আক্তারুজ্জামানের মুখে এখন সুদিনের হাসি


জুলাই ২৮ ২০২৪

মশাল ডেস্ক---
Spread the love

শৈশব থেকেই দারিদ্রের সাথে লড়াই করে বড় হয়েছে মোঃ আখতারুজ্জামান। সে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঝাপালী গ্রামের আমিনুর রহমানের পুত্র।  ৪ সন্তানের মধ্যে আখতারুজ্জামান  সবার ছোট। মাত্র ৫শতক জমির উপর তাদের বসবাস। ৯ সদস্যের পরিবারের খাবার, পোষাক, সন্তানের লেখাপড়া ও অন্যান্য খরচ ঠিকমত পরিচালনা করতে পারেন না দিনমজুর বাবা। এহেন প্রতিকূল পরিবেশে আখতারুজ্জামান স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা করে। স্থানীয় ঝাপালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর ১০ বছর বয়সে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। সেখান থেকে সে তার বাবা ও বড় ভাইদের সাথে দিনমজুরের কাজ করে এবং নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো।
এলাকায় গিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালে স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষিত করার জন্য এডুকো বাংলাদেশের আর্থিক সহযোগিতায় উত্তরণ শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নে একটি ব্রীজ স্কুল চালু করে। তখন আখতারুজ্জামান আবার এই স্কুলে ভর্তি হয়। তার ভাই কাশিমাড়ী নতুন বাজারে সাইকেল, মটরসাইকেল ও ইজিবাইক মেরামতের জন্য একটি ছোট দোকান খোলেন। আর সে ব্রীজ স্কুলে পড়ার পাশাপাশি ঐ দোকানে কাজ শুরু করে। ২০২২ সালে যখন তার বয়স ১৫ বছর তখন সে উত্তরণের সহায়তায় ডিজেল, পেট্রোল ইঞ্জিন মেকানিক এবং ইজিবাইক মেরামতের উপর তিন মাসের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিল। প্রশিক্ষণের পর থেকেই সে নিজে দোকান চালানোর স্বপ্ন দেখছিল কিন্তু টাকার আভাবে তা করতে পারেনি। সে তার ভাইয়ের দোকানে কাজ করে সঞ্চয় শুরু করে।
বর্তমানে আখতারুজ্জামান তার স্বপ্ন পূরনের পথে অনেক দূর এগিয়েছে। নিজের সঞ্চয় ও ভাইয়ের সাহায়তা এবং একটি ক্ষুদ্র  ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে কাশিমাড়ী পুরান বাজারে একটি দোকান ভাড়া নেয়। প্রতি মাসে এক হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। মোটরসাইকেল গ্যারেজ পরিচালনার জন্য ৩৫ হাজার টাকার মালামাল ক্রয় করা হয়। বর্তমানে মাসে তার প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। আক্তারুলের ইচ্ছা টাকা জমা করে একটি মোটরসাইকেল ওয়াশ এবং একটি মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক ওয়েল্ডিং মেশিন কিনবে।
আখতারুজ্জামান জানান, ‘উত্তরণ ও এডুকো বাংলাদেশের সহযোগিতায় আজ আমি এই ব্যবসা করার সুযোগ পেয়েছি। তাই আমি এই ব্যবসার প্রসার ঘটাবো এবং এলাকার অন্যান্য বেকার ছেলেদের কাজের সুযোগ তৈরী করবো।’
উত্তরণের এডুকো প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক নাজমা আক্তার বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় কাশিমাড়ী, বুড়িগোয়ালিনি, গাবুরা ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে এডুকো প্রকল্পের বাস্তবায়নে চারটি ব্রিজ স্কুলে ৩৫০ জন শ্রমজীবী শিশুর শিক্ষাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই শিশুরা নিয়মিত ব্রিজ স্কুলে এসে লেখাপড়া করছে। এছাড়া ২০২৩ সালে ৫০ জন প্রশিক্ষাণার্থী ইন্ডাষ্ট্রিয়াল সুইং মেশিন ও টেইলরিং, ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল ফোন সার্ভিসিং এবং ইলেকট্রিক হাউজ ওয়ারিং ও সোলার সিষ্টেম বিষয়ে তিন মাসের কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ব্যবসাসহ আত্মকর্মসংস্থানমূলক বিভিন্ন কাজে যুক্ত রয়েছে। আখতারুজ্জামান ব্রীজ স্কুলে পড়ালেখার পাশাপাশি উত্তরণের সহায়তায় ডিজেল, পেট্রোল ইঞ্জিন মেকানিক এবং ইজিবাইক মেরামতের উপর তিন মাসের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। বর্তমানে মটরসাইকেল গ্যারেজ থেকে মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে তার।
শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ এনামুল হক জানান, মূলত ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত স্কুল বহির্ভূত শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতে আনার জন্যই এ ব্যবস্থা। এটি দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া উপকূলীয় এলাকায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
কাশিমাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী আনিছুজ্জামান আনিচ বলেন, উত্তরণের এডুকো প্রকল্পের এই কার্যক্রম উপকূলীয় এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। আখতারুজ্জামানের মতো অনেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করে কিছু উপার্জন করছে।

শ্যামনগর

যশোর

আশাশুনি


জলবায়ু পরিবর্তন