বিশেষ প্রতিবেদক:
সাতক্ষীরায় বিগত সরকারের সময়ে সুযোগ-সুবিধা ভোগকারী ঠিকাদার সফিউর রহমান সফির অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। সফি চাঁদা আদায়ে ব্যবহার করতেন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা ও সংসদ সচিবালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে। আলোচিত সফির বিরুদ্ধে এলাকাবাসী সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত গণঅভিযোগ দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়, দূর্নীতি দমন কমিশন-দুদক, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে জমা দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে সফিউর রহমান সফি বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে পৌর আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে অর্থ আদায় করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিগত ১৫ বছর নিজেকে আওয়ামী লীগ সরকারের লোক, পৌর আওয়ামী লীগ নেতা, বিগত সরকারের একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দু’টি বিভাগে (পওর-১ ও ২) নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রাখতেন এই সফি। ঠিকাদারি কাজের চেয়ে তার আগ্রহ বেশি ছিলো চাঁদাবাজিতে। ইচ্ছামত চাঁদা দাবি করতেন, না দিলেই হয়রানি। ফোন ধরিয়ে দেওয়া হতো কথিত ওই দুই কর্মকর্তাকে। নতুন কাজের টেন্ডার হলেই তাকে একটা কাজ দেওয়াই লাগতো। নিজের লাইসেন্স না থাকার পরও এভাবে মানসিক নির্যাতন করতেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের। ওই সময়ে শফির চাঁদাবাজির বিষয়টি প্রকাশ্যে না আসলেও এখন মুখ খুলতে শুরু করেছে ক্ষতিগ্রস্ত এসব কর্মকর্তারা।
অভিযোগকারী এলাকাবাসী জানায়, বিগত ২০০৩-২০০৪ সালে মানবপাচার করে শফি ও তার সহযোগীরা অর্থ আদায় করে কয়েকজনকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। ভুক্তভোগীরা হলেন, পাবনা জেলার মোঃ সুলতানের ছেলে আজিম ওরফে জুয়েল, মোঃ কলিমুদ্দিন বিশ^াসের ছেলে মোঃ ইলিয়াস, মোঃ আরিফ হোসেনের ছেলে মোঃ ফিরোজ, রাঙ্গামাটি জেলার মোঃ আসলাম হোসেনের ছেলে মোঃ জাকির হোসেন, ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার সত্যনগর গ্রামের মোস্তফা চৌধুরী ও আনোয়ার হোসেনের পরিবারের কাছ থেকে প্রায় পনেরো লক্ষ টাকা ও পাসপোর্ট আত্মসাত করে। এই ঘটনায় আদালত শফিকে এক বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন।
এছাড়াও শফি ঢাকা, নীলফামারী ও সাতক্ষীরা জেলার ১০ থেকে ১৫ জনের নিকট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সফি তার বর্তমান শ্যালিকার (স্ত্রীর বোন) সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিভিন্ন ধরণের চাপ প্রদান করে। শ্যালিকা রাজি না হয়ে পরিবারের মতে বিয়ে করেন। সে কারনে ওই দম্পতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন লোকজন দিয়ে মামলা করে তাদের পারিবারিক জীবন বিষিয়ে তুলেছেন বলেও কার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, সফির বাড়ির সামনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস হওয়ায় নির্বাহী প্রকৌশলীদেরকে জিম্মি করে রাখতে নানা পন্থা অবলম্বন করেন। অফিসাররা যদি তার কথা না শুনলে তাদের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দূর্নীতি দমন কমিশনে বিভিন্ন আবেদন করে। নিজের কোন লাইসেন্স না থাকলেও তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীদের অন্যের নামে কাজ দিতে বাধ্য করেন। এর আগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল খায়েরের কাছ থেকেও অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করেছে সে। পরে তিনি অনৈতিক সুযোগ সুবিধা দিতে রাজি না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে লাগাতার বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ করে চলেছে।
বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী সালাউদ্দিনের নিকট হতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অর্থ আদায় করেছে। পওর-১ ডিভিশন থেকে ৩ লক্ষ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়েছে সফি। গত ১৮ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে ২ লাখ ও ১ লাখ করে দুটি স্লিপে মোট তিন লক্ষ টাকা ৩ লাখ টাকা সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখায় মেসার্স শফি এন্টারপ্রাইজ নামের একাউন্টে জমা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বিএনপি অফিসের নাম করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলীর থেকে মোট অংকের চাঁদা নিয়েছে।
এদিকে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন রূপ ধারণ করেছেন ভয়ঙ্কর সফিউর রহমান সফি। জানা গেছে, বর্তমানে নিজেকে বিএনপির স্থানীয় নেতা পরিচয় দিয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ এর নিকট থেকে সম্প্রতি দুই লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন সফি। একইভাবে নির্বাহী প্রকৌশলী-২ এর নিকট থেকে শহরের ইটাগাছাস্থ ওয়ার্ড বিএনপির অফিসের চেয়ার ও টেবিল কেনার জন্য ২৫ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছেন কথিত বিএনপি নেতা ও একসময়ের ঠিকাদার সফি।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ দুই কর্মকর্তাই সফিকে চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন। তবে, ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রচণ্ড চাপে আছি, আমার মানসিক যন্ত্রণায় আছি। এসব বিষয়ে সংবাদপত্রে না লেখার অনুরোধ করেন দুই নির্বাহী প্রকৌশলী।
সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম বলেন, সফিউর রহমান সফি নামের কোন ব্যবসায়ী বা ব্যক্তি আমাদের সংগঠনে নেই। দলের নামে চাঁদা দাবি করেল তাকে আটকে প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে বলেন এই রাজনীতিবিদ।
শহরের ইটাগাছা এলাকার শাহীন বলেন, সফি আমাদের এলাকায় থাকলেও তার বাড়ি মূলত সীমান্তে। সাতক্ষীরা শহরে ‘ফটকা সফি’ নামে পরিচিত। তিনি কয়েক বছর আগে ঠিকাদারী করতেন এখন বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও শহরের বিভিন্ন শেণিপেশার মানুষের বিরুদ্ধে ভূয়া অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করেন। মানুষকে জিম্মি করে চাঁদা আদায় করেন। বর্তমানে তার নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই।
অন্যদিকে, চাঁদাবাজ সফির হাত থেকে রেহাই পাননি সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রকৌশলী মো: আবুল খায়ের। তিনি জানান, দুইজন সরকারি কর্মকর্তার ফোন ধরিয়ে দিয়ে সফি তার কাছ থেকে দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে জোরপূর্বক চাঁদা নিয়েছে। যার মধ্যে একজন সংসদ সচিবালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করতেন। টাকার লোভ তার পিছু ছাড়েনি। বিভিন্ন ভূঁয়া ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে সফি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জিম্মি করতেন। তিনি পরবর্তীতে টাকা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে নানান চক্রান্ত করে করেছে এই সফি। তখন টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। সময় পরিবর্তন হয়েছে আমি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আবুল খায়ের আরও বলেন, কোন প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার পরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে যথাক্রমে জিও ও এও জারি করার পরে এডিপিতে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। কাজেই ভূঁয়া প্রকল্প হলে কখনোই বরাদ্দ পাওয়া যাবে না। বেড়িবাঁধে টেন্ডারবিহীন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়নি। ডিপিএম কাজ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও