৩০ দিনের মধ্যে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ বাড়াতে ইসরায়েলকে চিঠি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ দেওয়া না হলে ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সামরিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ওয়াশিংটন। খবর বিবিসির।
এটি ইসরায়েলের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের সবচেয়ে কঠোর লিখিত সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসরায়েল গত এক মাসে উত্তর ও দক্ষিণ গাজার মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ মানবিক চলাচল বন্ধ বা সীমাবদ্ধ করেছে।
উত্তর গাজায় ইসরায়েলের চালানো আক্রমণের ফলে দক্ষিণ গাজায় বেসামরিক মানুষ ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যেই এমন চিঠি পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের কাছ থেকে চিঠি পাওয়ার পর ইসরায়েল তা পর্যালোচনা করছে।
এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দেশ এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখে। যুক্তরাষ্ট্র যে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে তার সমাধানও করতে চায় তারা। ইসরায়েল অবশ্য এর আগে দাবি করেছে যে, তাদের মূল লক্ষ্য হামাসকে নির্মূল করা। তারা কোথাও মানবিক সাহায্য প্রবেশ করতে বাঁধা দিচ্ছে না।
সোমবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্য ভর্তি ৩০টি লরি উত্তর গাজায় প্রবেশ করেছে। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, ইসরায়েলকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের মধ্যে ‘বিপর্যয়কর পরিস্থিতি’ সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সহায়তা সরবরাহ সীমিত করার মাধ্যমে ‘দুর্ভোগ বাড়ানো’ বন্ধ করতে হবে।
দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকায় বিশ্ব খাদ্য সংস্থার প্রধান অ্যান্তনি রেনার্ড বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, উত্তর গাজা এলাকার মানুষজন পুরোপুরি খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর বিতরণকৃত খাবার ছাড়া তাদের আর কোনো মাধ্যমে খাবার পাওয়ার উপায় নেই।
যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী। দেশটি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে গত এক বছরে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য নানা ধরনের সহযোগিতা করে আসছে।
দুদিন আগে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও ডিফেন্স সেক্রেটারি লয়েড অস্টিন। চিঠিতে ‘অবনতিশীল মানবিক পরিস্থিতি’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার আদেশের কারণে ১৭ লাখ মানুষকে একটি সংকীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয় নিতে হয়েছে যেখানে তারা ‘মারাত্মক সংক্রামণের উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছেন।
চিঠিতে ইসরায়েল সরকারকে এ মাসে ‘অবিলম্বে টেকসই পদক্ষেপ’ নিতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে ‘এখন থেকে শুরু করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে’ মানবিক সহায়তা প্রবেশের জন্য ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিতে হবে। তা করতে ব্যর্থ হলে এটি ‘মার্কিন নীতির ওপর প্রভাব’ ফেলতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে মার্কিন মানবিক সহায়তায় বাধা সৃষ্টিকারী দেশগুলোর জন্য সামরিক সহায়তা বন্ধ করা বিষয়ক বিভিন্ন মার্কিন আইনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে ইসরায়েলকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বেশ কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
এসবের মধ্যে রয়েছে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া, সহায়তা সরবরাহের জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং সামরিক প্রয়োজন ছাড়া বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ বাতিল করা।
মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের কাছে ওই চিঠি পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
মিলার বলেছেন, গোপন কূটনৈতিক মাধ্যমে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন চায়নি চিঠির বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাক। যেহেতু সংবাদমাধ্যমে চিঠির প্রসঙ্গ চলে এসেছে তাই তিনি বিষয়টি খোলাসা করেছেন।
যদি গাজায় ইসরায়েল মানবিক সহায়তা না বাড়ায়, তাহলে তার পরিণতি কি হতে পারে সে বিষয়ে কিছু জানাতে চাননি মিলার।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র আরও জানান, গাজায় এখন যে পরিমাণে মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, সেটা ‘খুবই কম’। এর আগেও এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেওয়ার প্রেক্ষিতে মার্কিন প্রশাসন বলার পর প্রবেশাধিকার বাড়ানো হয়েছিল।
এর আগে মঙ্গলবার ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রস বা আইআরসি সতর্ক করে বলেছে, উত্তর গাজায় ১০দিন আগে থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলার কারণে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, তারা হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল করতে তৃতীয়বারের মতো জাবালিয়া শহরে অভিযান চালাতে চায়। জাতিসংঘ বলছে, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গাজা ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে গেছে। কিন্তু অসুস্থতা বা অন্য অক্ষমতার কারণে অনেকের জন্য তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াও প্রায় অসম্ভব।
গাজার হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, মঙ্গলবার জাবালিয়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ইসরায়েলি বিমান ও কামান হামলায় নিহত ৪২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে তারা। এরমধ্যে একই পরিবারের ১১জন সদস্য রয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে রকেট হামলা চালায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এতে ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয় বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েল অভিযান শুরু করে। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর গাজায় এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার ৩৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
Leave a Reply