নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে যানজট নিরসনের নামে ট্রাক থেকে জোর পূর্বক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ের প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সাতক্ষীরা জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবদুস সবুর ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরিত সংগঠনের অফিসিয়াল প্যাডে এ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, সাতক্ষীরা জেলা ট্রাক মালিক সমিতি জেলাতে দীর্ঘদিন ট্রাক মালিক এবং শ্রমিকদের সাথে সুসম্পর্ক রেখে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে। যার ফলশ্রুতিতে সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ট্রাক মালিক সমিতির নিজস্ব অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগের খাস জমিতে একটি ট্রাক টার্মিনাল স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে ভোমরা স্থলবন্দরের কিছু স্বার্থান্বেষী মহল দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরবর্তী পরিস্থিতিতে বন্দরে আগত ট্রাক হতে যানজট নিরসনের নামে ট্রাক প্রতি জোরপূর্বক অবৈধ ভাবে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে বর্তমানে ট্রাক মালিক এবং শ্রমিকদের মাঝে মারমুখি অবস্থান বিরাজ করছে। ভোমরা স্থলবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে অনতিবিলম্বে বন্দরে যানজট নিরসন পার্কিং এর নামে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধের কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। অন্যথায় ভোমরা স্থলবন্দরে স্বাভাবিক কার্যক্রম এবং রাজস্ব আদায় ব্যাহত হওয়ার আশংঙ্কা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোমরা স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, বন্দরে প্রবেশদ্বারে কিছু স্থানীয় যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বিভিন্ন ট্রাক দাঁড় করিয়ে জোর পূর্বক একটি চাঁদা আদায়ের রশিদ হাতে ধরিয়ে দিয়ে ৫০টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এসময় তাদের ওই যুবকদের কাছে সাংবাদিক পরিচয়ে কিসের টাকা নেওয়া হচ্ছে জিজ্ঞাসা করা হলে তাদের মধ্য থেকে শহিদুল ডাকাত নামক এক ব্যক্তি জানান, ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু হাসানের নির্দেশে যানজট নিরসনে ট্রাক পার্কিং বাবদ ৫০টাকা নিয়ে একটি করে স্লিপ দেয়া হচ্ছে। এটা কোন চাঁদাবাজি না। যা ভোমরা স্থবন্দর ট্রাফিকও জানে। আর যা কথা বলার দরকার আপনারা সিএন্ডএফ সভাপতির সাথে কথা বলেন। বন্দরের কয়েকজন ট্রাক চালকের সাথে চাঁদাবাজির বিষয়ে কথা বললে তারা জানান, যানজট নিরসনের জন্য বন্দরের প্রবেশদ্বারে আসলেই জোর পূর্বক কিছু যুবক ট্রাক প্রতি ৫০টাকা করে চাঁদা নিচ্ছে। প্রতিদিন এ বন্দরে ৩শ থেকে ৪শ ট্রাক হতে প্রায় ২০হাজার টাকা অবৈধভাবে চাঁদাবাজি করছে।
এ ব্যাপারে ভোমরার সিএন্ডএফ’র সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা জানান, যানজট নিরসনের জন্য স্থানীয়রা এ উদ্যোগ নিয়েছে। ট্রাক প্রতি টাকা নেওয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি আরো জানান, স্থানীয় সাদ্দাম, মন্টুসহ কিছু যুবক যানজট নিরসনে কাজ করছে। তারা আমাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছে।
ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ সভাপতি আবু হাসান ৫০ টাকা করে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা বন্দরের কয়েকটি সংগঠনের সাথে কথা বলে যানজট নিরসনের জন্য সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে সব কিছু করা হয়েছে। আর যারা কাজ করছে খরচ হিসেবে এ টাকা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু একটি কুচক্রিমহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ভাবে এসব চাঁদাবাজির অভিযোগ এনেছে।
ভোমরা স্থবন্দর ট্রাফিকের উপ-পরিচালক মোঃ রুহুল আমিন এ প্রতিনিধিকে বলেন, চাঁদাবাজির ঘটনা আমার জানা নেই। আর যদি কেউ বাইরে চাঁদাবাজি করে সেটা আমাদের কিছু করার নেই। তার জন্য প্রশাসন দেখবে বলে জানান।
সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) বলেন, একটি চাঁদাবাজির অভিযোগ পেয়েছি। সেখানে ফোর্স পাঠানো হয়েছিল। তবে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে, যদি এধরনের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
এই ব্যাপারে ট্রাক মালিকরা দ্রুত চাঁদাবাজি বন্ধ করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Leave a Reply