল্প নিয়ে নিজেই কাজ করে থাকেন। কাজ শেষে সভাপতিকে ২/১০ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে থাকেন। যাকে সভাপতি করা হোক সেই কাজ করবে কিন্তু কেন অন্যের নামের কাজ তিনি নিজে করেন আমাদের জিজ্ঞাসা।
এলাকাবাসী জানান, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের তিন তিন বারের সভাপতি চেয়ারম্যান দিপঙ্কর সরকার দিপ আওয়ামীলীগের সময় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে লুটেপুটে খেয়েছেন, এখন নির্দলীয় সরকারের সময়ও মহিলা মেম্বারদের নামে কাজ দেখিয়ে লুটেপুটে খাচ্ছেন। এর কি কোন প্রতিকার হবে না?
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, প্রকল্পের সভাপতি মহিলা মেম্বারকে আমি চিনিনা, তার সাথে আমার দেখা হয়নি। কাজ ভাল না হওয়া স্থানে পুনরায় কাজ করিয়ে নেয়া হয়েছে। কাজের চেক এখনো দেওয়া হয়নি বলে তিনি বলেন, বর্ষায় কাদা হয়ে যাওয়ায় সব কাজ আমি দেখতে পারিনি। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান দীপঙ্কর সরকার দ্বীপের কাছে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *