উত্তরপ্রদেশের হাথরসের কথা মনে আছে? এক দলিত কিশোরীকে গণধর্ষণ এবং মৃত্যুর পর রাতারাতি তাঁর দেহ সৎকারের অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনা গোটা দেশে আলোড়ন ফেলেছিল। এ বার সেই হাথরসেই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটল।
উত্তরপ্রদেশের হাথরসের কথা মনে আছে? এক দলিত কিশোরীকে গণধর্ষণ এবং মৃত্যুর পর রাতারাতি তাঁর দেহ সৎকারের অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনা গোটা দেশে আলোড়ন ফেলেছিল। এ বার সেই হাথরসেই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটল।
জানা গিয়েছে, হাথরসের মুঘলাগড়ি গ্রামে একটি সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয়েছিল স্থানীয় উদ্যোগে। সেই সভায় হাজির হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ।
আলিগড় রেঞ্জের আইজি শলভ মাথুর জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে খুব ছোট জায়গায় এই সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয়েছিল। বহু মানুষের ভিড় ছিল সেখানে। মনে করা হচ্ছে তাতেই হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল পুণ্যার্থীদের মধ্যে।
তবে কী ভাবে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল এবং এই পদপিষ্টের ঘটনা শুরু হল তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
হাথরসের জেলাশাসক আশিসকুমার জানিয়েছেন, অন্ততপক্ষে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্রের দাবি, মৃতের সংখ্যা শতাধিক।
মঙ্গলবার আয়োজন করা হয়েছিল সৎসঙ্গের। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এই প্রার্থনাসভা ঘিরে উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। বহু মানুষ একসঙ্গে হাজির হয়েছিলেন। হঠাৎই হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল। যেখানে এই সভা চলছিল, সেই রাস্তা সোমবার রাত থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে খোলা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মঙ্গলবার রাস্তা খুলে দেওয়ার পরই হুড়মুড়িয়ে লোকজন বেরোনোর চেষ্টা করেন। তখনই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। মৃতদের মধ্যে মহিলার সংখ্যাই বেশি। বেশ কয়েকটি শিশুরও মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।
আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় মানুষজনই হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানেও চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ছিলেন না। ফলে সময়মতো চিকিৎসাও করানো যায়নি আহতদের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনার পর দেড় ঘণ্টা কেটে গেলেও প্রশাসনের কোনও আধিকারিক ঘটনাস্থলে আসেননি। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘটনাটির খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘটনার খবর পেয়ে মুঘলাগড়ি গ্রামে গিয়েছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী লক্ষ্মীনারায়ণ চৌধরী এবং সন্দীপ সিংহ। রাজ্য পুলিশের ডিজিও ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ঘটনাস্থল থেকে বাসে এবং টেম্পোতে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন আয়োজকদের দিকে। কী ভাবে এত লোককে এক জায়গায় জমায়েতের অনুমতি দেওয়া হল। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।
এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। শোকজ্ঞাপন করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
মৃতদের পরিবারের জন্য ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে। আয়োজকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই হাথরসই গোটা দেশে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। রাজ্য থেকে জাতীয় রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছিল।
এক দলিত তরুণীকে গণধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে। ১৪ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর ২৯ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। অভিযোগ ওঠে, পরিবারকে না জানিয়েই পুলিশ ওই তরুণীর দেহ রাতারাতি সৎকার করে।
মঙ্গলবার হাথরসের ওই ঘটনাস্থলে ছিল প্রবল গরম, সঙ্গে গুমোট পরিবেশ। যাওয়ার আসার জন্য রাস্তা সঙ্কীর্ণ। সেই সঙ্গে ছোট জায়গায় এত মানুষের জমায়েতই কি এই দুর্ঘটনার কারণ? তদন্তে উঠে আসবে প্রকৃত তথ্য।
Leave a Reply