রুলস অনুযায়ী একটি অনুমোদিত পদ্ধতি। এই পদ্ধতি কখন কোথায় ব্যবহার করা যাবে সে বিষয়ে সুষ্পষ্টভাবে ক্রয় আইন ও ক্রয় বিধিমালায় বলা আছে। ওই বিধিমালা অনুসরন করে ডিপিএম পদ্ধতি ব্যবহার করে ফনি, আম্ফান, বুলবুল, ইয়াস বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের পরে সাতক্ষীরা এলাকার বেড়ীবাঁধ মেরামত করা হয়। আম্ফানের সময় ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা এতো বেশি হয়েছিল যে সেনাবাহিনীকে পর্যন্ত মোতায়েন করতে হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে বেড়িবাঁধে ডিপিএম কাজের ঘোষণা করা হয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর মাধ্যমে। তিনি নিজে এসে বাঁধ পরিদর্শন সাপেক্ষে বিবেচনা করেন যে বাঁধে এ মুহূর্তে ডিপিএম পদ্ধতিতে কার্যক্রম গ্রহণ না করা হলে বাঁধের ক্ষতি হবে কি-না এবং বাঁধ ভাঙলে মানুষের জানমালের ক্ষতি হবে কি-না। এসব বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে আলোচনার সিদ্ধান্তের আলোকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জরুরি ঘোষণা করেন। কাজেই নির্বাহী প্রকৌশলীর নিজের মনগড়াভাবে ডিপিএম পদ্ধতিতে কাজ বাস্তবায়ন করার কোন সুযোগ নেই। টেন্ডার ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কাজ করার সুযোগ নেই। টেন্ডার ছাড়া যদি ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ কাজ করেন তাহলে ইজিপি’র টেন্ডার আইডি ৫১০৭১৭ কিভাবে আসলো? একটি প্রকল্পের অধীনে আহবানকৃত প্যাকেজের ইজিপি আইডি পাওয়া কখনো প্রকল্প অনুমোদনের আগে সম্ভব নয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নথিপত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১, ২, ৬-৮ এবং ৬-৮ (এক্সটেনশন) প্রকল্পটি ০২-০৬-২০২০ খ্রি. তারিখে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। ২৪-০৮-২০২০ খ্রি. তারিখে প্রকল্পটির জিও জারি হয়। ০৮-০৯-২০২০ খ্রি. তারিখে প্রকল্পটির এও জারি করা হয়। ০৫-১১-২০২০ খ্রি. তারিখে বর্ণিত প্যাকেজের দরপত্র আহবান করা হয়। এ প্যাকেজের কাজটি তিনটি স্থানে বাকাল, চরবালিথা ও বলদঘাটায় অবস্থিত। চরবালিথা ও বাকালের তুলনায় বলদঘাটা সীমান্তে প্রাক্কলন অনুযায়ী মাটির পরিমাণ অনেক কম। বলদঘাটা এলাকা সীমান্তবর্তী হওয়ায় কাজ বাস্তবায়নের সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক বাঁধা দেয়ার কারণে কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু বাঁধের অবস্থান সীমান্ত হতে ১৫০ গজের মধ্যে সেহেতু জোরপূর্বক কাজ বাস্তবায়ন করলে উভয় দেশের মধ্যে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। এ কারণে বলদঘাটায় ঠিকাদার কর্তৃক কয়েকবার কাজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক বাঁধার কারণে ডিজাইন অনুযায়ী ওই স্থানে বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু অবশিষ্ট দুটি স্থানে যথা বাঁকাল ও চরবালিথায় ঠিকাদার কর্তৃক কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বাকাল ও চরবালিথায় বাস্তবায়িত কাজের পরিমাণ অনুযায়ী ঠিকাদারকে রানিং বিল প্রদান করা হয়েছে।
যে কাজটির চুক্তি মূল্য ৫৪৬.৭২ লক্ষ টাকা। বিল দেয়া হয়েছে ২ কোটি তথা ২০০ লক্ষ টাকা। চরবালিথা ও বাকালের কাজের দৈর্ঘ্য ৫ কি:মি: এবং বলদঘাটাসহ সমগ্র কাজের দৈর্ঘ্য ৯.৪ কি:মি:। কাজেই দৈর্ঘ্য অনুযায়ী সমগ্র প্যাকেজে বাস্তবায়িত কাজের হার ৫৩.১ শতাংশের বেশি। কাজেই ৫৩.১ শতাংশ বাস্তবায়িত কাজের ভিত্তিতে যদি ৩৬.৬ শতাংশ বিল প্রদান করা হয় তাহলে সেখানে কিভাবে দুর্নীতি হয়। বাস্তবায়িত কাজের তুলনায় ঠিকাদারকে কম পরিমাণ বিল প্রদান করা হয়েছে। ঠিকাদারকে কোন গাছের বিল প্রদান করা হয়নি। ঘাসের বিল আংশিক প্রদান করা হয়েছে। দাপ্তরিক কাগজপত্র হতে দেখা যায় ডিপিপি বহির্ভূত কোন স্থানে বিল প্রদান করা হয়নি। সিডিউল অনুযায়ী ঠিকাদার কাজ করেছে।
