কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতা নিহতের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শেহরীন আমিনকে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে তিন দফা সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকাল ১০টায় লোকপ্রশাসন বিভাগের উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর অর্থনীতি বিভাগ সমাবেশ করে। সবার শেষে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশের ব্যানারে আরেকটি সমাবেশ হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় সবাই বৃষ্টিতে ভিজে কর্মসূচি পালন করেছেন। প্রথম দিকে শিক্ষকরা ছাতা নিয়ে দাঁড়ালেও এক শিক্ষক ‘শিক্ষার্থীদের রক্তের কাছে এ বৃষ্টি কিছুই না’ বক্তব্যের পর তারা ছাতা গুটিয়ে ফেলেন।
এরপর শিক্ষক শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফার প্রতি সংহতি জানিয়ে শহীদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এসে শেষ করেন।
শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘যে হাত ছাত্র মারে, সে হাত স্বৈরাচার’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, আমার বোনের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’—প্রভৃতি স্লোগান দেন।
নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশের কর্মসূচিতে আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার এ সরকার করবে না। কারণ সরকার নিজেই খুনি। আজকে খুনি বাহিনী-খুনি সংগঠনকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। খুনি খুনির বিচার করবে না। খুনের বিচারকে ভিন্ন খাতে বইয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে গণহত্যার পর গণহত্যার সংখ্যা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এই সরকার গণহত্যা করার পর গণহত্যার শিকারদের আবার গণহত্যার জন্য দায়ী করে গ্রেপ্তার করছে। ধিক্কার জানাই এই সরকারকে।
বাংলাদেশের বুকে গুলি করা হচ্ছে মন্তব্য করে আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের ছাত্রদের অনিরাপদ রেখে আমরা শান্তিতে বসে থাকব না। আমাদের অস্তিত্বে আঘাত হানা হয়েছে। দেশের বুকে গুলি করা হয়েছে। তরুণ হচ্ছে বাংলাদেশের হৃদয় এই হৃদয়কে আঘাত করা হবে। আমরা চুপচাপ মেনে নেব। এটা যেন সরকার না ভাবে। আজকে দাবি এসেছে সরকারের পদত্যাগের, খুনের বিচার না করতে পারলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।
আসিফ নজরুল বলেন, চোখের সামনে দেখলাম পুলিশের ইউনিফর্ম পরে গুলি করা হচ্ছে, ভিডিও দেখলাম, আবু সাঈদকে কিভাবে গুলি করা হচ্ছে। যুবলীগ ছাত্রলীগের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। অথচ আমাদের ছাত্ররা নাকি মারা গেছে সন্ত্রাসীদের গুলিতে। বলা হচ্ছে, সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা গেছে। আজকে পত্রিকা খুললে দেখবেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, গত ৫৪ বছরের শাসনামলে মিথ্যার ঢিবি তৈরি করেছি। যেখানে উন্নয়ন চেতনার মিথ্যার খোলস দেওয়া থাকে। এগুলো ভেঙে পড়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলনের বিকাশ ঘটিয়েছিল, সেটা সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে।
পপুলেশনস সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, আজকে পুলিশ আমার শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরেছে। তাকে কথা বলতে দিচ্ছে না। এই বাংলাদেশ কি আমরা দেখতে চেয়েছি। আমরা মানবাধিকারের কথা বলি, উন্নয়নের কথা বলি—অথচ প্রতিনিয়ত আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। আমাদের সহকর্মীর ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। কেন আবু সাইদের বুকে স্পষ্ট গুলি করে মারা হলো। অথচ পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমার গণতন্ত্র-মানবাধিকার কোথায় গেল?
কর্মসূচিগুলোতে আরও বক্তব্য দেন লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নাজনীন ইসলাম, অধ্যাপক ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, অধ্যাপক সাদিক হাসান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, অধ্যাপক সেলিম রায়হান, অর্থনীতি বিভাগের প্রধান মাসুদা ইয়াসমীন, ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসিরউদ্দিন আহমেদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বায়েজিদ ইসলাম কিশোর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশরেফা অদিতি হক প্রমুখ।
Leave a Reply