ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’। এই সময়ের মধ্যে মুক্তি না দিলে ডিবি কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন থেকে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের পক্ষে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ‘হত্যা, অবৈধ আটক ও নির্যাতনের বিচার চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে আলটিমেটাম ঘোষণা করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘ডিবি কার্যালয়ে তথাকথিত নিরাপত্তার নামে আটকে রাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে। ডিবি কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে তাদের যদি নিঃশর্ত মুক্তি না দেওয়া হয়, তাহলে নাগরিকদের নিয়ে ডিবি কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন থেকে আরও কঠোর আন্দোলন করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতিকে, এ দেশকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনায় আমরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। আমি নিজে বিব্রতবোধ করছি। স্বাধীনতার পর ’৭১-এর মতো সহিংসতা আর অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হতে হবে– এটা ভাবনায় ছিল না। অথচ স্বাধীনতার চেতনাই হচ্ছে বৈষম্যহীন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এটা করতে না পারার দায় আমাদের নিতে হবে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা, গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মরিয়া হয়ে উঠেছে। নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে। এসব সংবিধান অনুযায়ী বেআইনি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দলিলের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এসব ঘটনার নিন্দা, ধিক্কার জানানোর উপযুক্ত ভাষা আমাদের জানা নেই। এই বিপুল প্রাণহানির দায় প্রধানত সরকারের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আজকে শোক দিবস পালন করেন। জাতির সঙ্গে রসিকতা করেন? নাশকতার নামে ১০ হাজার গ্রেপ্তার করেছেন। আড়াই লাখ আসামি। হত্যা মামলায় কতজনকে গ্রেপ্তার করেছেন? পত্রিকায়-ফুটেজে দেখেছি, ছাত্রলীগ, যুবলীগের হাতে অস্ত্র। ইউনিফর্ম পরা পুলিশ। সবাই চিহ্নিত। জ্বলন্ত প্রমাণ। এর পরও তো কাউকে দেখিনি গ্রেপ্তার করতে? নাশকতা কারা করেছে, আমরা তো এখনও প্রমাণ পাইনি। অথচ হাজার হাজার মানুষ গ্রেপ্তার করে ফেলেছেন। যেটার প্রমাণ রয়েছে, সেটির জন্য কাউকে ধরেননি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন যা ঘটেছে তা সবই সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আজকে আন্দোলন হচ্ছে হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে। এ দাবি অমূলক নয়।’
১১ দফা দাবি পেশ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা যে পদেই থাকুক না কেন এবং রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক, তাদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতে হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ, র্যা ব, আনসার, বিজিবি, ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মী যারা গুলি করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও স্বচ্ছ তদন্ত ও সঠিক বিচার হতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি হত্যাকাণ্ড এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্র ব্যবহার এবং বল প্রয়োগ বিষয়ে জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ বিশেষজ্ঞের অধীনে স্বাধীন, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান তারা। অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ারও দাবি জানান বক্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা ও মানবাধিকারকর্মী শিরীন হক।
Leave a Reply