বিএম আলাউদ্দীন আশাশুনি ব্যুরো:
আশাশুনি উপজেলার গাজীপুর কুড়িগ্রাম ইসলামিয়া সিদ্দিকীয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, এতিমদের অর্থ আত্মসাৎ ও নিয়োগ বাণিজ্য রোধ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর গণরপিটিশন করা হয়েছে। এলাকাকাসীর পক্ষ থেকে ৩৪ জনের স্বাক্ষর সম্বলিত প্রতিকারের দাবীতে আবেদনপত্র সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও মাদ্রাসার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর পাঠানো হয়েছে।
লিখিত আবেদনে জানাগেছে, ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত সুশৃংখল ও সুনামের সাথে পরিচালিত মাদ্রাসাটিতে ২০১৮ সালে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান যোগদান করেন। তার যোগদানের পর থেকে সরকারি নিয়ম নীতি তুয়াক্কা না করে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্য, এতিমদের টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অপকর্মে রাজত্ব কায়েম করা হয়। মাদ্রাসায় কোন এতিম ছাত্র না থাকলেও তিনি ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩২ জন এতিম ছেলে দেখিয়ে ১৬ জন এতিমের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি ক্যাপিটেশন গ্রান্ডের ১১ লক্ষ ২০ হাজার ৮৪৭ টাকা ব্যাংক হতে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। মাদ্রাসার নামীয় ২৭ বিঘা জমির বাৎসরিক আয় ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বছরের পর বছর কোন হিসাব নিকাশ না দিয়ে আত্মসাৎ করে আসছেন। মাদ্রাসার ইবতেদায়ী বিভাগে কোন শিক্ষার্থী না থাকা সত্ত্বেও ৪ জন শিক্ষকের নামে বেতন উত্তোলন করে বছরের পর বছর সরকারী অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন। এব্যাপারে ইতিপূর্বে ২০২২ সালে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হলেও ধুরন্ধর অধ্যক্ষ চতুরতার সাথে রক্ষা পেতে কমিটির সভাপতি আওয়ামী সন্ত্রাসী আলা উদ্দীন লাকিকে সাথে নিঢে ধৌড় ঝাঁপ করে ও আওয়ামীলীগ নেতাদের যোগসাজসে ও প্রভাব খাটিয়ে ধামাচাপার কাজ করেন। এলাকাবাসী নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের সময়ে প্রতিকার পাওয়ার আশায় পুনরায় আবেদন করেছেন।
আবেদনে আরও জানাযায়, দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান তথ্য গোপন করে তার আপন চাচাত ভাই শফিকুল ইসলামকে (৭ম শ্রেণি পাশ) বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসাবে মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করে মাদ্রাসা বোর্ডে পাঠান। এছাড়া শূন্যপদে উপাধ্যক্ষ, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তা কর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও আয়া পদে একজন করে নিয়োগ দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন ২০২২ সালে ১২ অক্টোবর। তাদের ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে অধ্যক্ষ তার মনোনীত প্রার্থীদের থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে সকল প্রার্থীদের না জানিয়ে মনোনীতদের নিয়ে ঐ বছরের ৩০ ডিসেম্বর নাম মাত্র নিয়োগ পরীক্ষা দেখিয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বাদে সকল পদে নিয়োগ দান করেন। যার মধ্যে তার নিজ পুত্র অহিদুর রহমান, আপন চাচাত ভাইয়ের স্ত্রী আছিয়া খাতুনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাছাড়া তার পুত্র অহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘর জ্বালানো মামলা (জিআর ২৪/২৪ আশাঃ) চলমান এবং মামলায় বিজ্ঞ আদালত জামিন বাতিল করে জেল হাজতে প্রেরন করলেও তথ্য গোপন করে তাকে সাসপেন্ড করা হয়নি। এছাড়া অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে জিআর ৮/২৪ (আশাঃ), জিআর ১৫০/২২ (আশাঃ), জিআর ১৪৫/২২ (আশাঃ) ও জিআর ৫৫/২২ (আশাঃ) মামলা চলমান রয়েছে। এতকিছুর পরও অধ্যক্ষ অপকর্ম করা থেকে বিরত থাকেননি। ৩০ ডিসেম্বর নিজস্ব প্রার্থী না থাকায় নিয়োগ দিতে না পেরে এখন তার দুঃসম্পর্কের আত্মীয় রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে ১৪ লক্ষ টাকা নিয়ে নিয়োগ দিতে তৎপরতা শুরু করেছেন। ইতিমধে দৈনিক যুগেরবার্তা পত্রিকায় ৩০/১০/২৪ তাং বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থ/ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে পাতানো নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করতে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসক বরাবর পৃথক আবেদন পোঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এব্যাপারে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্কীকার করে বলেন, মিথ্যা ও সাজানো অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ এনে পক্ষটি বারবার পরিবেশ নষ্ট করে যাচ্ছে।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষ্ণা রায় জানান, মাদ্রাসার নিয়োগ সংক্রান্ত কোন দিন ধার্য হয়নি। অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply