আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দী প্রায় ২০০ পরিবার 

আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালি খালে নেটপাটা দিয়ে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত করায় মাড়িয়ালা ও হাজরাখালি গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ পরিবারের রান্নাঘর ও লেট্রিন পানিতে ডুবে থাকায় এসব পরিবারের সদস্যদের দিন কাটছে চরম মানবেতর ভাবে। চারিদিকে থৈ থৈ পানিতে শিশুদের নিয়ে মায়েরা পড়েছে চরম বিপাকে। চোখের আড়াল হলেই ঘটতে পারে মর্মান্তিক কোন দুর্ঘটনা।
হাজরাখালি গ্রামের মৃত বাবর আলী সানার ছেলে রেজাউল করিম, নওশের আলী গাজী, ইদ্রিস গাজী, আব্দুল মান্নান, আবুল কাসেম, আতিয়ার গাজী, গফফার সরদার, সিদ্দিক সরদার, রহিম জোয়ার্দার, রেজাউল জোয়ার্দার, করিম জোয়ার্দার সহ ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০২০ সালে প্রলয়ংকরি আম্ফানে হাজরাখালি খেয়াঘাট সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। দীর্ঘ দিন জোয়ার ভাটার স্রোতে হাজরাখালি ও মাড়িয়ালা গ্রামের শতাধিক বসত ঘরবাড়ি ভেঙে প্রায় দুই শত বিঘা জমি খালে পরিণত হয়। বিগত ৪ বছর ধরে পরিত্যক্ত এ সব জমিতে স্থানীয় অসহায় লোকজন মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। খালে কোন নেটপাটা না থাকায় পার্শ্ববর্তী জনৈক মিজান সাহেবের কলগৈ দিয়ে সহজেই বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হয়ে যেতো।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বকচর গ্রামের আব্দুল্লাহ আল মামুন কয়েকজন জমির মালিকের কাছ থেকে ৩০ বিঘা খাল শ্রেণীর জমি ডিড নিয়ে প্রায় ২০০ বিঘা জমি আটকে রেখেছেন। ২০ দিন আগে তিনি বাসা তৈরি করে এবং খালে নেটপাটা দিয়ে পানি নিস্কাশন ব্যহত করে চলেছেন। এ নিয়ে এলাকায় চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তার লোকজন খাল দখলে এলে গ্রামবাসীর সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক মহিলার সাথে কথা বললে তারা জানান, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় লেট্রিন ও রান্নাঘর ডুবে আছে। রান্না খাওয়ার মতো বাথরুমে যেতেও সমস্যা হচ্ছে। চারিদিকে থৈ থৈ পানিতে বাচ্চাদের কোল থেকে নামিয়ে রাখতে সাহস পাচ্ছিনা। এর মধ্যে কেউ যদি খাল হয়ে যাওয়া বসত ভিটার পাশে ঘের করে তাহলে নিরাপত্তা বলতে কিছুই থাকবে না। তাই আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থে বহিরাগতরা যাতে ঘের না করতে পারে তার ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৯৫ বিঘা জমির মালিক বিগত ৪ বছর ধরে জমি থেকে একটি টাকাও না পেয়ে আমার কাছে মৎস্য ঘের করার প্রস্তাব দিলে একাধিক জমির মালিকের কাছ থেকে আমি প্রায় ৭৫ বিঘা জমি ডিড নিয়ে মৎস্য ঘের করার প্রস্তুতি নিয়েছি। বাকিদের সাথে ডিড গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। ২০ দিন আগে একটি বাসা নির্মাণ করে নেটপাটা দিয়েছি। পানি নিস্কাশনের দায়িত্ব মসজিদ কমিটির উপর ন্যাস্ত। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে সব গ্রামের মতো হাজরাখালি ও মাড়িয়ালা গ্রামের নিন্মাঞ্চল তলিয়ে গেছে। একটি মহল প্রকৃত জমির মালিকদের বিগত ৪ বছরের মতো ক্ষতিগ্রস্ত করতে এলাকার সাধারণ মানুষকে আমার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে মিথ্যা অভিযোগ করে যাচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *