মহামান্য হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা জারির আদেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের খলিষাখালির ১৩১৮ বিঘা লাওয়ারিশ সম্পত্তি জবরদখলের চেষ্টা, সেখানে বসবাসরত ভূমিহীনদের উপর দফায় দফায় লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, গুলি ও বোমা সন্ত্রাস চালিয়ে নির্যাতন ও আট শতাধিক ঘর ভূমিহীনদের উচ্ছেদের চেষ্টা ঘটনায় শহরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সেনা কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার দুপুরে খলিষাখালি ভূমিহীন আবাসন কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এ স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
স্মারকলিপিতে খলিষাখালি ভূমিহীন আবাসন কেন্দ্রের সভাপতি সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন যে, ১৯৫৫ সালে দেবহাটার চ-ীচরণ ঘোষ ও তাদের ওয়ারেশদের ফেলে যাওয়া এক হাজার ৩১৮ বিঘা জমি জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে দেবহাটার শিমুলিয়ার সুরুজ কাজী, আইডিয়ালের নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম, সখীপুরের আব্দুল আজিজ, আহছানিয়া মিশনের কর্মকর্তা ইকবাল মাসুদসহ শতাধিক ব্যক্তি ভোগ দখল করে আসছিলো। ওই জমি সরকারি খাস জমি হিসেবে গণ্য করার জন্য দেবহাটার মুক্তিযোদ্ধা জনাব আলী ২০১০ সালে আদালতে মামলা করেন। ২০১২ সালে ওই জমি লাওয়ারিশ জমি হিসেবে আদালত রায় দেয়। জমির মালিক দাবিদাররা নিম্ন আদালতের রায় এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে গেলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২১ সালে নি¤œ আদালতের রায় বহাল রাখেন। এরপর ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সাপমারা খালের দুই পাশ থেকে উচ্ছেদ হওয়া ভূমিহীনসহ বিভিন্ন এলাকার আট শতাধিক ভূমিহীন পরিবারে সেখানে খুপড়ি খুপড়ি ঘর বেঁধে বসবাস শুরু করে। এ ঘটনায় স্বত্বহীন জমির মালিকরা ভূমিহীনদের নামে ১৯টি মিথ্যা মামলা করে। ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া শুরু করলে ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি স্থানীয় ভূমিহীন সমিতির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। আদালত উভয়পক্ষের বিরুদ্ধে স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দেন। স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ২০২১ সালের তৎকালিন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানকে ম্যানেজ করে ওই সব ভূমিদস্যুরা খলিষাখালিতে বসবাসরত ৭৮৫টি ভূমিহীন পরিবারের ঘর জ্বালিয়ে উচ্ছেদের চেষ্টা করে। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি স্বত্বহীন জমির মালিকদের সিভিল রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতি ওই জমি লাওয়ারিশ হিসেবে গণ্য করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে খাস করার জন্য পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এরপরও ওইসব স্বত্বহীন জমির মালিকরা সুপ্রিম কোর্টের রায় অমান্য করে নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আরিজুল ইসলাম, আনারুল ইসলাম (মাছ), নওয়াপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম, পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবুসহ কয়েকজনের কাছে লিজ দেওয়ার নামে দলভারি করে লুটপাট করে খাচ্ছেন। তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য তালার মাছিহারার রুহুল আমিনের ছেলে পাখরা হালিম, চিংড়িখালির শহীদুল, রবিউল (বুল্লা), কাশিবাটি ও ইন্দ্রনগরের সেকেন্দার, শওকত, মুর্শিদ, শাহীনুর, চালতেতলার নূর আলী, নূর আলীর ভাই আদর আলী, সদরের এল্লার চরের সেন্টুর ছেলে আব্বাস, আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য কৃষ্ণনগরের ইয়ার আলী, বাহার আলী, জহুর আলীসহ কমপক্ষে শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী বন্দুক, সটগান, পিস্তল ও বোমা নিয়ে গত ১৪ আগষ্ট ও ২৩ আগষ্ট খলিষাখালিতে দু’ দফা হামলা চালায়। এতে আল আমিন ও মনিরুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়। সাইফুল ইসলামসহ কমপক্ষে ২০ জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়।নোড়ার চকের বৃদ্ধ আবুল হোসেনের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ শেষে দুই হাত ভেঙে দিয়ে তাকেসহ খলিষাখালি চরপাটার আইয়ুব আলীর ছেলে রবিউল, হামিজউদ্দিনের ছেলে জব্বার, আনিসুরের ছেলে আবু সাঈদকে তুলে নিয়ে চেয়ারম্যান আরিজুলের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। হামলাকারিাদের ভয়ে নির্যাতিতদের কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে না পারলেও পুলিশকে ম্যানেজ করে হামলাকারিরা ভূমিহীনদের নামে তিনটি মামলা করেছে। বর্তামানে শতাধিক ভূমিহীন পরিবার বাড়ি ছাড়া। এরপর ও আইডিয়ালের নজরুলসহ কয়েকজন গত বুধবার আইডিয়াল কার্যালয়ে কয়েকজন সাংবাদিক ডেকে সংবাদ সস্মেলন করে ওই জমি তাদের মাইলকানাধীন দাবি করে বিএনপি নেতা নলতা ইউপি চেয়ারম্যানকে ৭০০ বিঘাসহ বাকী জমি আনারুল ইসলা (মাছ) ও মিলন বাবুর কাছে লীজ দিয়েছেন দাবি করে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করেছেন। স্মারকলিপিতে সুপ্রিম কোর্টের চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারির আদেশ দ্রুত বাস্তাবায়নসহ ভূমিহীনদের জীবনের নিরাপত্তা ও হামলাকারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাক আহম্মেদ ও পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম স্মারকলিপি গ্রহণ শেষে ঘটনার তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
Leave a Reply