বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, আজকে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের পক্ষ থেকে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। চলমান যে সংস্কার প্রক্রিয়া, এই সংস্কার প্রক্রিয়াটির প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছে এবং দ্বিতীয় ধাপের সূচনা লগ্নে আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমরা জানি যে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পরে, বাংলাদেশের সংস্কারের যেই কথাটি খুব জোরেশোরে সামনে আসে এবং সকলেই এই সংস্কারের দাবি জানা বা সংস্কারের চাহিদা বা সকলের কাছেই এই বাংলাদেশে একটি ব্যাপক ভিত্তিক সংস্কার সাধিত হোক। এ অভিপ্রায় সকলেরই ছিল।
সেই জায়গা থেকে ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে দিয়েছে। সেই ছয়টি কমিশনই তারা তাদের সংস্কারের জন্য প্রস্তাবনা তারা তৈরি করেছে। সেই প্রস্তাবনা নিয়ে এখন জাতীয় ঐক্যমত গঠন করার জন্য ছয়টি কমিশনের প্রধানদেরকে নিয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেই কমিশনের আগামী দিনের কার্যক্রম পরিচালনার যে রূপরেখা সেটি ঘোষণা করা হয়েছে আজকে এবং সেই আগামী দিনের কার্যক্রম পরিচালনার একটি উদ্বোধনী প্রোগ্রাম ছিল আজকে। সেখানে ছয়টি কমিশনের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাবনা গুলো তৈরি করা হয়েছে, সেই প্রস্তাবনাগুলোর ভিত্তিতে তারা আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে ইন্ডিভিজুয়াল, আলাদা আলাদা সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকবেন এবং তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন এবং তাদের কাছ থেকে, তাদের কাছে এই প্রস্তাবনাগুলো কমিশনের প্রস্তুতকৃত প্রস্তাবনাগুলো তাদের কাছে দেয়া হবে আগে। তারা এটাকে এনালাইসিস করবেন, করে তারপরে প্রত্যেক দলের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবনাগুলো সম্পর্কে দলীয় প্রস্তাবনা এবং দলীয় পরামর্শ, মতামত ব্যক্ত করা হবে।তিনি বলেন, সেই ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টা একটা টাইম ফ্রেম তিনি ঘোষণা করেছেন যে, আগামী, আশা করা যায় যে ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপ সম্পন্ন হয়ে, সংস্কারগুলো ঐক্যমতের ভিত্তিতে সাধিত হবে। সংবিধান সংস্কার হবে, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার হবে, বিচার এবং পুলিশ সহ অন্যান্য যে বিষয়গুলোতে সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হয়েছে, সকল সংস্কার গুলো সম্পন্ন হবে, এটা আশা করা হচ্ছে।
আজকে আলোচনার মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো আরেকটা বিষয় ব্যাপকভাবে আলোচনায় নিয়ে এসেছিল, সেটি হলো জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এই প্রশ্নে আমরা দেখেছি যে, রাজনৈতিক দলগুলো দুই ভাগে বিভক্ত রয়েছে। অনেকে এই বর্তমান যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার যে ভন্ডুল অবস্থা, সেই জায়গায় ভঙ্গুর অবস্থার কারণে, অনেকে অনতিবিলম্বে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দাবি করেছে। আবার অনেক রাজনৈতিক দল তারা বলেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি এই মুহূর্তে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের দিকে যাওয়া হয় তাহলে এটি একটি সিভিল ওয়ার দিকে পরিবেশ চলে যেতে পারে। এজন্য তারা সতর্ক করেছেন যে কোনভাবেই যেন এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা হয়। সেই সাথে সকলে আরেকটি বিষয় ঐক্যমত পোষণ করেছে এবং সকলের অভিন্ন ঘোষণা ছিল, যেন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার এবং সেই ফ্যাসিবাদী শক্তি, তাদেরকে যেন কোনভাবে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করার কেউ কোন অপচেষ্টা না চালায়।
তিনি আরো বলেন, এই আগামী নির্বাচনের এই প্রস্তুতি পর্বে বা কোন অজুহাতে সেই পতিত সরকার বা তারা সেই ফ্যাসিবাদী শক্তি, তারা যেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয় পাওয়ার সুযোগ না পায়। সেই সঙ্গে তাদের বিচার ব্যবস্থাটাকে নিশ্চিত করার জন্য, অতি দ্রুত বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের আগেই অন্তত দৃশ্যমান কিছু বিচার প্রক্রিয়া যেন সম্পন্ন হয় এবং বিচার যেন কার্যকর হয়। সেই ধরনের কিছু দাবি উত্থাপিত হয়েছে এবং সেই ধরনের কিছু আশ্বাসও আমরা সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল মহল থেকে পেয়েছি।
কোন কোন উপদেষ্টা বলেছেন এই ধরনের কথা, যে বা সরকারি পক্ষ থেকে এ ধরনের আশ্বাস শোনা যাচ্ছে। যে অন্তত আগামী নির্বাচন বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই বিগত এই ফ্যাসিবাদী শক্তির এবং এই হত্যাকারী শক্তির, তাদের কিছু বিচার এটা দৃশ্যমান হবে, সেই আশাবাদ উনারা ব্যক্ত করেছেন এবং আমরাও সেই ভাবে আশাবাদী। তো এই ছিল মোটামুটি আজকের কথা।
খেলাফত মজলিশের আমির বলেন, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যেই কথাটি বলেছি, আমরা বলেছি যে অবশ্যই এখন যেই সংস্কারের যেই দ্বিতীয় প্রক্রিয়ার যে দ্বিতীয় ধাপ শুরু হচ্ছে, সেখানে সকল দলগুলো নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করবে এবং তারা অংশগ্রহণ করবে, সেই সাথে আমরা চাই যে, এই সংস্কার প্রস্তাবনা এবং সেটা বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হওয়ার শুরুতেই যে বিষয়গুলো সমাধান হওয়া উচিত, নির্ধারিত হওয়া উচিত, সেগুলো হলো আগামীর বাংলাদেশের ভিত্তি কি হবে? আগামীর সংস্কারের ভিত্তি কি হবে?
সেজন্য আমরা মনে করি যে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের যে একটি ঘোষণাপত্র জাতির সামনে ঘোষিত হওয়ার কথা, আমরা জোর দিয়েছি সেটি যেন অনতিবিলম্ব সেই ঘোষণাপত্র যেন জাতির সামনে ঐক্যমতের ভিত্তিতে চলে আসে। সেই সাথে আগামীর বাংলাদেশ আমরা কেমন দেখতে চাই, অবশ্যই ২০২৪ এর আগস্ট বিপ্লবের পূর্ববর্তী বাংলাদেশের আমরা পুনরাবৃত্তি চাই না।
এজন্য বাংলাদেশটাকে আমরা যেভাবে আগামীর বাংলাদেশ দেখতে চাই, সেখানে যেই অতীতের যেই বাংলাদেশের যে ঘটনা প্রবাহ, সেই ঘটনা প্রবাহের সূত্র ধরে ৪৭, ৭১ এবং ২৪ এর যে বাংলাদেশ, যেই ঘটনা প্রবাহ, সেই ঘটনার ভিত্তিতে যেন আগামীর বাংলাদেশ গড়ে ওঠে, সেই ধরনের প্রত্যাশা আমরা ব্যক্ত করেছি।
সংবাদকর্মী জানতে চান, নির্বাচন নিয়ে আপনাদের ইস্যুতে আপনাদের অবস্থান কি?
জবাবে মামুনুল হক বলেন, নির্বাচন ইস্যুতে আমাদের বক্তব্য সুনির্দিষ্ট, সেটাই যে প্রয়োজনীয় সংস্কার হবে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ হওয়ার পরে চলতি ২০২৫ সালের মধ্যেই, ২৫ সালের শেষ নাগাদ জন্য অন্তত জাতীয় নির্বাচনটা অনুষ্ঠিত হয়, সেই প্রত্যাশা আমরা রাখছি।
পরবর্তী প্রশ্নে সংবাদকর্মী আরো জানতে চান, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে আপনাদের মন্তব্য কি?
এর জবাবে মামুনুল হক বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা, আমাদের দলের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোন বক্তব্য রাখিনি এবং এই ব্যাপারে আমাদের এই মুহূর্তে কোন বক্তব্য নেই। আমরা মনে করি যে, এই ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত হওয়া প্রয়োজন। এরপরে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আগে বা পরে হওয়া এটা কোনভাবেই রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ সহ এই নির্বাচনের দিকে দেশ যাওয়ার কোনভাবে উচিত হবে না।
Leave a Reply