ক্রীড়া ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিয়ারের রাজসিক অভিষেক হয়েছে লিওনেল মেসির। বদলী হিসেবে মাঠে নেমে শেষ মুহূর্তের নিখুঁত ফ্রি-কিকে মেসি ইন্টার মিয়ামিকে জয় উপহার দিয়েছেন। মিয়ামি ২-১ গোলে হারিয়েছে মেক্সিকোর ক্রুস ক্রুস আজুলের বিরুদ্ধে মিয়ামির জয় নিশ্চিত হয়। এর আগ পর্যন্ত ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র ছিল। বক্সের ঠিক বাইরে থেকে বাম পায়ের ট্রেডমার্ক ফ্রি-কিকে মেসি বল জালে জড়ান। সাত বারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী মেসি ক্রুস আজুলের গোলরক্ষক আন্দ্রেস গুডিনোর পজিশন একবার পরখ করে নিয়ে কার্লিং শটটি ডানদিক দিয়ে জালে প্রবেশ করান।
মিয়ামির ডিআলভি পিএনকে স্টেডিয়াম ভর্তি ২০ হাজার স্বাগতিক সমর্থক এই গোলের পর উল্লাসে ফেটে পড়ে। কিছু সমর্থকতো উত্তেজনার বশে মাঠে ঢুকে পড়ে। নিরাপত্তা কর্মীদের সহায়তায় তাদের আবারো গ্যালারিতে ফেরত পাঠানো হয়। মিয়ামির ট্রেডমার্ক গোলাপি রংয়ের ধোঁয়ায় তখন স্টেডিয়ামের চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
এমনিতেই মেসিকে দলে পেয়ে মিয়ামির সমর্থকরা বাড়তি উত্তেজনায় মেতে ছিল। তার উপর প্রথম দিনই প্রিয় তারকার কাছ থেকে স্বপ্নের একটি গোল, যার মাধ্যমে দলের জয়, এর থেকে রাজসিক শুরু আর কি হতে পারে।
মিয়ামির পাশাপাশি পুরো মেজর লিগ সকার আশা করছে বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টাইন এই তারকার আগমনে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলের আমুল পরিবর্তণ হবে, সবকিছু পাল্টে যাবে। অভিষেকেই মেসি তাদের সেই প্রত্যাশার ছাপ কিছুটা হলেও পূরণ করে ফেলেছে। অভিষেক যার এমন হতে পারে তার কাছ থেকে পুরো মৌসুমে আরো অনেক কিছুই আশা করা যায়।
দুর্দান্ত গোলের আগে যতক্ষনই মেসি মাঠে ছিলেন ততক্ষনই নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। সুনির্দিষ্ট কিছু পাস ও দারুন ড্রিবলিংয়ে তাকে দেখে মনেই হয়নি মাত্র এক সপ্তাহ আগে ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জে পরিবারসহ ছুটি কাটিয়ে তিনি প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমেছেন। ম্যাচের ৫৪ মিনিটে বদলী হিসেবে মেসি মাঠে নেমেছিলেন। একই সময়ে মাঠে নামেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার ও মেসির সাবেক বার্সা সতীর্থ সার্জিও বাসকুয়েটস। উভয়ই মাঠে নিজেদের প্রমান করেছেন। মেসির সাথে বার্সার সময়গুলো যেন ফিরে পেয়েছিলেন বাসকুয়েটস। দুই বছর একে অপরের থেকে আলাদা থাকলেও আর্জেন্টাইন সুপারস্টারকে দারুন মধ্যমাঠ থেকে দারুন কিছু পাস দিয়েছেন বাসকুয়েটস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেসির যাদুকরী ফিনিশিংয়ে দলের জয় নিশ্চিত হয়, যা দীর্ঘদিন পর্যন্ত ইন্টার মিয়ামির সমর্থকদের মনে গেঁথে থাকবে।
ম্যাচ শেষে মেসি বলেছেন, ‘আমি জানতাম আমাকে স্কোর করতে হবে। ওটা ছিল ম্যাচের শেষ সুযোগ। আমিও গোল করতে চেয়েছি। পেনাল্টিতে যেতে চাইনি। এটা একটি নতুন টুর্নামেন্ট, এই ম্যাচে জয়টা আমাদের দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সামনে এগিয়ে যাবার জন্য এই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।’
লিগ কাপে গ্রুপ পর্বে দলগুলো ড্রয়ের জন্য এক পয়েন্ট পাবে। এরপর পেনাল্টি শুট্য আউটে যে দল জিতবে তারা অতিরিক্ত এক পয়েন্ট অর্জন করবে। কিন্তু মেসি মিয়ামিকে পূর্ণ তিন পয়েন্টের নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
ইন্টার মিয়ামির মালিক সাবেক ইংলিশ মিডফিল্ডার ডেভিড বেকহ্যামও এই জয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করে বলেছেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি শেষ মুহূর্তে আমরা যখন ফ্রি-কিক পাই তখনই আমার মনে হয়েছে এই সুযোগে গোল করে ম্যাচ শেষ করার বিকল্প নেই। বিশেষ করে আমাদের দলে যেখানে মেসি ও সার্জিওর মত খেলোয়াড়রা আছে তখন যেকোন কিছুই সম্ভব। আমাদের সমর্থকদের জন্য এটা বিশেষ একটি রাত ছিল। আজ সবাই শুধুমাত্র মেসিকে দেখতে এসেছে। মেসিও তাদের হতাশ করেনি। আজ যারা স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিল তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এটাই এদেশের সত্যিকারের মুহূর্ত, এই লিগের সত্যিকারের মুহূর্ত।’
জুনে পিএসজির সাথে চুক্তি শেষ হবার পর মেসি ইন্টার মিয়ামিতে যোগ দেবার ঘোষনা দেন। এর মাধ্যমে এমএলএস’র ইতিহাসে সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়ের আবির্ভাবের অপেক্ষায় ছিল পুরো যুক্তরাষ্ট্র। মেসির নাম ও ১০ নম্বর জার্সি পড়ে সমর্থকরা মাঠে উপস্থিত হয়েছিল। যদিও মেসিকে বদলী বেঞ্চে দেখে অনেকেই হতাশ হয়েছিল। ৪৪ মিনিটে রবার্ট টেইলরের গোলে এগিয়ে যায় ইন্টার মিয়ামি। ৬৫ মিনিটে উরিয়ের আনটুনার শক্তিশালী শটে মেক্সিকান ক্লাব ক্রুস আজুল সমতায় ফিরে। এরপরই মেসির মুহূর্ত আসে। যার মাধ্যমে নতুন সমর্থক, নতুন দেশের সামনে আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের স্বপ্নের শুরু হয়।
Leave a Reply