শ্যামল শীল,জবি:দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন অধ্যাপক ড. শিল্পী খানম। শিক্ষার্থীদের বাংলায় জ্ঞান অর্জন করানো ছিল তার অ্যাকাডেমিক বিষয়। কিন্তু এই পথচলা রুদ্ধ হয়ে আছে দুই বছরের বেশি। যেতে পারেন না শ্রেণিকক্ষে, দেখার সুযোগ হয় না প্রিয় শিক্ষার্থীদের মুখ। তার অনুপস্থিতি শিক্ষার্থীদের মনেও ব্যথার সঞ্চার করেছে। দ্রুত তাকে নিজেদের মধ্যে ফিরে পেতে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন শিক্ষার্থীরা। তবে সেজন্য প্রয়োজন সহায়তা– আর্থিক জোগান। কারণ শিল্পী যে আক্রান্ত হয়ে আছেন মরণব্যাধি ক্যানসারে।
অধ্যাপক শিল্পী খানম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষক। তিনি বোন ম্যারো (অস্থিমজ্জা) ক্যানসারে আক্রান্ত। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুক্রবার (২৪ মে) রাতে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যের পরিহাস– এই হাসপাতালে অধ্যাপক শিল্পীর চিকিৎসা বাবদ খরচের ১২ লাখ টাকা শনিবার পর্যন্ত পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। গত দুই বছর দেশ-বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় বহন করে অনেকটা নিঃস্ব এখন তার পরিবার।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আড়াই বছর আগে ক্যানসার ধরা পড়ে অধ্যাপক শিল্পী খানমের। দেশে কিছু দিন চিকিৎসার পর তাকে নেওয়া হয় ভারতে। সেখানে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে প্রায় দেড় মাস চিকিৎসা শেষে ফিরে আসেন তিনি। তবে দিন দিন শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এই আড়াই বছরে তার পুরো দেহে ছড়িয়ে পড়েছে ক্যানসার। দীর্ঘ সময়ের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে শেষ হয়ে গেছে সঞ্চয়ে থাকা সব টাকা। অনেকের কাছ থেকে করতে হয়েছে ঋণ। একবার সহায়তার হাত বাড়িয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
অধ্যাপক শিল্পীর দুই ছেলে এবার কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছে। জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়া দুই ছেলের উচ্চশিক্ষা নিয়েও সংশয় ভর করেছে পরিবারে। তাদের বাবা কাজী শফিকুল ইসলাম অসুস্থ স্ত্রীকে সময় দেওয়ার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন নিজের চাকরি। এমন অনিশ্চিত সময়ে পুরো পরিবারের একটাই চিন্তা– কেউ কি অধ্যাপক শিল্পীকে বাঁচাতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে? আবার কবে সব দ্বিধা কেটে শিল্পী-শফিকের পরিবারে ফুটবে সুখের হাসি?
প্রিয় শিক্ষকের এই দুঃসময়ে সর্বোচ্চ দিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তার শিক্ষার্থীরা। জবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শিবলী নোমান বলেন, ‘ম্যাম অনেক বন্ধুসুলভ। তিনি সব সময়ই আমাদের আগলে রাখতেন। তার এমন অসুস্থতা আমাদের সবাইকে মর্মাহত করেছে। ম্যাম যাতে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন সেজন্য আমাদের যা করার আছে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব।’
আরেক শিক্ষার্থী মুজাহিদ বিল্লাহ বলেন, ‘ম্যামকে সদা হাস্যোজ্জ্বল দেখে এসেছি। তিনি নিজের সন্তানের মতো আদর-স্নেহ করতেন আমাদের। আমরা ম্যামকে সুস্থ দেখতে চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, ‘অধ্যাপক শিল্পীর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। যোগাযোগ করলে আমরা সমিতির নির্বাহী সভায় উত্থাপন করব।’
অধ্যাপক শিল্পীর স্বামী কাজী শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমার স্ত্রীর ক্যানসার এখন ‘লাস্ট স্টেজে’। তার চিকিৎসায় আড়াই বছরে এক কোটি টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে। আমার সব সম্বল শেষ। এখনও হাসপাতালে ১২ লাখ টাকার মতো বিল বাকি। শিক্ষক সমিতি একবার সহায়তা করেছিল। এখন সংকোচে কারও কাছে হাতও পাততে পারছি না। অনেক টাকা প্রয়োজন, কী করব জানি না। আর্থিক সহায়তা পেলে হয়তো চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারব।”
যে কেউ চাইলে আর্থিক সহায়তা পাঠাতে পারবেন এই ঠিকানায়– কাজী শফিকুল ইসলাম (অধ্যাপক ড. শিল্পী খানমের স্বামী), বেসিক ব্যাংক লিমিটেড, শান্তিনগর শাখা, অ্যাকাউন্ট নম্বর : 0914010004526
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক শিল্পী খান।
Leave a Reply