এদিকে, সাতক্ষীরার ব্যবসায়ী সফিউর রহমান সফির নামে দীর্ঘদিন কোন কার্যাদেশ হয়নি। ঠিকাদারি কাজের নিয়মকানুন না জেনে মানুষকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এই ধরণের অভিযোগ করেন। ইতোপূর্বে তিনি সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে জরুরি কাজ নিয়ে দুদকে আবেদন করেন। তদন্তে তার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এই দরপত্র যখন অনুমোদন করা হয় তখন এ অভিযোগকারী তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট কাজ চেয়েছিলেন। কিন্ত আইন ও বিধি অনুযায়ী তাকে কোন কাজ দেয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য তিনি তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। সেই সময়ে তিনি হুমকি দিয়েছিলেন যে কিভাবে কাজ বাস্তবায়ন করে সে বিষয়টি তিনি দেখে নিবে।
এদিকে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, সফিউর রহমানের নিজস্ব কোন লাইসেন্স নেই। কেবলমাত্র এলটিএম’র একটি লাইসেন্স আছে। বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলীকে গতঅর্থবছরে তাকে অন্যের নামে কাজ দিতে বাধ্য করেছেন। সফি সরকারি কাজের বিরুদ্ধে কিংবা দরপত্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হাইকোর্টে রিট করে কমর্কর্তা ও ঠিকাদারদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করে। ইতোপূর্বে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর খাল পুন:খনন কাজের বিরুদ্ধে ২০২১-২০২২ সালে একটি রিট করে কাজটি অন্যের নামে নিয়ে বিশেষ কায়দায় অর্থ আদায় করেছে। সম্প্রতি সময়ে মজুমদার মানিকতলা খাল নিয়ে রিট করেছেন।
সফির ব্যবহৃত পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়িটি অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস চত্তরে রেখেছেন। এই বিষয়ে কারও টু-শব্দ করার ক্ষমতা নেই। কারন হিসেবে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে দুদকের ভয় দেখান তিনি। দুদকে অভিযোগ করবেন- এমন হুমকি দিয়ে অফিসের যে কোন ধরণের কাজ করেন লাইসেন্স বাতিল হওয়া ঠিকাদার শফি। তার কাজে বাঁধা দেওয়ার মত কেউ নেই- এমন ধারণা অন্যদের!
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস চত্ত্বরে পুলিশের স্টিকারযুক্ত গাড়ি কিভাবে থাকে ও গাড়ির মালিক কে? এমন প্রশ্নের জবাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান জানান, আমি এই ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে পারবো না, পরে জানাবো।
এদিকে, খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, সফির গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদহ গ্রামে। গ্রামে বসবাসকালীন সময়ে সীমান্ত দিয়ে সোনা ও গরু চোরাকারবারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সফির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন জনসাধারণ। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সে প্রভাব বিস্তার করে এলাকায় গরুর খাটাল, মাদক, অস্ত্র, শাড়ি কাপড় ও স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পরে। সফি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত চোরাচালানি ও হুন্ডি ব্যবসায়ী বলেও জানা গেছে। তদন্ত করলে তার অপরাধের রাম রাজত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে। এলাকায় প্রচলিত আছে বীমার টাকা পাওয়ার জন্য সে তার পূর্বের দুই স্ত্রীকে হত্যা করেছেন। এ বিষয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তার পূর্বের স্ত্রীদের সন্তানদের নিকট তথ্য সংগ্রহ করা হলে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত সফিউর রহমান সফির সাথে যোগাযোগ করা হরে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ঠিকাদার তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডে আমার যাতায়াত আছে। আমি ফকির না যে বিএনপির অফিসের জন্য টাকা নেব। আমি কখনও খারাপ কাজ করিনি।
Leave a Reply