সাতক্ষীরা: পরকীয়া প্রেমের অভিযোগে এক
গৃহবধু ও তার প্রেমিককে পিটিয়ে, মাথা ও ভ্রুর চুল কেটে,
গৃহবধুর সারা শরীরে গরম তেল ঢেলে মধ্যযুগীয় কায়দায়
নির্যাতন করা হয়েছে। সাতক্ষীরা শহরের রাজারবাগান ঋষিপাড়ায়
শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত ঘরের মধ্যে আটক
রেখে দফায় দফায় এ নির্যাতন চালান গৃহবধুর স্বামী ও তার
স্বজনরা। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ ওই গৃহবধুসহ
দুইজনকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি
করে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ভিকটিম
সাথীর স্বামী রাব্বি ও শ্বশুর আব্দুল বারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য
আটক করেছে।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের নওশের আলী
সরদারের ছেলে মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, তার মেয়ে রুকাইয়া
ইয়াসমিন সাথী গুনাকারকাটি দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতো।
আড়াই বছর আগে সাথীর সাথে সাতক্ষীরা শহরের রাজারাবাগান
ঋষিপাড়ার আব্দুল বারীর ছেলে নয়ন হাসান রাব্বি’র বিয়ে হয়।
রাব্বি একটি বেসরকারি কোম্পানীর সেলসম্যান হিসেবে কাজ
করে। দুই মাস আগে একটি মেয়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা ও তার
সম্পর্কে অনৈতিক সম্পর্কের প্রতিবাদ করায় রাব্বি
তার(সাজ্জাদ) মেয়ে রুকাইয়া ইয়াসমিন সাথীকে মারপিট করে
বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। কিছুদিন পর রাব্বি তাদের বাড়িতে
যেয়ে ক্ষমা চেয়ে সাথীকে নিয়ে আসতে চায়। সাথী যেতে রাজী
না হওয়ায় মাঝে মাঝে রাব্বি তাদের (শ্বশুর) বাড়িতে যেতো।
একপর্যায়ে ১০দিন আগে রাব্বি স্ত্রী সাথীকে নিয়ে বাড়িতে
আসে। পূর্বের ঘটনার জের ধরে জামাতা রাব্বি, তার বাবা আব্দুৃল
বারিসহ কয়েকজন বারান্দায় বসে থাকা তার মেয়ে সাথী ও তাদেরই
পরিচিত এক যুবককে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে নির্যাতনের পর
মাথা ন্যাড়া ও দুই চোখের ভ্রুর চুল কেটে দেয়। পরে তার সর্বঙ্গে
গরম তেল ঢেলে দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে। সকাল ৯টা থেকে
বিকেল তিনটা পর্যন্ত সাথীসহ দুজনের উপর এ নির্যাতন
চালানো হলেও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের হিং¯্রতার মুখে স্থানীয়রা
তাদের উদ্ধার করতে পারেনি। খবর পেয়ে তিনি থানায় লিখিত
অভিযোগ জানানোর পর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সদর থানার
পুলিশ যেয়ে তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে শনিবার
সন্ধ্যায় খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া
হয়েছে।
তবে শহরের রাজারাবাগান ঋষিপাড়া এলাকার আব্দুল বারি জানান,
তিনি মেডিকেল কলেজের পাশে সম্প্রতি বাড়ি করে সেখানে
সস্ত্রীক বসবাস করেন। ছেলে রাব্বি ও পুত্রবধু সাথী
রাজারবাগানের বাড়িতে থাকে। রুকাইয়া ইয়াসমিন সাথী
গুনাকারকাটি মাদ্রাসায় পড়াশুনা করার সময় আশাশুনি উপজেলার
কচুয়া গ্রামের আব্দুল হানিফের ছেলে মোহাম্মদ হাবিবুল্লার
সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। হাবিবুল্লাহ বর্তমানে
যশোরের আনছার ক্যাম্পের পাশে থেকে একটি কারখানায় কাজ করে।
একারণে মাহাম্মদ হাবিবুল্লাহ মাঝে মাঝে প্রেমিকা সাথীর
সঙ্গে দেখা করতে সাতক্ষীরায় আসতো। এ নিয়ে তার ছেলে রাব্বির
সাথে পুত্রবধু সাথীর ঝগড়া হতো। এর জের ধরে দুইমাস আগে
সাথী বাপের বাড়িতে চলে যায়। রাব্বি ১০দিন আগে তাকে
বাড়িতে আনে। শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে রাব্বি
বাড়িতে না থাকার সূযোগে হাবিবুল্লাহ সাথীর সাথে দেখা
করতে আসে। ঘরের মধ্যে তারা অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুললে
স্থানীয়রা রাব্বিকে খবর দেয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অফিসে
যাওয়ার সময় স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনার সত্যতা মেলে। পরে
দুজনকে মারপিট করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী রাজারবাগান এলাকার শহর আলী, ভদ্রকান্ত দাস, সেলিনা
খাতুনসহ কয়েকজন জানান, যেভাবে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে
রুকাইয়া ইয়াসমিন ও হাবিবুল্লার মাথার চুল কেটে, ভ্রু তুলে
ফেলে, পিটিয়ে ও শরীরে গরম তেল ঢেলে নির্যাতন করা হয়েছে তা
যে কোন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানায়। তাদের সহিংসতার
মুখে স্থানীয়রা রুকাইয়া ও হাবিবুল্লাহকে উদ্ধার করতে পারেননি।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের
চিকিৎসক ডাঃ আবীর হোসেন জানান. রুকাইয়া ইয়াসমিন
সাথীর যৌনাঙ্গসহ সারা শরীরের বিভিন্ন স্থান গরম তেল জাতীয়
পদার্থ দিয়ে ঝলসে দেওয়া হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে
খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অপর
ভিকটিম মোহাম্মদ হাবিবুল্লার মাথায় ও পায়ে ভারী জিনিস
দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শফিকুল ইসলাম
সাংবাদিকদের জানান, রুকাইয়া ইয়াসমিন ও হাবিবুল্লাকে
মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগে রাব্বি ও তার বাবা
আব্দুল বারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায়
রুকাইয়া ইয়াসমিনের বাবা সাজ্জাদ হোসেন বাদি হয়ে মামলার
প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
Leave a Reply